ঢাকা ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাকাইয়া রূপে আসছে ‘দেবদাস’, বুবলী–আজাদ জুটি নিয়ে জাহিদ হোসেনের নতুন আয়োজন কুমিল্লায় বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন মোরেলগঞ্জে বিষখালী নদীর সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ শাল্লায় ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালিত দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই আমাদের মূল লক্ষ্য- সেলিমুজ্জামান সেলিম কেন্দুয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত জিয়া ছিলেন সকল রাজনৈতিক সংগঠনের অভিন্ন চরিত্র: ইবি উপাচার্য মোরেলগঞ্জে ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপির বর্ণাঢ্য র‌্যালি বগুড়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপ প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেঃ কর্নেল লুৎফর

বিলুপ্তির পথে গরু-মহিষের গাড়ি

দিলোয়ার হোসাইন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ)
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

একসময় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে গরু-মহিষের গাড়ি ছিল গ্রামের মানুষের জীবন-যাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই ঐতিহ্যবাহী বাহন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সময়ের প্রবল স্রোতে।

নতুন প্রযুক্তির বিকাশ, মোটরযান ও সড়কপথের আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জীবনের পুরোনো চিত্র যেন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। একসময় এই গরু-মহিষের গাড়িতেই নবদম্পতি যেতেন বিয়ের বাড়ি, ব্যবসায়ী যেতেন হাটে, কৃষক নিয়ে যেতেন ফসল, আবার শিশুদের আনন্দযাত্রাও হতো এই গাড়িতে চড়ে। কিন্তু আজ সে গাড়ি কেবল স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে।

বানিয়াচংয়ের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, মাত্র দুই যুগ আগেও গ্রামীণ রাস্তায় দেখা মিলত গরুর গাড়ির চাকা গড়ানোর দৃশ্য। সকালের সূর্য ওঠার পরপরই শোনা যেত ঘণ্টাধ্বনি ও গাড়োয়ানের গানের সুর— ‘চলো রে মহিষের গাড়ি চলো রে, হাটে যাবো দল বেঁধে’। আজ সেই সুরও থেমে গেছে।

বর্তমানে গরু-মহিষের গাড়ি দেখা যায় শুধু বিশেষ অনুষ্ঠান বা ঐতিহ্য প্রদর্শনের দিনে। ১৫০ থেকে ৩০০ বছর আগেও এটি ছিল অন্যতম পরিবহন মাধ্যম। ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে এই বাহনের প্রচলন হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। পরে গ্রাম-বাংলায় তা ছড়িয়ে পড়ে পরিবহন ও পণ্যবাহী যান হিসেবে।

এলাকার প্রবীণ কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, “একসময় আমাদের গরুর গাড়ি ছাড়া চলত না। ধান, খড়, কাঠ, বা ফসল—সবকিছুই বহন হতো এই গাড়িতে। এখন সেসব কাজ করছে ভ্যান, ট্রাক, মোটরসাইকেল আর রিকশা।”

প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ জীবনে এসেছে দ্রুত পরিবর্তন। মানুষ সময় বাঁচাতে ঝুঁকছে যান্ত্রিক বাহনের দিকে। কিন্তু এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে একটি যুগের প্রতীক—গরু-মহিষের গাড়ি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরু-মহিষের গাড়ি শুধু বাহন নয়, এটি ছিল বাংলার কৃষিনির্ভর সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এতে ছিল পরিবেশবান্ধব চলাচলের এক দৃষ্টান্ত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ তা বিলুপ্তির পথে।

বানিয়াচং প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসাইন বলেন, “গরু-মহিষের গাড়ি শুধু একটি বাহন নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এই বাহন গ্রামীণ জীবনের এক সময়ের অর্থনীতি, সামাজিক সম্পর্ক ও সংস্কৃতির অংশ ছিল। এখনই যদি আমরা এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ইতিহাস কেবল বইয়ের পাতায়ই জানবে।”

