কামরুল হাসান রুবেল, নোয়াখালী
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের অন্যতম আলোচিত জেলা নোয়াখালী। এই জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। জেলার পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত কোম্পানীগঞ্জ সীমানা বেয়ে ছোট ফেনী নদী ও ডাকাতিয়া নদী সন্দীপ চ্যানেল হয়ে মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এ অঞ্চলের শত শত মানুষের ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ১৯৬৫-৬৭ সালে এই অঞ্চলে নদী ভাঙ্গন রোধে ছোট ফেনী নদীর উপর কাজির হাট নামক স্থানে ২১ ভোল্টের একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় যাবৎ নদী ভাঙ্গন থেকে কিছুটা স্বস্তি পেলেও ২০০৫ সালে এসে সম্পূর্ণ ভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় রেগুলেটরটি।
২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মাননীয় আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী,কোম্পানীগঞ্জের কৃতি সন্তান মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বিষয়টি গুরুত্বের সহিত তখনকার পানি সম্পদ মন্ত্রীকে অবহিত করেন ও মুছাপুর স্লুইস গেইট নির্মাণের প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নকশা ও গবেষণা করে কাজির হাট রেগুলেটরের ২০ কিঃ মিঃ পিছনে মুছাপুরে ২৩ ভোল্টের ক্লোজার নির্মাণের প্রস্তাব তৈরি করেন। যার কারণে ফেনী জেলার সোনাগাজী দাগনভূঁঞা উপজেলা ফেনী সদর, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ উপজেলা, কবিরহাট উপজেলা, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম নাঙ্গলকোর্টসহ ১১ টি উপজেলায় ব্যাপক নদীভাঙ্গন ও জোয়ারের লোনাপানিতে বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি-ক্ষতি থেকে মানুষ রক্ষা পায় ও পানি নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা করা হয়। একই সাথে জোয়ারের লবনাক্ত পানি প্রবেশ রোধ করাও সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ৩২.৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে এই রেগুলেটরের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর বিএনপি সরকার ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে রেগুলেটরের কাজের কিছুটা ধীর গতি চলে আসে। তখন কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর, চরহাজারী,চরপার্বতী ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনয়নের প্রায় দুই হাজার বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
২০০৮ সালে উক্ত রেগুলেটরের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাজেট বাড়িয়ে ২০০৯ সালে কাজ শেষ করেন। এছাড়াও রেগুলেটর নির্মাণের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গন রোধে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুছারপুর রেগুলেটর সংলগ্ন ক্লোজার ড্যাম প্রকল্প উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ খামখেয়ালি, উদাসীনতার কারণে ক্লোজার ড্যাম নির্মাণ করতে বার বার ব্যর্থ হয়।
২০১২-১৩ অর্থ বছরের উক্ত প্রকল্পের কাজ ভেস্তে যাওয়ার কারণে পূনরায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নবায়ন ও ব্যয় বৃদ্ধি করে ২০১৫ সালে ড্যাম নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। স্বপ্ন পূরণ হয় হাজার হাজার লাখো মানুষের। জীবন-যাত্রার মান উন্নত হতে শুরু হয় এই অঞ্চলের।
মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণের ফলে এই এলাকার কৃষিক্ষেত্রে ব্যপক সম্ভাবণাময় তৈরি হয়। ধান, গম, আলু, মরিচ, বাদাম, সরিষা, তরমুজ সহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন বেড়ে যায়।
তিলে তিলে গড়ে উঠে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প। মাছের হ্যাচারী, গরুর খামার, মুরগীর ফার্ম ইত্যাদি। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হয়। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রকল্প গড়ে উঠে। এখানে অর্থনৈতিক জোন ও নদী বন্দর হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল।
শুধু কৃষি উৎপাদনে সীমাবদ্ধ ছিল না এই অঞ্চলটি। বিনোদন ও বৃহত্তর নোয়াখালীর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এই অঞ্চলটি খুবই কম সময়ে ব্যপক পরিচিতি লাভ করে। প্রকৃতির ছোঁয়ায় একটু শান্তির খোঁজে সারা বছর হাজার হাজার মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতো এই মুছাপুর ক্লোজার এলাকায়। নদীর পাশে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৌন্দর্য এক অপরুপ সম্ভাবণাময় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছিলো। বিভিন্ন দিবস ছাড়াও সপ্তাহের ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হতো মুছাপুর ক্লোজারে। ছোট-বড় সকলের ভ্রমন প্রিয় স্থান হিসেবে জায়গা করে নেয় এই মুছাপুর ক্লোজার। এতে করে পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে উঠেছে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, কাবাব হাউজসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
২০২৪ সালের ২৬ই আগষ্ট লক্ষ মানুষের স্বপ্নের মুছাপুর রেগুলেটর ভারতের বন্যার পানির চাপে ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিমার্ণ ত্রুটি ও স্থানীয় বালু খোরদের দূর্নীতির কারণে লাখো মানুষের স্বপ্নের সম্ভাবনাময় ক্লোজারটি তলিয়ে যায়। শুরু হয় কোম্পানীগঞ্জ সহ অত্র অঞ্চলের মানুষের আর্তনাদ। চোখের সামনে হাজার হাজার স্বপ্ন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইতিমধ্যে ক্লোজার অঞ্চলের পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় স্থান বনবিভাগের দোতলা ভবনটি সহ আশপাশের অধিকাংশ স্থান তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে। তলিয়ে গেছে শতাধিক পরিবারের বসতঘর। প্রাণ হারিয়েছেন ১ জন।
এই সম্ভাবনাময়ী স্থানটির ভাঙ্গন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি লাখো মানুষের প্রাণের দাবি, অতিদ্রুত এই মুছাপুর স্লুইস গেইট পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হোক। তা না হলে বর্ষার আগমনের সাথে সাথে ২০২৪ সালের বন্যার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে অত্র অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্যে।
জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, যিনি ১৯৩৬ সালের ১৯…
এস.এম ফিরোজ আহমেদ, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভালুকা…
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, চলতি বছরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি…
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শনিবার রাজধানীর পলাশী মোড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বললেন,…
আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ…
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, ‘আগামী…
This website uses cookies.