আইসিইউতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল, দেখার কেউ নেই

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর

হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতাল নিজেই যদি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তাকে সুস্থ করবে কে! বলছিলাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর সদর হাসপাতালের কথা। নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে উঠেছে চিকিৎসার সম্পূর্ণ অযোগ্য। এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগী ও স্বজনরা।

পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব, দালালদের দ্বৈরত্ব, অপরিষ্কার পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার এই সব তো আছেই সাথে যুক্ত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক,নার্স এবং হাসপাতালের পরিছন্নতাকর্মী দের দুর্ব্যবহার। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় অধিকাংশ সময় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের চারপাশে এবং ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধে অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক সময় সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শাহিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শেরপুর সদর হাসপাতালে আসি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কিন্তু যে ধরনের সেবা হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা তার বিন্দু পরিমাণ সেবা ও পাই নাই। কোন ধরনের ঔষধ দেওয়া হয় না হাসপাতাল থেকে সব বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। চারদিক ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা, এখানে একটা রাত কাটানো তো দূরের কথা ১০ মিনিট টিকে থাকা যায় না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে

চিকিৎসা নিতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা এই ওয়ার্ডের। বসে থাকার মত পরিবেশ টাও নেই এখানে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনেই হল ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান যা কখনো পরিস্কার করা হয় না। ফলে দুর্গন্ধে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। আর বাথরুম গুলোও কখন পরিস্কার করা হয় না ফলে ব্যবহারের অনুপোযোগী তো বটেই উল্টো ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারও নিম্নমানের। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি রোগীরা আরও দুর্ভোগে পড়ছেন। নষ্ট লিফটের কারণে মাঝপথে আটকা পড়ার মত ঘটনা ঘটছে প্রায়ই, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক।

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে রয়েছে আই সি ইউ ইউনিট যা নতুন ভবনের ৯ম তলায় অবস্থিত। ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই আই সি ইউ ইউনিট টি ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর । দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এর কার্যক্রম শুরু হয় নি। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালামাল ও যন্ত্রাংশ।

কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে ডাক্তার, নার্স সংকটের কারণে এটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। জেলা সদর হাসপাতালের এই সব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে কথা বলার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে বিগত সময়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে হলেও তিনি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সেব নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অবিলম্বে হাসপাতালের পরিবেশ উন্নয়ন, সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ এবং ভোগান্তি দূরীকরণের দাবি জানিয়েছেন।

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

ত্রিশালে অসহায় পরিবারের কাকরুল গাছের বাগান কেটে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…

2 hours ago

চিলমারীর অসহায় রফিকুল পরিবারের পাশে চার সাংবাদিক

নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…

2 hours ago

ময়মনসিংহে স্টেশন রোডে অবৈধ হকার উচ্ছেদ

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দেড়শ দোকান উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ নগরীর স্টেশন রোডে…

2 hours ago

রাজবাড়ীতে অচল খাল সচল ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কৃষক সমিতির বিক্ষোভ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…

4 hours ago

ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…

4 hours ago

রিজন হত্যার প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন

পূর্বধলা সংবাদদাতা নেত্রকোনা সদরে দায়িত্বরত বিকাশ কর্মী রিজন তালুকদারের হত্যার প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।…

4 hours ago

This website uses cookies.