আন্দোলনে গুলি বিদ্ধ রুবেলের উন্নত চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কিত পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে মাথা ও শরীরে আটটি গুলি বিদ্ধ হয় তার। শরীরের ছয়টি গুলি বের করা সম্ভব হলেও মাথায় থাকা দুটি গুলি এখনো তার অসহ্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত চিকিৎসার অভাবে রুবেলের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে শঙ্কিত তার পরিবার।

আন্দোলনে অংশগ্রহণের সময় একটি গুলি রুবেলের কানের ওপরের অংশে আর অন্যটি মাথার পেছনে আটকে আছে। এ দুটি গুলি মাথায় থাকার কারণে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। এভাবে শারীরিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে জীবন পার করছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বড় শিমুলতলা নয়াপাড়া গ্রামের রুবেল মন্ডল (২৮)।

রুবেল প্রায় ১১ বছর আগে পরিবারের দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে ঢাকায় পাড়ি জমান। তিনি আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় রেজা ফ্যাশনসহ বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজ করতেন। কিন্তু গত ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় রুবেল গুলিবিদ্ধ হন।

প্রাথমিকভাবে ঢাকার মাউথ হাসপাতালে তার শরীর থেকে ছয়টি গুলি বের করা সম্ভব হলেও মাথার দুটি গুলি বের করতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। পরে শ্যামলীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানানো হয়, উন্নত চিকিৎসা ছাড়া মাথার গুলি বের করা সম্ভব নয়। সেই থেকে রুবেল তার মাথায় থাকা গুলির যন্ত্রণায় ভুগছেন। বাড়ি ফিরে আসার পর থেকে তিনি টাইফয়েডসহ বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হন।

রুবেলের পরিবারে রয়েছেন তার স্ত্রী সাথী আক্তার ও দুই সন্তান- মেয়ে রমানা আকতার (৫) ও ছেলে জিহাদ মিয়া (৩)। রুবেলের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল তার পরিবার। কিন্তু রুবেলের আহত হওয়ার পর পরিবারটি এখন দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে। রুবেলের বাবা বাবলু মন্ডলও অসুস্থ, যার ফলে পরিবারের উপার্জনের কোনো উৎস আর অবশিষ্ট নেই।

রুবেল মন্ডল বলেন, আহত হওয়ার আগে তিনি ও তার স্ত্রী দুজনই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন, কিন্তু বর্তমানে দুজনেরই চাকরি নেই। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়েছেন, তবে তাকে ভর্তি নেয়নি। তার কাছে চিকিৎসার কেবল একটি প্রেসক্রিপশন রয়েছে।

কিছুদিন আগে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গিয়ে একটি গুলি বের করা সম্ভব হয়েছে, তবে এখনো তার মাথায় দুটি গুলি রয়ে গেছে। একটি কানের ওপরের অংশে এবং অন্যটি মাথার পেছনে আটকে আছে। এ দুটি গুলি মাথায় থাকার কারণে রুবেল প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার দরিদ্র বাবা নিজেও অসুস্থ। আমি এখন সুচিকিৎসার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অনুভব করছি। আমাকে চিকিৎসা দিন, আমি বাঁচতে চাই।

বড় শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, প্রতি রাতে মাথার যন্ত্রণায় ঘুমাতে কষ্ট হয় রুবেলের। তার জীবন রক্ষায় দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। না হলে তার জীবন নিভে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি বিদ্ধ রুবেলকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এই দরিদ্র পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা খরচ চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরকারিভাবে রুবেলের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি জানার পর আহত রুবেলের পরিবারকে খাবার-সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার সুচিকিৎসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

মারা গেলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার সিম্পসন

জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক টেস্ট অধিনায়ক এবং প্রথম পূর্ণকালীন কোচ বব সিম্পসন। ৮৯ বছর বয়সে সিডনিতে…

36 minutes ago

গাজাবাসীদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তুতি

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে অধিবাসীদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) ইসরায়েলি…

46 minutes ago

না ফেরার দেশে কারা সহকারী মহাপরিদর্শক আবু তালেব

অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. আবু তালেব আর নেই। রোববার (১৭ আগস্ট) ভোরে হঠাৎ অসুস্থ…

48 minutes ago

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন শুনানি অক্টোবরে

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ…

51 minutes ago

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চার আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঘোষণা

মনোযোগ ফেরাতে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের ব্রিফ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রোববার (১৭ আগস্ট)…

54 minutes ago

বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি…

57 minutes ago

This website uses cookies.