হৃদয় মোল্লা, শরীয়তপুর সংবাদদাতা
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে থামছে না দালাল চক্রের দৌরাত্মা। এর নেপথ্যে মদ দিচ্ছেন খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ডা. হাবিবুর রহমান শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে এক শ্রেণির দালাল চক্র নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। শরীয়তপুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-আয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবার অন্যতম ভরসাস্থল শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল।
কিন্তু এ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য, কতিপয় ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতা, অফিসের সময় হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখা ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে আড্ডা করা, যন্ত্রপাতির সংকট ও সর্বোপরি হাসপাতালের তত্তবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। যেসব যন্ত্রপাতি আছে তা কিছুদিন পরপর অচল হয়ে পড়ে থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আর এই সুযোগে কমিশনভোগী এক শ্রেণির অসাধু চিকিৎসক রোগীদের রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষার জন্য তাদের পছন্দের বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছেন। তাছাড়া, তালিকা অনুযায়ী রোগীদের খাবার সরবরাহ না করে স্বল্প ও নিম্নমানের খাবার দেয়ারও অভিযোগ ওঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহবায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, আমরা অনেকবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এসেছি এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত যেই সেবা সেটি যেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, সেজন্য আমরা বার বার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি, দেখি ডাক্তার যারা ডিউটিতে আছে, তাদের রুম তালামারা, ডাক্তার অফিসে থাকে না ঠিকমতো। ইমরান আল নাজির আরো বলেন, আমরা দেখেছি যে, হাসপাতালের ডাক্তাররা গড়ে তুলেছে বাইরে ক্লিনিক, সেই ক্লিনিকের ডাক্তাররাই আবার হাসপাতালে চাকুরি করছেন। ডাক্তাররা যদি এক একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন তাহলে মানুষ কিভাবে তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে? হাসপাতালে নিয়মের কোন বালাই নাই। এ বিষয়গুলো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আমরা বার বার জানিয়েছি, কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের অপসারণের দাবি তুলবেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইমরান আল নাজির।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। শুধু শরীয়তপুর সদর নয়, আশপাশের উপজেলা ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, গোসাইরহাট, নড়িয়া ও জাজিরা থেকেও রোগীরা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা কেবল চিকিৎসক দেখানো ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা বা অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনে রোগীর এক্স-রেসহ নামমাত্র কিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া অন্যান্য উন্নত পরীক্ষার জন্য নেই সিটিস্ক্যান, এমআরআই, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকার পরও অধিকাংশ সময় ফিল্ম না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুই-তিন গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় প্রতিদিন রোগীদের লম্বা লাইন লেগেই থাকে। আর রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাতে ছুটছেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। জরুরি রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সাধারণ মানুষ তার সুবিধা পায় না বলে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সিফাত, মাসুম খান, আল আমিন, কিবরিয়াসহ অনেকে বলেন, যন্ত্রপাতি না থাকায় বাইরে থেকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করাতে হয়েছে।
এছাড়া শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের রমরমা বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। খোদ হাসপাতালের তত্তবধায়ক ডাঃ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যান্য কয়েকজন ডাক্তারদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিম্পল ইনজুরিকে গিরিভিয়াস আবার মরাক্তক জখম হলেও তাকে দেয়া হচ্ছে সিম্পল সার্টিফিকেট। এতে আদালতে মারামারি মামলার বিচারপ্রার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, ডাঃ হাবিবুর রহমান শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্তবধায়ক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই তার সমমনা অর্থোপেডিক্স ডাঃ মোহাম্মদ আকরাম এলাহিসহ কতিপয় ডাক্তারের যোগসাজশে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তত্তবধায়ক ডাঃ হাবিবুর রহমান অফিস চলাকালীন সময় কোন অপারেশনের রোগী এলেই কমিশনের ভিত্তিতে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া, হাসপাতালের দামী ওষুধ ক্লিনিকে পাচারের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অস্বাভাবিক মৃত্যুর লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট, মারামারি রোগীর সার্টিফিকেট বিক্রি, অ্যাম্বুলেন্স, সমাজসেবা ইউনিট, দামী ওষুধ পাচারসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তত্তবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এদিকে ডাক্তার আকরাম এলাহী অর্থোপেডিক ডাক্তার হওয়ায় যেকোন মারামারির রোগীর ক্ষেত্রে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিতে হলে তার স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। কিন্তু ডাক্তার আকরাম এলাহী প্রতিটি সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করতে প্রকাশ্যেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। এছাড়া ডাঃ আকরাম এলাহীর বিরুদ্ধে রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই প্রাইভেট ক্লিনিকে চলে যান তিনি।
এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি এক রোগীকে চেম্বারে বসেই পিটিয়েছেন ডাঃ আকরাম এলাহী যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকে ভাইরালসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ভুল চিকিৎসায় হাত-পা কেটে ফেলায় রোগী পঙ্গু হওয়া, এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।
এক্সিডেন্ট অথবা হাত পা ভাঙ্গা রোগীদেরকে চুক্তি করে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বাধ্য করার মতো অভিযোগ রয়েছে ডাক্তার আকরাম এলাহাীর বিরুদ্ধে। কিন্তু এতোকিছুর পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ বা অন্যত্র বদলী করা হয়নি। এসব বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি ডাঃ আকরাম এলাহী। এসব বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিবুর রহমান সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আপনারা এসে দেখে যান।
সপ্তাহে ৩ দিন সকালে আধাঘন্টা করে ওষুধ কোম্পানির লোকদের ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাতের সময় দিয়েছি। অন্যজনের কথা বিশ্বাস করেন কেন? সব সময় অফিসে থাকা যায় না। বাইরে আমাদের অনেক কাজ আছে। টাকার বিনিময়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পরিবর্তন করার কোন প্রমাণ নেই।
স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাঁঠালীতে অবস্থিত ইকরাম সোয়েটার্স লিঃ এর অভ্যন্তরে গত (১৫ এপ্রিল…
মুহাম্মাদ জাকির হুসাইন ফরিদী, সদরপুর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সদরপুর উপজেলা শাখার আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক…
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আ.ন.ম উবাইদুল্লাহর বিরুদ্ধে জমি মালিকদের…
কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবারর (১৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় কুড়িগ্রাম জেলা…
বাকস্বাধীনতার পক্ষে সরব হয়েছেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। ‘সরকারের সমালোচনা করা রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার’ হিসেবে তিনি…
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার পর এবার জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতি নিষিদ্ধ…
This website uses cookies.