ফুলবাড়িয়ায় সুদি কারবারি আনিছের ফাঁদে পড়ে পথে বসেছে একাধিক পরিবার
- আপডেট সময় : ১২:০১:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৯ বার পড়া হয়েছে
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম এলাকার প্রসিদ্ধ সুদ কারবারি তথা দাদন ব্যবসায়ী সুদি আনিছের ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক পরিবার। তার কালো থাবার টার্গেট সমাজের নিম্ন আয়ের অসহায় ও বিপদগ্রস্তরা। স্বা¶র করা খালি চেকের পাতা নিয়ে প্রতি লাখে ৩০ পার্সেন্ট হারে সুদে ঋণ দিয়ে থাকেন এ কারবারি। সময় মতো সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, সুদের টাকা গ্রহণ করা ব্যক্তির উপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতনের খড়গ।
অভিযোগ রয়েছে, সুদের টাকা পরিশোধের পরও আনিছের হাতে রক্ষিত স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত না পেয়ে অনেকেই হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দাদন ব্যবসার মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া আনিছের বেপরোয়া ও বেআইনি কর্মকান্ড,অব্যাহত হুমকিসহ নানা ষড়যন্ত্রে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। সম্প্রতি এ সুদ ব্যবসায়ীর ফাঁদে নিঃস্ব হওয়া কেউ কেউ তার অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। সুদ কারবারি আনিছের প্রতারণা নিয়ে ভুক্তভোগী রাশেদুল ইসলাম জেলা প্রশসক ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে,২০১০ সালে রাশেদুল ইসলামের পিতা হারুন অর রশিদ রাজনৈতিক মামলায় কারাবাসে থাকাকালীন প্রভাবশালী সুদি কারবারী আনিছুর রহমান সুদের টাকা পায় বলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার পরিবারের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে তাদের মুদির দোকানে হামলা চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় সুদের পাওনা টাকা আদায় করে নেন। রাশেদুলের দাবি ২০১১ সালে স্বপরিবারে তিনি সাভারে চলে যান। কিন্তু ২০১৬ সালে পূবালী ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখার একটি সঞ্চয়ী হিসাবের চেক বই হারিয়ে যাওয়ায় তার পিতা সাভার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার জিডি নং-৬৮০, তারিখ ১৩-১২-২০১৬। সেই হারানো চেক ডিজঅনার করে ময়মনসিংহ অর্থ ঋণ আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ব্যবহৃত চেকের স্বা¶রটি রাশেদুলের নয় বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় আঃ হান্নান, রফিকুলসহ অন্যান্যরা জানান, আনিছের সুদের গ্যাড়াকলে পড়ে গ্রামের অনেক অসহায় মানুষ গ্রামছাড়া হয়েছেন। তার কথামতো সুদের টাকা পরিশোধ না করলে চেকের ফাঁদে ফেলে ১০ গুন টাকা আদায় করে নেন। নিজের কাছে খালি চেকের পাতা না থাকলে অন্য আরেকজনের কাছ থেকে কিনে নিয়ে আসেন তিনি। তাদের ভাষ্যে আছিম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আজিজ, মানিক মেম্বার , আলম মেকারসহ আরো অনেকেই মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার চাপে অনেকেই স্ত্রী সন্তান রেখে এলাকা ছাড়া।
ভুক্তভোগী আঃ আজিজ মেম্বার জানান, আমি নিরুপায় হয়ে আনিছের কাছে ৫ ল¶ টাকা চাইলে সে ৩টি খালি চেকের পাতা ও স্বা¶র করা স্ট্যাম্প নেওয়ার পর আমাকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে বলে বাকি টাকা দুই দিন পরে দিবে, কিন্তু পরে টাকা না দিয়ে উল্টো সে আমার বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকার অর্থ ঋণের মামলা করেছে। আমার মতো অনেকেই তার জুলুমের শিকার হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ি বলেন, আমি নিজেও তার কাছ থেকে চেকের বিনিময়ে টাকা নিয়েছি, যে টাকা নিয়েছিলাম তার দ্বিগুণ সুদ দিয়েছি, তার কথামতো টাকা দিতে না পারায় আমাকেও মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, যতই দিন যাচ্ছে সুদ কারবারী আনিছ আরও ততোবেশি হিংস্র ও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। কোনো কারণে এক বা দুই মাস সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ গুণতে হয় ভুক্তভোগীদের। আনিসের চেক ডিজঅনার মামলায় ঋণগ্রহীতারা হয়রানির শিকার ও জায়গা-জমি হারিয়ে সম্বলহীন হয়ে অর্ধশত মানুষ বাড়ি ছেড়ে অনেকেই ফেরারি জীবনযাপন করছেন।
এ সুদ কারবারি সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরা সময়ের দাবি। একই সাথে তার কাছে র¶িত থাকা খালি চেকের পাতাগুলো উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্ত¶েপ কামনা করেছেন তারা।
এ বিষয়ে সুদি কারবারি আনিছের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদকের পরিচয় জনামাত্রই পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, ব্ল্যাংক চেক নিয়ে টাকা দেওয়া আইন বিরোধী। আমরা এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতেছি কেউ যেনো ব্ল্যাংক চেক দিয়ে টাকা না নেয় ।




















