মেডিকেলে চাঞ্চ পেয়েও বিষন্নতায় ভুগছেন শিক্ষার্থী ইমা ও তাঁর পরিবার

মারিয়া ইসলাম, সংবাদদাতা

যখন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে ছিলাম এমনও শুনেছি যে, বাসায় রান্না করার মত চাল নাই, আম্মুর ওষুধ কেনার মত টাকা নাই, আমি তারপর কি করবো! তিন বেলার খাবার এক বেলায় খেয়েছি! ওই খানের আন্টিরা অনেক ভালো ছিলো, তারা জানতো যে আমি অনেক গরীব পরিবার থেকে আসছি। এতে তিন বেলার খাবারের টাকা এক বেলায় দিতো। যখন শুনতাম আম্মুর চোখে সমস্যা হয়েছে ওষুধ কিনতে পারছে না। কান্নাকাটি করতেছে, চাল নাই বাসায়, তখন এতো বেশি কষ্ট লাগতো যে তখন মনে হইলো যে আমার মেডিকেলে চাঞ্চ পাইতেই হবে! তাই আল্লাহ’র কাছে অনেক কান্নাকাটি করতাম, যে আল্লাহ প্লিজ তুমি আমাকে সাহায্য করো, আমার আম্মু-আব্বুর এরকম অবস্থা! আমি কি করবো?

আমি যদি চাঞ্চ না পাই, তাহলে আব্বু-আম্মু অনেক হতাশ হয়ে যাবে! অথবা আমার আম্মুর একটি বড় কোন দূর্ঘটনা হতে পারে। তাই মহান আল্লাহ আমাকে অনেক বেশী সাহায্য করেছে। কথা গুলো কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, ইমা আক্তার (২১)। তিনি এবার ফরিদপুর মেডিকেল পরিক্ষায় ২০০৩ সিরিয়ালে উত্তির্ন হয়েছেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার পূর্ব হাসামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র পরিবারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

ইমা পৌর সভার পূর্ব হাসামদিয়া গ্রামের মেয়ে। তার বাবা হতদরিদ্র বিল্লাল শেখ ও মায়ের নাম দোলেনা বেগম। তাদের পরিবারে ইমা বড় সন্তান। তার আরও দুই বোন ৬ষ্ঠ শেণীর শিক্ষার্থী নুসরাত জামিলা ও মাদ্রাসা ছাত্রী তাইবা আক্তার।

ইমা জানায়, আগামী ২ তারিখ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দিন। কিন্তু কিভাবে যে ভর্তি হবো তা অনিশ্চিত। ওই ভর্তির টাকাটা আমি যোগাড় করতে পারি নাই। আমার আব্বুর অনেক সমস্যা হইতেছে, কি করবো? অনেক হতাশায় আছি। তবে, যদি মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ডাক্তার হতে পারি, ইনশাআল্লাহ বিনামূল্যে অসহায় মানুষকে চিকিৎসা দিবো। চেষ্টা করবো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এজন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন ইমা আক্তার।

ইমা আক্তারের বাবা বিল্লাহ শেখ জানান, আমি একজন সাধারণ বাসের ড্রাইভার ছিলাম, বর্তমানে ছোট্ট একটা মুদি দোকান করি। এ থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ যুগিয়েছি। আমি অনেক কষ্টে ধার দেনা করে ইমাকে এ পর্যন্ত এনেছি।
ইমা ছোট বেলা থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী। তার নানা বলতো ইমা একদিন বড় ডাক্তার হবে, সে গরীব মানুষের সেবা করবে। আমার বড় আশা যে আমার মেয়েকে আমি ডাক্তার বানাবো।

ইমার মা অসুস্থ (প্যারালাইসিস রোগী ) দোলেনা বেগম জানান, আমরা দুই জনই অশিক্ষিত। আমাদের পরিবারে ঠিকমতো খাবার জুটে না। তাই মেয়ের কিভাবে সামনে পড়াশোনার খরচ যোগাবো? এই নিয়ে বিষন্নতায় ভুগছেন তিনি।

প্রতিবেশী আওলাদ তালুকদার, রাহেলা বানুসহ কয়েকজন জানায়, আমাদের গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারের ইমা আক্তার। সে ছোট বেলা থেকেই অনেক মেধাবী। সে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চাঞ্চ পেয়েছে। এতে আমরা গ্রামবাসী গর্বিত ও আনন্দিত।

ভাঙ্গা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইকরাম আলী ফকির জানান, ইমা আক্তার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছিলো। সে খুবই ভদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো। এ বছর মেডিকেলে চাঞ্চ পাওয়ায় আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে তার জন্য দোয়া ও শুভকামনা জানাচ্ছি। সে যেন একজন ভালো ডাক্তার এবং মানুষ হিসেবে মানুষের সেবা করতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, আমার শুনেছি এ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। আমরা চেষ্টা করবো তার ভর্তি প্রকৃয়ার সাথে যুক্ত হতে। এছাড়াও তার পারিবারিক ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতায় পাশে দাঁড়াবে উপজেলা প্রশাসন।

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

কুড়িগ্রামে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার বিচার ও আসামি গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

জাফর আহমেদ, কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের কালোর ও জিঞ্জিরাম নদী দ্বারা…

3 minutes ago

সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী শঙ্কামুক্ত

কক্সবাজারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আপাতত আশঙ্কামুক্ত। তবে…

8 minutes ago

৬৫০৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ মোট ৬ হাজার ৫০৬ কোটি ৫০ লাখ…

13 minutes ago

সেই রিকশাচালকের জামিন

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হওয়া রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমান আদালতের মাধ্যমে…

15 minutes ago

২০ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের মতামত জানাবে বিএনপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া পর্যালোচনা করে আগামী ২০ আগস্টের…

1 hour ago

মারা গেলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার সিম্পসন

জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক টেস্ট অধিনায়ক এবং প্রথম পূর্ণকালীন কোচ বব সিম্পসন। ৮৯ বছর বয়সে সিডনিতে…

3 hours ago

This website uses cookies.