তবুও অনেকেই বিশ্বাস করেন, ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলে অন্তত প্রদর্শনীর অংশ হিসেবেও এই গাড়িকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ, এটি কেবল বাহন নয়—এটি গ্রামীণ জীবনের এক উজ্জ্বল ইতিহাস, যা আমাদের প্রজন্মকে জানায় অতীতের গৌরবের গল্প।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিলুপ্তির পথে গরু-মহিষের গাড়ি

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

একসময় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে গরু-মহিষের গাড়ি ছিল গ্রামের মানুষের জীবন-যাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই ঐতিহ্যবাহী বাহন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সময়ের প্রবল স্রোতে।

নতুন প্রযুক্তির বিকাশ, মোটরযান ও সড়কপথের আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জীবনের পুরোনো চিত্র যেন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। একসময় এই গরু-মহিষের গাড়িতেই নবদম্পতি যেতেন বিয়ের বাড়ি, ব্যবসায়ী যেতেন হাটে, কৃষক নিয়ে যেতেন ফসল, আবার শিশুদের আনন্দযাত্রাও হতো এই গাড়িতে চড়ে। কিন্তু আজ সে গাড়ি কেবল স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে।

বানিয়াচংয়ের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, মাত্র দুই যুগ আগেও গ্রামীণ রাস্তায় দেখা মিলত গরুর গাড়ির চাকা গড়ানোর দৃশ্য। সকালের সূর্য ওঠার পরপরই শোনা যেত ঘণ্টাধ্বনি ও গাড়োয়ানের গানের সুর— ‘চলো রে মহিষের গাড়ি চলো রে, হাটে যাবো দল বেঁধে’। আজ সেই সুরও থেমে গেছে।

বর্তমানে গরু-মহিষের গাড়ি দেখা যায় শুধু বিশেষ অনুষ্ঠান বা ঐতিহ্য প্রদর্শনের দিনে। ১৫০ থেকে ৩০০ বছর আগেও এটি ছিল অন্যতম পরিবহন মাধ্যম। ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে এই বাহনের প্রচলন হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। পরে গ্রাম-বাংলায় তা ছড়িয়ে পড়ে পরিবহন ও পণ্যবাহী যান হিসেবে।

এলাকার প্রবীণ কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, “একসময় আমাদের গরুর গাড়ি ছাড়া চলত না। ধান, খড়, কাঠ, বা ফসল—সবকিছুই বহন হতো এই গাড়িতে। এখন সেসব কাজ করছে ভ্যান, ট্রাক, মোটরসাইকেল আর রিকশা।”

প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ জীবনে এসেছে দ্রুত পরিবর্তন। মানুষ সময় বাঁচাতে ঝুঁকছে যান্ত্রিক বাহনের দিকে। কিন্তু এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে একটি যুগের প্রতীক—গরু-মহিষের গাড়ি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরু-মহিষের গাড়ি শুধু বাহন নয়, এটি ছিল বাংলার কৃষিনির্ভর সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এতে ছিল পরিবেশবান্ধব চলাচলের এক দৃষ্টান্ত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ তা বিলুপ্তির পথে।

বানিয়াচং প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসাইন বলেন, “গরু-মহিষের গাড়ি শুধু একটি বাহন নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এই বাহন গ্রামীণ জীবনের এক সময়ের অর্থনীতি, সামাজিক সম্পর্ক ও সংস্কৃতির অংশ ছিল। এখনই যদি আমরা এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ইতিহাস কেবল বইয়ের পাতায়ই জানবে।”

তবুও অনেকেই বিশ্বাস করেন, ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলে অন্তত প্রদর্শনীর অংশ হিসেবেও এই গাড়িকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ, এটি কেবল বাহন নয়—এটি গ্রামীণ জীবনের এক উজ্জ্বল ইতিহাস, যা আমাদের প্রজন্মকে জানায় অতীতের গৌরবের গল্প।