শিগগির চালু হচ্ছে মিরপুর-১০ স্টেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন দ্রুত চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন এই স্টেশন থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে স্টেশনটির প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন স্টেশনটিতে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, তা ট্রেন থামিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যন্ত্র থেকে টিকিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হচ্ছে কি না, ভাড়া পরিশোধ করে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেটগুলো খুলছে কি না, স্টেশনে নির্ধারিত স্থানে ট্রেনের দরজা খুলছে কি না, এসব বিষয় পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহেই এই স্টেশন থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে।

গত ১৮ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়।

২৭ জুলাই তখনকার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর–১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না। এ দুটি স্টেশন মেরামতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে।

তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ডিএমটিসিএলের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডিএমটিসিএল জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন সংস্কারে টাকার হিসাব ছিল কাল্পনিক। এ দুটি স্টেশন সংস্কারে এত বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়বে না।

পরে গত ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তখন তার পরিবর্তে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৫ (উত্তর রুট) এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফকে ডিএমটিসিএলের এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নিয়োগের মাত্র ১০ দিনের মাথায় (গত ২০ সেপ্টেম্বর) মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন চালু হয়। এ স্টেশনটি সংস্কারে মাত্র ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনও চালু হতে যাচ্ছে। আর মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন মেরামতে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে ব্যয় খুবই অল্প বলে জানা গেছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, হামলায় মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকিট বিক্রির যন্ত্র, কম্পিউটার, ভাড়া পরিশোধ করে প্রবেশ ও বের হওয়ার স্বয়ংক্রিয় গেট, স্টেশনের ইলেকট্রনিক পর্দা ও কিছু কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিছু সরঞ্জাম ও উপকরণ স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হয়েছে। আবার যেসব স্টেশনে যাত্রী চাপ কম (উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন) সেখান থেকে একাধিক টিকিট যন্ত্র ও গেট স্থানান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর ভেতর প্রদর্শন কেন্দ্রে আটটি গেট ছিল, সেগুলো এনে লাগানো হয়েছে। পরে আমদানি করে ওই সব জায়গায় গেট ও টিকিট কাটার যন্ত্রগুলো বসানো হবে। তবে আমদানি করলেও আগের সরকার যে ব্যয় প্রাক্কলন করেছিল, তত টাকা লাগবে না।

ডিএমটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরেই মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন চালু করতে কাজ করছে ডিএমটিসিএলের কারিগরি দল। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) স্টেশন ট্রেন থামানো, টিকিট মেশিন পরীক্ষা, লিফটসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা হয়েছে। কোথাও তেমন বড় ধরনের কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। এখন বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খানকে অবহিত করা হবে। এরপরই মিরপুর-১০ স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

কাজীপাড়া থেকে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১০ স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি, লিফটগুলো বন্ধ রয়েছে। স্টেশনের ভেতরেও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। নিরাপত্তার কারণে ভেতরে ঢুকতে মানা।

মিরপুর-১০ স্টেশন সংলগ্ন ৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা মুজিব রহমান। তিনি কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। ১০ নম্বর স্টেশন বন্ধ থাকায় তিনি বাসা থেকে রিকশায় করে মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনে গিয়ে মেট্রোতে যাতায়াত করছেন।

মুজিব রহমান বলেন, মিরপুর অঞ্চলে ১০ নম্বর স্টেশনটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এ স্টেশন থেকে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। সবাই এখন মিরপুর-১১ বা কাজিপাড়া গিয়ে মেট্রোতে ওঠা-নামা করছেন। এখন মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনটি চালু হলে সবাই উপকৃত হবেন।

জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা ৮-১০ দিন ধরে মিরপুর-১০ স্টেশনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। ক্রমান্বয়ে সব ত্রুটি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে কবে নাগাদ স্টেশনটি চালু হবে, তা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

কুড়িগ্রাম জেলা উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন পরিষদ কমিটি গঠিত

কুড়িগ্রাম জেলা উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন পরিষদ কমিটি গঠিত হয়েছে। ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে অধ্যাপক শফিকুল…

55 seconds ago

এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নোটিশ

অভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত পুলিশ অফিসারদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করতে লিগ্যাল নোটিশ…

2 hours ago

বন্যায় ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত, বিপাকে কৃষক

পাবনা সংবাদদাতা উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পাবনায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে তিন…

4 hours ago

দূর্গাপুরে বন্যার পানিতে ডুবলো কৃষকের স্বপ্নের পান বরজ

জাকির হোসেন (বাবলু), দুর্গাপুর রাজশাহীর দুর্গাপুরে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে কৃষকের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে রোপণ…

4 hours ago

সীমান্তে বিজিবির অভিযানে মিয়ানমারের নাগরিকসহ আটক ২

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকালে এক মিয়ানমার নাগরিক (আরাকান আর্মির…

5 hours ago

নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ২৭৬৩৭ জন নিয়োগ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর…

5 hours ago

This website uses cookies.