ছবি অনলাইন সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের লালুয়ারটুক গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হকের পরিবারের চিত্র এটি। এনামুলের দুই ছেলেসহ গোয়ালনগর ইউনিয়নের লালুয়ারটুক, একই ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া, গোয়ালনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের রতানি গ্রামের ২৫টি পরিবারের ২৬ যুবককে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় পাঠায় দালাল চক্রটি।
এ জন্য প্রত্যেকেই ১১ লাখ করে টাকা দিতে হয়েছে। নির্যাতন ও হয়রানির পর তাঁদের মধ্যে ৯ যুবক দেশে ফিরে এলেও বাকিদের কেউ কেউ বন্দী এবং কয়েকজন এখনো নিখোঁজ। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ২৫টি পরিবার। দালালদের বিচার দাবি করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে স্বজনেরা এলাকায় মানববন্ধনও করেছেন।
দালালদের বিচার দাবি করে ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের স্বজনেরা মানববন্ধন করেছেন।
জমানো টাকা ও ফসলি জমি বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন বৃদ্ধ এনামুল হক। ঋণ করেন আরও ১২ লাখ টাকা। পরিবারের ভাগ্য বদলের আশায় ২২ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে তাঁর দুই ছেলে ইউরোপের দেশ ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন। দালাল চক্র ইতালির কথা বলে তাঁদের লিবিয়ায় পাঠায়। সেখানে তাঁর দুই ছেলেকে আটকে রেখে নির্যাতন করে অর্থও হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এক বছর ধরে দুই ছেলের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের স্বজনদের দাবি, দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত গোয়ালনগর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের ফরহাদ মিয়া, মামুন মিয়া ও আরমান মিয়া এবং একই ইউনিয়নের সিমেরকান্দি গ্রামের সায়েদুল ইসলাম। চক্রটি ওই ২৬ জনকে ইতালিতে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায়।
লালুয়ারটুক গ্রামের সারাজ মিয়ার ছেলে আরমান মিয়া (২৬), একই গ্রামের রেহান উদ্দিনের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম (১৯), নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. হাসান (২৩), ইউনুছ মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (২৪), মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে মিজবা উদ্দিন (২৬), এনামুল হকের ছেলে তফসিরুল হক (৩০) ও তাকবিরুল হক (২৩) বর্তমানে নিখোঁজ। দালাল চক্রের প্রধান ফরহাদ মিয়া দেড় বছর আগে তাঁদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় পাঠান।
এনামুল হক বলেন, ‘সাত লাখ টেহার জমি বিক্রি করছি। ১২ লাখ টেহা ঋণ করছি। জমাইছিলাম কিছু টেহা। এমনে ২২ লাখ টেহা দিয়া দুই পুলারে বিদেশ পাঠাইছিলাম। তাকবিরুলরে চাইর বার বেচছে। তফসিরুলের লগে এক বছর আগে সর্বশেষ কথা অইছিল। অহন হেরা নিখুঁজ।’
লিবিয়ায় আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার ও কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসা ৯ যুবকের মধ্যে আছেন গোয়ালনগর গ্রামের অহিদ মিয়া ও আজহারুল মিয়া, দক্ষিণদিয়া গ্রামের সুমন মিয়া ও দেলোয়ার হোসেন, লালুয়ারটুক গ্রামের দুই ভাই খায়রুল মিয়া ও মামুন মিয়া, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের রতানি গ্রামের মাহিন আহমেদ, আরশাদ মিয়া ও রাহুল মিয়া। তাঁদের ভাষ্য, দালাল চক্রের প্রধান ফরহাদের মাধ্যমে তাঁরা ২০২২–২৩ সালে লিবিয়ায় যান। গত ৭ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লিবিয়ার কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরে আসেন তাঁরা।
ভুক্তভোগী সুমন মিয়া বলেন, ইতালি যেতে ফরহাদকে সর্বমোট ১১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া নেওয়া হয়। পরে বেনগাজি শহর থেকে একটি নৌকায় করে ৬০ জনকে তুলে নেওয়া হয়। নৌকাটি এক ঘণ্টা চলার পর তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁদের সবাইকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। একটি ক্যাম্পে নিয়ে তাঁদের রাখা হয় দেড় মাস। সেখানে প্রতিদিন তাঁদের মারধর করা হতো। ২৪ ঘণ্টার জন্য একবার খাবার দেওয়া হতো। গোসল ও প্রস্রাব-পায়খানার জন্য দুই লিটার লোনা পানি দিত এবং শুধু রাতে একটি রুটি দিত। ওই পানি ও খাবার খেলে সবার পেটে ব্যথা করত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহাম্মদ নামের একজনের বাড়িতে তাঁরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন। কাজ না করলে আহাম্মদের ছেলে পিস্তল দিয়ে মারধর করতেন ও হুমকি দিতেন। আর যে দিন কাজ থাকত না, সেদিন সবাইকে প্রখর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। আহাম্মদের ছেলে লাথি দিয়ে খাবার ফেলে দিতেন। মাঝেমধ্যে তাঁদের প্রস্রাব খেতে দিতেন।
মাহিন আহমেদ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েক জানান, লিবিয়া যাওয়ার আগে সবাই ফরহাদকে চার লাখ টাকা করে দিয়েছেন। লিবিয়ায় নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রেখে ফরহাদ সবার কাছ থেকে আরও সাড়ে চার লাখ টাকা করে নেন। নৌকায় তুলে দিলে প্রশাসন ধরে ফেললে তাঁদের কারাভোগ করতে হয়। পরে ফরহাদ সবাইকে ছাড়িয়ে আনেন। ‘গেম’ (নৌকায় পাঠানোর প্রক্রিয়া)-এর মাধ্যমে ইতালি পাঠানোর কথা বলে সবার পরিবারের কাছ থেকে আবার আড়াই লাখ টাকা করে নেন ফরহাদ। আড়াই থেকে তিন মাস পর ফরহাদ তাঁদের বিক্রি করে দেন। তিন মাস কারাগারে থাকার পর এক পাকিস্তানির মাধ্যমে ভৈরবের এক ব্যক্তির সহায়তায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রত্যেকে বিমানের টিকিটসহ খরচ বাবদ আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দিলে তাঁরা দেশে ফিরে আসতে পারেন।
লিবিয়ায় থাকা মো. আরমান এক মাস ধরে এবং মনির মিয়া ও মো. হাসান ছয় মাস ধরে নিখোঁজ। সম্প্রতি গোয়ালনগর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অভিযুক্ত প্রধান দালাল ফরহাদ মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তাঁর পরিবারের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। মুঠোফোনে কল করা হলে সবকিছু শুনে সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন ফরহাদ।
এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আরেক অভিযুক্ত সাইদুল মিয়া বলেন, ‘আমি চাচাতো ভাই ফরহাদের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়েছি। তাঁদের সঙ্গে সেখানে আমিও দেড় মাস জেলে ছিলাম। সর্বমোট ১৮ মাস সেখানে থেকে দুই মাস আগে দেশে চলে আসি। আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। ফরহাদের চাচাতো ভাই হওয়ায় তাঁরা এখন আমার বিরুদ্ধে বলছেন।’
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, এসব গা শিউরে উঠার মতো ঘটনা। তবে এসব বিষয়ে তাঁদের জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কেউই তাঁদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…
এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য।…
নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…
সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দেড়শ দোকান উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ নগরীর স্টেশন রোডে…
রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…
সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…
This website uses cookies.