মাঠে এবং সচিবালয়ে কর্মরত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন ও সরকারি কর্মচারী আইনে ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ সংশোধন করে বিলুপ্ত ১৯৭৯ সালের বিশেষ আইনের বিধান যুক্ত করার উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, চাকরি বিধি-১৯১৮-তে ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারাগুলো সংযোজন করা হলে নতুন সংকটের উদ্ভব ঘটাবে। কী কী সংকট তৈরি হতে পারে- তারও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে তারা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারাগুলো বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক, যা অধ্যাদেশ দ্বারা প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং যা সাধারণ নাগরিক ও কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক হওয়ায় সরকারের উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ বা বাতিল করা হয়েছিল। নিবর্তনমূলক এ ধারা সংযোজন করা হলে দেশে বিরাজমান অস্থিতিশীল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সঙ্গে সরকারের অনুগত কর্মচারীদেরও আনুগত্য থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার দেশবিরোধী গভীর চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার কাজটি কুচক্রীমহল সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগাবে এবং নতুন করে চরম বৈষম্যের উদ্ভব হবে ও সারা দেশের সব কর্মচারী অঙ্গনে সরকারবিরোধী নেতিবাচক মনোভাব এবং অসন্তোষ বিস্তার লাভ করবে।
এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত ধারাগুলো চাকরি আইনে সংযোজন করা হলে অনেক নিরীহ কর্মচারী কোনো কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই চাকরিচ্যুত হবে এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সহজে দুর্নীতি করতে পারবে ও চাকরির ভয় দেখিয়ে হয়রানি এবং কর্মচারী নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাবে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ বলেছে, প্রস্তাবিত ধারাগুলো চাকরি আইনে সংযোজন করা হলে অসৎ কর্মকর্তা কর্তৃক প্রজাতন্ত্রে নারী সহকর্মীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে সম্ভ্রমহানিসহ নানাবিধ হয়রানির সম্মুখীন হবেন এবং একই সঙ্গে মিথ্যা অপবাদের শিকার হয়ে চাকরি হারানোর মতো উভয় প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ নিবর্তনমূলক আইন কার্যকর হলে এর দ্বারা কর্মকর্তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। নিজেদের আত্মমর্যাদা হানিকর কালা-কানুন প্রবর্তিত হলে কর্মচারীরা আত্মঅভিমানে আর সরকারকে পূর্বের মতো সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করবে না, বরং একতরফা বৈষম্যের শিকার হয়ে সরকারকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে সহযোগিতার পরিবর্তে যুক্তিসঙ্গত কারণে অসহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করবে। ফলে প্রতিবন্ধকতামুক্ত কর্মপরিবেশে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও আমলাদের পোয়াবারো অবস্থার সৃষ্টি হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধান পরবর্তীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দ্বারা রহিত করা হয়েছিল। ওই বিধান পুনরায় চালু করা হলে সরকারের দুর্বলতা চরমভাবে প্রকাশিত হবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ঘাপটি মেরে থাকা কর্মকর্তারা চলমান কোণঠাসা অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলতে পারে। কারণ সরকারের অনুগত কর্মচারীরা তখন পূর্বের মতো সরকারবিরোধী অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সরকারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে না। নিবর্তনমূলক আইনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রথমত তারা সরকার প্রবর্তিত কালা-কানুনের প্রতি ঘৃণা ও আত্মঅভিমান প্রকাশ করবে এবং দ্বিতীয়ত চাকরি হারানোর ভয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে পূর্বের মতো ভূমিকা পালন করবে না।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ বলেছে, চলমান পরিস্থিতিতে কর্মচারীরা যারপরনাই বঞ্চিত। ১০ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কোনো পে-কমিশন গঠন করা হয়নি। দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মচারীদের পূর্ণ-কর্মক্ষমতা ও দৈহিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এবং দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও চাকরির বয়স বৃদ্ধি না করা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক জীবনমান বজায় রাখতে না পারা, সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা করতে না পারাসহ নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে অধস্তন কর্মচারীদের জীবন বিপর্যস্ত- যেখানে বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোসাই’-এর মতো অবস্থা, সেখানে আবার নতুন করে কালা-কানুন প্রবর্তন; যা স্পষ্টত বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারহরণের নামান্তর। শুধু একপক্ষের প্রস্তাব বিবেচনা এবং ভুক্তভোগী অধস্তন কর্মচারী নেতাদের বক্তব্য না নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশের জন্য চরম আত্মঘাতী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত কর্মচারী নিবর্তনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের পরিবর্তে কর্মকর্তাদের সেবাদাসে পরিণত হবে এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পুনরায় বীরদর্পে গোপন ষড়যন্ত্র করতে উদ্বুদ্ধ হবে। সরকারের নীতি-নির্ধারকদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে এরূপ কার্যক্রম সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের কর্মচারীদের উসকে দেওয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র, যা ঠাণ্ডামাথায় সূক্ষ্মভাবে গৃহীত হচ্ছে এবং সরকারের সহযোগীদের শত্রুর কাতারে ঠেলে দেওয়ার অপপ্রয়াস।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ আরও বলেছে, প্রজাতন্ত্রের সাধারণ কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা এসব ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে সদা প্রস্তুত থাকব ইনশাআল্লাহ। তাই আমরা সারা দেশের সব কর্মচারীর পক্ষ থেকে এ নিবর্তনমূলক কালা-কানুন সংযোজন থেকে সরে এসে স্বাভাবিক পন্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা প্রদর্শন ও বিরাজমান কর্মচারী অসন্তোষ থেকে সরকারের প্রতি বিরাজিত পূর্ণ আস্থা সমন্বয় রেখে কর্মচারীদের প্রাপ্যতানুযায়ী শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় কার্যক্রম নিষ্পন্নের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের স্থিতিশীলতা ও সাফল্যের অংশীদার হিসেবে এ দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যদের মতো আমাদেরও সরকারের আনুগত্য ও সহযোগিতার অবদানকে মূল্যায়নের বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রলয়/তাসনিম তুবা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বের ১২ টি দেশের নাগরিকদের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা…
৪ জুন বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচটা মাঠে গড়িয়েছে। তবে সে ম্যাচের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারেবারে। সে…
অভিবাসন বিরোধী তল্লাশির জেরে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহর। বিক্ষুব্ধরা গাড়িতে আগুন…
যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.…
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন। গাজা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এদিন…
কয়েকটি বিভাগে টানা পাঁচদিন বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার সংস্থাটির দেওয়া…
This website uses cookies.