সংবাদ শিরোনাম ::
কোন কোন মাসে দুই/তিনশো, পরের মাসেই হঠাৎ করে বেড়ে এক/দুই হাজার
লোহাগাড়ায় রিডিং চেক না করে মনগড়া বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ সাধারণ গ্রাহক
দেলোয়ার হোসেন রশিদী চট্টগ্রাম দক্ষিণ
- আপডেট সময় : ১১:৫২:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬৮ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় গেল আগস্ট-সেপ্টম্বর মাসের বিদ্যুতের বিল এসেছে দ্বিগুন থেকে পাঁচ-ছয় গুনেরও বেশি। এসব বিলের কাগজ হাতে পেয়ে লোহাগাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাহকেরা অনেকটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাড়তি ভূতুড়ে বিলের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন লোহাগাড়ার সাধারণ গ্রাহক। গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ বিল সাথে ক্ষোভ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসেও যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছে এলাকার সাধারণ গ্রাহক।
জানা যায়, বিদ্যুৎ বিলে ডিজিটাল কারচুপির কারণে লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছেন। কোনো কারণ ছাড়াই ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ না থাকলেও ডিজিটাল কারচুপিতে ঠিকই বাড়ছে বিদ্যুৎ বিল। কোনো মাসে দুইশত টাকা, পরের মাসে তিন শত টাকা এবং এর পরের মাসে হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১থেকে ২ হাজার টাকা। এভাবে বাড়তি ভূতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক।
এদিকে, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে অতিরিক্ত গরমের কারনে এমাসে বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল এসেছে লাগামহীন। এতে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরা।
লোহাগাড়া হাজির পাড়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাইমুন বলেন, আমার বাড়িতে মিটার আছে একটা। আমার বাড়িতে বিল আসত ৬০০ টাকা করে। বিদ্যুৎ বিল বেড়ে চলতি মাসে ১৬০০ টাকা, এর আগের মাসে ১১০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এটা ভুতুড়ে বিল ছাড়া কিছুইনা।
সুখছড়ি শাইর পাড়ার বাসিন্দা আবদুল হাই চুট্টু বলেন, এরা ইচ্ছাকৃতভাবে মিটার রিডিং না দেখে বিল করে।
মরিয়ম ভবনে ভাড়াটিয়া মাওলানা সেলিম উদ্দিন ক্ষোভ নিয়ে বলেন, প্রতি মাসে আমার বাসায় ২হাজার টাকা করে বিদ্যুৎ বিল আসত। এ মাসে বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি পেয়ে ৮হাজার ৯৮৬ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এটা আমাদেরকে হয়রানী করা হচ্ছে।
সগির টাওয়ারের বাসিন্দা সুমাইয়া ফেরদৌসি বকুল বলেন, আমাদের বাসায় ৭০০ টাকার উপরে বিদ্যুৎ বিল আসেনা, এবারে ১৪২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
দুবাই প্রবাসী পুটিবিলার বাসিন্দা রিয়াদ বলেন, বিদ্যুৎ অফিস থেকে যারা রিডিং করতে আসে তারা মুখস্থ করে রিড়িং করে নিয়ে যায়। তাদের পকেটে চা নাস্তা খরচের ব্যবস্থা করলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
উত্তর আমিরাবাদ ঘোনা পাড়ার বাসিন্দা মোঃ ইসমাঈল বলেন, আমার বাড়িতে ৬০০/৭০০ বিল আসতো। এইবারে ১১৭৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এটা ভুতুড়ে বিল করা হয়েছে।
বড়হাতিয়ার বাসিন্দা শিক্ষক জহুরুল হক বলেন, রিডিং চেক না করে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল করে। এলাকার অনেকেই রিডিং করতে আসে তাদেরকে রিডিং চেক করতে দেখেনা, মনে হয় আন্দাজে বিদ্যুৎ বিল করে।
মল্লিক ছোবাহান হাজির পাড়ার বাসিন্দা মনজুর আলম বলেন, যারা মিটার রিডিং করতে আসে তারা ইচ্ছমত বিদ্যুৎ ইউনিট অংক বসিয়ে দেয়।
বড়হাতিয়া বায়তুশ শরফ পাড়ার বাসিন্দা মোঃ কালাম বলেন, আমার বাড়িতে গত মাসে ২৬ ইউনিট বেশি লিখা হয়েছিল। আমি লোহাগাড়া জোনাল অফিসে কর্তৃপক্ষের কাছে মিটারের রিডিং ভিডিও করে নিয়ে গেছি। পরের মাসে ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও করে দেয়নি। এটি ভূতুড়ে বিল ছাড়া অন্য কিছুই হতে পারেনা।
বিদ্যুৎ বিল বেশি আসলেও সামর্থ যাদের আছে তারা দিতে পারলেও বিদ্যুৎ বিলের কয়েক গুন টাকা দিনমুজুরের পক্ষে এধরনের বিল দেয়া কষ্টকর বলে জানা গেছে।
লোহাগাড়া প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মিনহাজ বলেন, লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষের বাড়িতে অতিরিক্ত ভাবে বিদ্যুৎ বিল আসছে, যা খুবই দুঃখজনক। আমার বাসায় গতবারের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। মিটার রিডিং যারা করে তাদের অবহেলাকে দায়ি বলে মনে করি।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোহাগাড়া জোনাল অফিসের কয়েকজন মিডার রিডারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রচন্ড গরমে বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করেছে গ্রাহকরা যার কারনে এমাসে সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে। বাড়ী বাড়ী গিয়ে মিটার রিডিং না করার অভিযোগ অস্বীকার করে তারা বলেন, আমরা প্রতি মাসেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করে থাকি।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এধরনের বেশ কিছু অভিযোগ আমার কাছে আসে। বিদ্যুৎ এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরম পড়লে বিদ্যুৎ বিল একটু বেশি আসে। যারা মিটার রিডিং করতে গ্রামে গ্রামে বাড়িতে, বাসায় যায় তাদের অবহেলা দেখলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরও বলেন, মিটারে বিদ্যুৎ বিলে রিডিং এর সাথে মিল না থাকলে সেটি অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




















