ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে দুই মাস ধরে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জে নেই বিদ্যুতের আলো

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকাটি দুই মাস ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকাটি দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এরিয়া হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে সন্ধ্যার পর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের আলো না থাকায় রাতের বেলা দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বারটি রীতিমত ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা টোলপ্লাজা পার হয়ে হাসামদিয়া ফ্লাইওভার পার হয়ে ইন্টারচেঞ্জে প্রবেশ করতেই পুরো অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় প্রতিনিয়ত চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাসহ এ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশ সন্ধ্যার পর টহল দিলেও এসব অসামাজিক কার্যকলাপ ও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা কমে নি। তাই অনতিবিলম্বে ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুত সমস্যার সমাধান এবং মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

আরও পড়ুন

তবে, বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথের (শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ হানিফ জানান, ‘ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুতের সাব-ষ্টেশনে গত কয়েকমাস যাবত বৈদ্যুতিক কোন ত্রুটির কারনে রোড লাইট বন্ধ রয়েছে কি না’। ‘সে বিষয়ে তাঁর জানা নেই’। ‘বরং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সময়ে জেনারেটর দিয়ে পুরো ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় রোড লাইটগুলি জ্বালানো হয়’। এসময়এ প্রতিবেদককে ‘তিনি উল্টো প্রশ্ন রাখেন-‘ তাহলে ওজোপাডিকোকে কেন আমরা বিদ্যুতের বিল দেই’। ওই কর্মকর্তার ভাস্য- ‘ইন্টারচেঞ্জ এরিয়ায় থাকা রোড লাইটগুলি বন্ধ থাকার প্রকৃত কারণ হচ্ছে- বৈদ্যুতিক তার ও বাল্বগুলি চুরি হয়ে যাওয়া’। ‘চুরির ঘটনাগুলি একাধিকবার ভাঙ্গা থানা পুলিশকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার হয়নি’।

এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ বিদ্যুতের সাব-ষ্টেশনে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড সিরাজ শেখ দাবি করেন- ইন্টারচেঞ্জের সাব-ষ্টেশনে বিদ্যুতের ত্রুটি হওয়ার কারনে প্রায় দেড়মাস যাবত লাইটগুলি জ্বলছে না। তাই জেনারেটর দিয়ে প্রতিদিন রাতে প্রায় ৩ ঘন্টা রোড লাইটগুলি জ্বালানো হচ্ছে।

ওজোপাডিকো ভাঙ্গা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, ইন্টারচেঞ্জ এরিয়ায় সাব-ষ্টেশন মিটার পর্যন্ত তাদের বিদ্যুত সচল রয়েছে। কিন্তু কি কারনে পুরো রোডলাইট বন্ধ রাখা হয়, সেটা সড়ক ও জনপথের সংশ্লিষ্টদের আভ্যন্তরীণ প্রবলেম। তবে, গত ৪ মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে। এজন্য আগামী মাসে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
গত কয়েকদিন দুই দিনে সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় কোন বিদ্যুত নেই। এর মধ্যে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ বিদ্যুতের সাব-ষ্টেশনে খোঁজ নিতে গেলে সেখানে থাকা দায়িত্বরত এক সিকিউরিটি গার্ড সিরাজ শেখ জানায়, তিনি জেনারেটর দেখাশুনা করেন। এসময় তড়িঘড়ি করে জেনারেটর চালু করতে দেখা যায় তাকে। এরপর রাত সাড়ে ৮ টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত রোড লাইটগুলি চালু করা হয়।

যা পুনরায় আবার বন্ধ করা হয়। এসময় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসের খোঁজ নিচ্ছিলেন ইমান আলী, ইকরাম ও তন্ময় সাহাসহ ৪-৫ জন পথযাত্রী। তারা জানায়, ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখেন পুরো এলাকা। যদিও পথিমধ্যে তাদের সঙ্গে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে নি। তবে বেশ ভয়ে ভয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেছেন তারা। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে সদরপুর যাচ্ছিলেন ইস্টওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সজিব, রায়হানসহ কয়েকজন জানায়, এখানে প্রায় ঘুরতে আসেন তারা। কিন্তু এসেই দেখেন বিদ্যুত নেই। এমন ভাইটাল পয়েন্টে রাতের বেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত না থাকলে যে কেউ অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনায় পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা। চটপটি বিক্রেতা ফিরোজ শেখ জানায়, সন্ধ্যার পর পরই লাইটগুলি বন্ধ থাকায় দূর হতে আসা ভ্রমন পিপাসুদের আনাগনা কমে গেছে। এতে বেচা কেনা কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে তাঁর। কয়েকজন অটো চালক, মোটর শ্রমিকেরা জানায়, গত কয়েকমাস ধরে রোড লাইটগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে না জ্বলায় সড়কের পাশে রাখা ছোট-বড় পিকআপ-বাসগুলিতে চুরি হচ্ছে। কলেজ শিক্ষার্থী সুব্রত সাহা, চা বিক্রেতা জসিম জানায়, রোড লাইট জ্বলছে না। আলো না থাকায় চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। প্রফেসর দিলীপ কুমার জানান, রাতে ইন্টারচেঞ্জ এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে পথযাত্রীদের। পুরো গোল চত্তরে রাতে আলো না থাকায় তরুন-তরুনীরা প্রায়ই অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে।

ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ হোসেন জানান, ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত আলো থাকা প্রয়োজন। সেজন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এছাড়াও অত্র এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সমকালকে জানান, বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। এছাড়াও আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ অঞ্চল দিয়ে ২১টি জেলার মানুষ যাতায়াত করবেন। তাদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সড়ক ও জনপথের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

 

 

 

প্রলয়/তাসনিম তুবা

Md Seyam

Recent Posts

ত্রিশালে অসহায় পরিবারের কাকরুল গাছের বাগান কেটে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…

43 minutes ago

আইসিইউতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল, দেখার কেউ নেই

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য।…

46 minutes ago

চিলমারীর অসহায় রফিকুল পরিবারের পাশে চার সাংবাদিক

নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…

52 minutes ago

ময়মনসিংহে স্টেশন রোডে অবৈধ হকার উচ্ছেদ

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দেড়শ দোকান উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ নগরীর স্টেশন রোডে…

58 minutes ago

রাজবাড়ীতে অচল খাল সচল ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কৃষক সমিতির বিক্ষোভ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…

3 hours ago

ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…

4 hours ago

This website uses cookies.