নিজস্ব প্রতিবেদক
কতটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু? আচমকাই চাপে পড়া রাষ্ট্রপতি কি কার্যত নজরবন্দি অবস্থায় আছেন? তিনি কি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন? না-কি তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।
কেন রাষ্ট্রপতি নিজে মুখ খুলছেন না? কেন জাতির সামনে এসে তার একটি বক্তব্যকে ঘিরে যে বিতর্ক তার অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছেন না? কেন তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না? মিডিয়ার সামনে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করছেন না?’
বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত অনেকেই রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের মধ্যে অনেকের বিদায়ই সুখকর হয়নি। গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কি পদত্যাগ করছেন?’
একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’‑এ প্রকাশিত রাষ্ট্রপতির একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত সোমবার রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। পরে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, আইন উপদেষ্টার এ বক্তব্যই সরকারের বক্তব্য।’
মঙ্গলবারই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার দাবি জানান।
অন্যদিকে, একই দিন রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করেন কয়েকটি সংগঠনের নেতা‑কর্মীরা। সন্ধ্যায় তারা ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহতও হন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বাসে বঙ্গভবন ছাড়ে তারা।’
এ সময় হাসনাত বলেন, ‘আগামী দুই দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার সবার সঙ্গে কথা বলে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হবে, যাকে নিয়ে কোনো বির্তক থাকবে না। তারপর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এ জন্য আমাদের দুই দিন সময় দিন।’
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি বুধবারও দিনভর আলোচনায়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারি, এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন।’
আবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানান, ‘রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর পদে থাকবেন কি না সেটা আইনি নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হবে।’ বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ না করতেও তিনি সকলকে আহ্বান জানান।”
তবে এই মুহূর্তে রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে বড় শক্তি বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, দলটি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ শঙ্কা জানিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। এতে নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তাই বিএনপি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না।’
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসররা নানা কৌশলে-নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করছে।’
তবে বিএনপির দুই নেতার এই দুই বক্তব্যকে রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে দলটির অস্পষ্ট অবস্থান বলে আখ্যা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কিত বক্তব্যে তিনি বিএপির প্রতি পরিষ্কার বক্তব্য আহ্বান করেছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কোনো বলপ্রয়োগে বিশ্বাসী নই।’ তবে একই সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা বলেন, ‘রাজপথেই সমাধান হবে চুপ্পু (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) কোথায় যাবে।’
বলা প্রয়োজন যে, গত দুদিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ঘিরে নানা আলোচনা শুরু হলেও আগেও অবশ্য এ দাবি করেছেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এ মাসের শুরুতেই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কথা শুরু হয়। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’
নতুন করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ওঠার পর প্রশ্ন উঠছে অন্তর্বর্তী সরকার কি চাইলেই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে?’
এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে, বর্তমান সংবিধান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা সম্ভব না। আবার অন্যভাবে বললে, এই সরকার চাইলে রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতে বলতে পারে। এবং সেটাই এই সরকারের একমাত্র উপায়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজেই পদত্যাগ করে চলে যেতে পারেন। পরে নতুন একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তবে এই বিষয়টি যে খুব সহজ, তা কিন্তু নয়।’
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ৫২, ৫৩ ও ৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলা আছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সংসদ কার্যকর থাকতে হবে। সংসদ সদস্যরাই কেবল রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা অভিসংশন করার ক্ষমতা রাখেন। আবার রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এবং তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন দিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে হবে।’
এই মুহূর্তে এর কোনোটিই সম্ভব না। কেননা সংসদ কার্যকর নেই। স্পিকারও নেই। তবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করেন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি ইনচার্জে থাকেন। তাঁকে তখন রাষ্ট্রপতি হতে প্রস্তাব করতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগেরও সুযোগ নেই । সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর। বরং জন আকাঙ্ক্ষার আলোকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ দৃঢ়চিত্তে বলেছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত হবে। তাহলে তলে তলে কি অনেক কিছু হচ্ছে। যার সামনে ছাত্ররা আছেন কিন্তু নেপথ্যে যারা তাদের ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কি পদ ছেঁড়ে দেবেন? না-কি ভিন্ন কিছু ঘটবে? চারিদিকে শুধুই জল্পনা আর কৌতূহল।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর গত ৮ অক্টোবর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন…
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা…
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে ১৫ রাউন্ড তাজা গুলিসহ একটি বিদেশী রিভলবার উদ্ধার করেছে টঙ্গী পূর্ব থানা…
নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…
এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য।…
নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…
This website uses cookies.