সোমেশ্বরী নদীর বালুচরে তাদের জীবিকা

নির্মলেন্দু সরকার বাবুল

দিনের আলো ফুটতেই শুরু হয় ওদের কর্মব্যস্ততা। কেউ কেউ ঠেলা জাল নিয়ে,আবার কেউবা বিশেষ একধরনের গোলাকৃতির চালুনি নিয়ে নেমে পড়েন নদীতে। দিনভর রোদে পুড়ে সন্ধ্যা অবধি ভাসমান কয়লা কুড়াতে নদীর পানি আর বালুচর খোঁড়াখুঁড়ি চলে শেষ বেলায় ঠেলাজালে তুলে ধুয়ে আলাদা করেন তারা। আর এসব কয়লা বেচে পরিবারের সদস্যদের মুখে দু-বেলা আহারের জোগান দেন এসব মানুষেরা।

কয়লা উত্তোলন কাজে শুধু নারীরাই নন,শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি কয়েক হাজার মানুষ নদী থেকে প্রতিদিন কয়লা তোলেন। এটি যুগ যুগ ধরে করে আসা তাদের এক ধরনের পেশা।

এ দৃশ্য দেখা মিলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বুকে। সরেজমিনে গেলে কথা হয় কয়লা উত্তোলনকারী বড়ইকান্দি গ্রামের হালিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান,ভোরে খাবার খেয়ে নৌকা,জাল, বেলচা কোদাল নিয়ে কয়লা তুলতে নদীতে চলে আসেন। নদী থেকে কয়লা তোলার পর পরই পরিষ্কার করতে হয়। পরে প্রতি মন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকিয়ে বিক্রি করলে তখন আরো বেশি টাকায় বিক্রি করা যায়।

রহিমা খাতুন নামের আরেকজন বলেন,সারাদিন কয়লা তুলে একেকজন দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। উত্তোলিত কয়লা নদীর চর থেকেই কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন,পনেরো বছরের বেশি সময় হইবো কয়লা তুলে আইতেছি,এই কয়লা তুলেই হাট-বাজার করি,পোলাপাইন লইয়া চলি। এককথায় এইডার উপর ভরসা কইরা বাঁইচা আছি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন,এলাকায় কোনো কাজ কাম নাই। আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ভরসার স্থল এই সোমেশ্বরী নদী। আগে বালুর ঘাট থাকতে বালুর কাজ করছি কিন্তু এখন কয়লা তোলি।

টুকন সরকার নামের এক কয়লা ব্যবসায়ী বলেন,শ্রমিকরা সারাদিন নদীতে কয়লা তুলে নিয়ে এসে আমাদের কাছে বিক্রি করে। আমরা সবার কাছ থেকে কিনে কিনে জমিয়ে তারপর আমরা বিক্রি করি। তিনি বলেন,সারাদিন রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে এই কয়লা তুলছে তারা। আর আমাদের কাছে বিক্রি করে সবাই সংসারের খরচ জোগান দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সোমেশ্বরী নদী ঘেঁষা সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে পাহাড়ি ঢালের পানিতে সোমেশ্বরী নদীতে ভেসে আসা গুড়া কয়লা তুলে সংসার চালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তিনি বলেন,বর্তমানে বালুঘাট,সাদামাটি কোয়ারি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু কয়লা তুলে অনেকেই আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে।

এই সোমেশ্বরী নদী যুগের পর যুগ ধরে মানুষের জীবিকার যোগান দিয়ে আসছে। কেবল কয়লা নয় বালু,পাথরের মতো খনিজ সম্পদে ভরপুর। তাছাড়াও পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার এই উপজেলায় ঘুরতে আসা পর্যটনদের নৌকায় করে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উপাজন করে আসছেন অনেক মাঝি।

প্রলয় ডেস্ক/আ

Recent Posts

রাজবাড়ীতে অচল খাল সচল ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কৃষক সমিতির বিক্ষোভ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…

2 hours ago

ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…

3 hours ago

রিজন হত্যার প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন

পূর্বধলা সংবাদদাতা নেত্রকোনা সদরে দায়িত্বরত বিকাশ কর্মী রিজন তালুকদারের হত্যার প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।…

3 hours ago

কুড়িগ্রামে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার বিচার ও আসামি গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

জাফর আহমেদ, কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের কালোর ও জিঞ্জিরাম নদী দ্বারা…

4 hours ago

সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী শঙ্কামুক্ত

কক্সবাজারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আপাতত আশঙ্কামুক্ত। তবে…

4 hours ago

৬৫০৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ মোট ৬ হাজার ৫০৬ কোটি ৫০ লাখ…

4 hours ago

This website uses cookies.