রাখাইনে আর্কান আর্মির নিপীড়নে পালাতে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা, আশ্রয় নিচ্ছে ক্যাম্পে

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী

মিয়ানমারের জান্ত সরকারের সেনা সদস্যদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মুখে টিকতে না পেরে ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) তথ্যমতে ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর থেকে গত দেড় বছরে আরও ১ লক্ষ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছ এবং এই দ্বারা অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ার পর থেকে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। নির্মম অত্যাচারে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। । এসব রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের স্থল ও নৌপথে সীমান্তের ২৫ টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা যায়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের কারণে রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা কক্সাবাজারের উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে অনুপ্রবেশ করেছে এমন কিছু রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলি তাদের একজন আমিনা খাতুন নিতি বলেন.. মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আরাকান আর্মির নির্যাতনের কারণে সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এলাকায় নির্যাতন, গুলিবর্ষণ ও গ্রামের সব বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরেক জন জানে আলম বলেন.. আরাকান আর্মি আমাদের জিম্মি করে ফেলে পরে বেশকয়েকদিন লুকিয়ে থেকে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা আরাকান আর্মির নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। মোহাম্মদ ফারুক বলে.. রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের জিম্মি করছে আরাকান আর্মি। তাদের সাথে দাস-দাসীর মতো ব্যবহার করছে। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, কাউকে কাউকে আবার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে লাগাচ্ছে। রহিমা খাতুন নামের আরেক জন বলে.. আমার এক ভুনের মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। আরেকজন বলেন, কিশোর-তরুণদের আরাকান আর্মি তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের কথামতো কাজ না করলে চরম অত্যাচার করছে বলে জানান তারা।

রোহিঙ্গা নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, প্রতিদিন পাঁচশতর বেশি রোহিঙ্গা আসছে। এভাবে আসতে থাকলে প্রত্যাবাসন দূরে থাক, তাদের থাকা-খাওয়া কীভাবে হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। নতুন আসা রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় আপাতত থাকতেছে। ক্যাম্পে শেল্টার না থাকাই নতুন আশা রোহিঙ্গাদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বলেও জানান তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও নতুন করে অনুপ্রবেশ এর বিষয়ে ৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী রোমান প্রতিবেদককে বলেন…একদিকে সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সময়ে প্রতিদিন রাখাইনে সংঘাতের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতেছে এভাবে চলতে থাকলে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু তাই সরকার জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সকল সংস্থার সাথে কথা বলে টেকসই ও নিরাপদ বসবাসের উপযোগী করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি বর্ডারে দায়িত্ব পালন করা বিজিবি সহ সকল প্রশাসনকে কঠোরভাবে নজরদারি করে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে বলে জানান। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে আমাদের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা স্থানীয়রাও হুমকির মুখে বসবাস করতেছি তাই সরকারকে রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানের পথ বের করার দাবি জানান তিনি ।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব ও উখিয়ার পালং খালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন..আমরা মানবিক খাতিরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম কিন্তু এখন আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানবিধ সমস্যায় জর্জরিত , নতুন করে কোনো সমস্যায় পড়তে চাই না। সীমান্তে মাদক চোরাচালান, গরু চালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এইসব বিষয় সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বিজিবি যদি আরো কঠোর হয়ে দায়িত্ব পালন করে তাহলে কখনো সম্ভব হবেনা অনুপ্রবেশের। তিনি আরো বলেন সরকার যদি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, মানবিক করিডোর দেওয়ার তবে এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে। এ বিষয়টা উখিয়া টেকনাফের জনগন কখনো মেনে নিবে না,, সরকার এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের সাথে পরামর্শ পরামর্শ করতে হবে বলে জানান।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল ফরেন সার্ভিস দিবস উপলক্ষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তর্র্বতী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ উভয় সংকটে আছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি। বিদ্রোহীগোষ্ঠীটি রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যাওয়া যাচ্ছে না। আবার তাদের এড়িয়েও এ সংকট সমাধান সম্ভব নয়। তবে জাতীয় স্বার্থে অরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

জিয়াউর রহমান এক দূরদর্শী নেতা ও দেশ গঠনের রূপকার: মোহাম্মদ মাসুদ

জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, যিনি ১৯৩৬ সালের ১৯…

4 hours ago

ভালুকায় ইয়াবাসহ ৪ মাদক কারবারি গ্রেফতার

এস.এম ফিরোজ আহমেদ, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভালুকা…

8 hours ago

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি বছরই ৩টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন: প্রধান উপদেষ্টা

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, চলতি বছরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি…

8 hours ago

এদেশে সবার অধিকার সমান, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ থাকবে না: সেনাপ্রধান

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শনিবার রাজধানীর পলাশী মোড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বললেন,…

9 hours ago

ইসলামী জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে খেলাফত আন্দোলন

আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ…

9 hours ago

জামায়াত ও এনসিপির মতো কিছু গোষ্ঠী চায় না দেশে নির্বাচন হোক: দুলু

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, ‘আগামী…

9 hours ago

This website uses cookies.