বাবার অপচিকিৎসার অভিযোগ করায় প্রেসক্লাবের ভিতরেই সাংবাদিককে পেটালেন সন্ত্রাসীরা

রাকিবুল হাসান ফরহাদ, স্টাফ রিপোর্টার

ময়মনসিংহে থানায় অপচিকিৎসার অভিযোগ করায় এক সাংবাদিককে প্রেসক্লাবের ভিতরে ফেলে পিটিয়েছে চিকিৎসক ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে ওই সাংবাদিকের মাথায় আঘাত লাগায় ডান কানে ৪০ শতাংশ কম শুনছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

শুক্রবার (২১ মার্চ) পর্যন্ত ওই সাংবাদিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে ভর্তি আছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন সাংবাদিক।

আহত সাংবাদিক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া খালপাড় এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক, দৈনিক রুপালী বাংলাদেশ পত্রিকার ময়মনসিংহ নিজস্ব প্রতিবেদক।

আহত সাংবাদিকের ভাষ্য, তার বাবা মোসলেম উদ্দিন (৭০) ৭ থেকে ৮ দিন ধরে দাঁত ব্যথায় ভুগছিলেন। পরে দাঁত তোলার জন্য তাকে হাসপাতালে অনেক চেষ্টা করা হয়। কোন মতেই তিনি হাসপাতালে যাবেন বলে বায়না ধরে। পরে গত ১২ মার্চ বিকালে নগরীর শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার এ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলোশন নামক একটি দন্ত চিকিৎসালয়ে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নিজেকে চিকিৎসক দাবি করা শিমু আক্তার নাড়াচাড়া করা দাঁত না ফেলে ভালো দাঁত ফেলে কিছু ওষুধ লিখে দেয়। এগুলো নিয়ে মোসলেম বাড়িতে ফিরে আরও বেশি দাঁতের ব্যথায় ভোগতে শুরু করেন। ওষুধ খেয়েও কোন কাজ হচ্ছিল না। পরে ওইদিন রাত ১১ টার দিকে বুঝতে পারেন, তার নাড়াচাড়া করা দাঁত না ফেলে ভালো দাঁত ফেলে দিয়েছেন।

পরদিন ১৩ মার্চ বিকালে শম্ভুগঞ্জ বাজার মোড়ের গোল চত্তর এলাকার রীচ হেলথ সেন্টার নামক দন্ত চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম নিজেও কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মোসলেম উদ্দিনকে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশায় বসিয়েই দাত ফেলে দিয়ে ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু তার ওষুধ খেয়েও দাঁতের ব্যথা কমেনি। এভাবেই তিনি ৩ থেকে ৪ দিন দাঁতের ব্যথায় ভোগেন। এমন অপচিকিৎসার বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে উল্টো সংবাদকর্মীকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন।

এ ঘটনায় গত বুধবার (১৮ মার্চ) সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম নিজে বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় ভুয়া চিকিৎসক শিমু আক্তার ও ডা: আমিনুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়ের করেন। এর কিছুক্ষণ পরে শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ফোন করে রাতে চা পানের দাওয়াত দেন। পরে ওইদিন রাত ৮ টার দিকে কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আন্নান অভিযোগের তদন্ত করতে শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজারের এ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলোশন এসে শিমু আক্তারকে না পেয়ে সাংবাদিককে ফোন করে।

এদিকে, সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম একা একা শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের নিচে চলে যান। এবং এসআই আন্নানকে শম্ভুগঞ্জ মোড়ে আসতে বলেন। সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের নিচে দাঁড়াতেই চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সংবাদকর্মীকে থানায় অভিযোগ করায় গালাগালি শুরু করেন এবং মারধর করার চেষ্টা করেন। অল্প সময় পরেই প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ক্লাবে আসেন। এসেই সাংবাদিক চিকিৎসকসহ কয়েকজনকে নিয়ে ক্লাবে তার কক্ষে প্রবেশ করেন। সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে চিকিৎসক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী সভাপতির সামনেই সাংবাদিকের মাথায় বেধড়ক কিল-ঘুষি দেয়া শুরু করে। সাংবাদিক নিজেকে রক্ষা করার জন্য দুই হাত দিয়ে মাথা ডেকে রাখেন। তারপরেও সন্ত্রাসীরা তাকে মারতেই থাকেন। এসব দেখে প্রেসক্লাবের সভাপতি ফেরানোর চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে, সাংবাদিকের উপর হামলা করা কয়েকজন সন্ত্রাসী পালিয়ে যান। পরে পুলিশ সংবাদকর্মীকে নিরাপদে স্থানে সরিয়ে দেন।

আহত সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নিজের বাবার অপচিকিৎসার বিচার চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হবো কোনদিন ভাবতে পারিনি। আমার ওপর করা অন্যায়ের বিচার চাই।

এবিষয়ে জানতে রীচ হেলথ সেন্টারের চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকের বাবা আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি সবসময় আমার পরামর্শ নিয়ে থাকেন। উনি হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে হাত ফেলে ব্যাথা ভালো না হওয়ায় আমার কাছে আসেন। আমি উনাকে যথাযথ সেবা দেই। কিন্তু তারপরেও উনার ছেলে (সাংবাদিক মঞ্জু) আমাকে ভূয়া ডাক্তার লিখে থানায় অভিযোগ দেন। আমি একজন সরকারের রেজিস্ট্রারকৃত চিকিৎসক। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার কারণ সাংবাদিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি উচ্চবাচ্য করলে আমার পরিচিতরা ঠেলা ধাক্কা দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

এবিষয়ে শম্ভগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসক আনোয়ার আমার ক্লাবের সদস্য। সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলামকে আমিই চা পানের দাওয়াত দিয়েছিলাম। পরে আমার রুমেই চিকিৎসক আনোয়ার তার লোকজন নিয়ে সাংবাদিককে মারধর করেন। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানতে পারছি।

এবিষয়ে জানতে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, মারধরের পর ওই সাংবাদিক নিজেই ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আজ অথবা কাল তিনি অভিযোগ করবেন। অভিযোগ করলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

প্রলয়/মোমিন তালুকদার

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’র ত্রিশালে মনোনীত প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস সিকদার

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন…

30 minutes ago

শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর: মাহফুজ আলম

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা…

2 hours ago

টঙ্গীতে ১৫ রাউন্ড গুলিসহ বিদেশী রিভলবার উদ্ধার

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে ১৫ রাউন্ড তাজা গুলিসহ একটি বিদেশী রিভলবার উদ্ধার করেছে টঙ্গী পূর্ব থানা…

11 hours ago

ত্রিশালে অসহায় পরিবারের কাকরুল গাছের বাগান কেটে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…

17 hours ago

আইসিইউতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল, দেখার কেউ নেই

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য।…

17 hours ago

চিলমারীর অসহায় রফিকুল পরিবারের পাশে চার সাংবাদিক

নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…

17 hours ago

This website uses cookies.