মাঠ থেকে আমন ধান গোলায় তোলার আনন্দে বিভোর কৃষকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা

চলছে হেমন্তকাল। কাকভোরে সূর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছেন কৃষক-শ্রমিকরা। এরপর কোনো রকমে হাত-মুখ ধুয়ে শুধুমাত্র একগ্লাস টিউবয়েলের ঠাণ্ডা পানি পান করে যার যার মতো কাচি হতে বাড়ি থেকে ছুটে যাচ্ছেন পাকা আমন ধানের খেতে। সেখানে গিয়ে দলবেঁধে হাসি-আনন্দে কাটছেন স্বপ্নের পাকা আমন ধান।

কেউ কেউ কাটা ধান আঁটি বেঁধে মাথায় করে নিয়ে বাড়ির উঠানে ফেলছেন। আর বাড়ির নারীরা ও ছোট ছেলে-মেয়েরা সেই ধান মাড়াইয়ের মাধ্যমে গোলায় তুলছেন।

সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে এভাবেই মাঠ থেকে আমন ধান ঘরে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। বাড়ি থাকা খালি গোলায় ধান তোলার আনন্দে মেতে উঠেছে কৃষক পরিবারগুলো।

অন্যদিকে নতুন ধানের ঘ্রাণে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকার বাতাস। এবার সালথায় ১২ হাজার ৩০০ ও নগরকান্দায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে বলে কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। কৃষকরা জানান, একসময় মরা কার্তিকে এসে কৃষকের ধানের গোলা শূন্য হয়ে যেত।
তখন সবাই অগ্রহায়ণের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তবে বদলে গেছে সেই হিসাব-নিকাশ। কার্তিক আর আগের মতো নেই। এ মাসেও বিপুল পরিমাণে ধান পাওয়া যায়। শস্যের বহুমুখীকরণের ফলে এখন সারা বাছরই ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা।

ফলান বিভিন্ন ফসল। আয়-রোজগারও বেড়েছে তাদের। কার্তিক মাসে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে আগাম আমন ধানের শীষ। এরপর থেকে শুরু হয়ে যায় পাকা ধান কাটা। নবান্ন উৎসব হলো বাঙালি কৃষকদের প্রাণের উৎসব। সেই উৎসবই এখন চলছে সালথা-নগরকান্দার প্রতিটি ঘরে ঘরে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকালে সালথার কৃষক জাহিদ মোল্যা, সাইফুল ইসলাম ও আনন্দ মালো বলেন, গত ১৫ দিন ধরে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব চলছে আমাদের এলাকায়।

তারা আরো জানান, ইতিমধ্যে বেশিরভাগ কৃষক ধান কেটে মাড়াই শেষে গোলা ভরে ফেলেছেন। এবার অসময়ে টানা বৃষ্টির কারণে আমন ধান নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছিলাম। তবে শেষমেষ তেমন ক্ষতি হয়নি। যদিও ফলন সামান্য কম হয়েছে। বাম্পার ফলন হলে প্রতিবিঘায় ২৪ থেকে ২৫ মণ ধান পেতাম। তারপরও এবার প্রতিবিঘায় ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পেয়েছি। এতেই খুশি। যে ধান পেয়েছি, সারা বছর নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রি করতে পারব।

রাবেয়া বেগম ও জরিনা খাতুন বলেন, বেটারা (পুরুষেরা) ধান কেটে বাড়ির উঠানে এনে ফেলছেন। আমরা বাড়ির মহিলারাও বসে নেই। কাটা ধান বাড়ির উঠানে রেখে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ঘরের গোলা ভরে রাখছি। এর মাধ্যমে সারা বছর আমাদের পেটের চিন্তা দূর হয়েছে। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের নতুন ধানের হরেক রকমের পিঠা-পুলি খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েও রাখছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোস বলেন, ‘আমন ধানের কর্তন পুরোদমে শুরু হয়েছে। এবার আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা বাজারে ধানের যে দাম পাচ্ছে, তাতে তারা খুশি।

প্রলয় ডেস্ক/আ

Recent Posts

ময়মনসিংহে স্টেশন রোডে অবৈধ হকার উচ্ছেদ

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দেড়শ দোকান উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ নগরীর স্টেশন রোডে…

43 seconds ago

রাজবাড়ীতে অচল খাল সচল ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কৃষক সমিতির বিক্ষোভ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…

2 hours ago

ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…

3 hours ago

রিজন হত্যার প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন

পূর্বধলা সংবাদদাতা নেত্রকোনা সদরে দায়িত্বরত বিকাশ কর্মী রিজন তালুকদারের হত্যার প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।…

3 hours ago

কুড়িগ্রামে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার বিচার ও আসামি গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

জাফর আহমেদ, কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের কালোর ও জিঞ্জিরাম নদী দ্বারা…

4 hours ago

সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী শঙ্কামুক্ত

কক্সবাজারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আপাতত আশঙ্কামুক্ত। তবে…

4 hours ago

This website uses cookies.