সংগৃহীত ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিসে ই- পাসপোর্টে পুলিশ রিপোর্ট চাওয়ার হেতুবাদ কি? পরিচালক বললেন বহু ক্রাইটেরিয়া আছে। পরিচালকের ক্রাইটেরিয়ার ফাঁদে চলছে প্যাকেজ সিস্টেম। চলছে এটাই এখন কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সারাদিনের কারবার। প্রশ্ন করা হলো সহকারী পরিচালক কে, পাসপোর্ট যার আছে তা আপনার জানা।সামান্য ভুলভ্রান্তির কারনে পুলিশ রিপোর্ট লাগবে কেন বস? তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন কালকে আপনি অফিসে আসলে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবো।
প্যাকেজের মাধ্যমে দফারফা হলে চোখের পলকে হয়ে যায় সব কাজ। আর দালাল ধরে প্যাকেজের মাধ্যমে না আসলে ঘাটে ঘাটে হয়রানি। ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। বিশেষ করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টে নামের বানান ও জন্মতারিখ সংশোধন করতে আসা সেবাপ্রত্যাশীদের বিড়ম্বনা সব থেকে বেশি। এখানেই সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি হতে হচ্ছে সব থেকে বেশি। দালাল ধরে না আসলে অতি সাধারণ সংশোধনেও পুলিশি তদন্তের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ। আর এ চক্রে কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী আর দালাল জড়িত।
অফিসের রেকর্ড কিপার হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে এ চক্রে আরও আছে হিসাবরক্ষক মাহফুজ্জামান, ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর ফারুক হোসেন, অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান, নাইট গার্ড রমেশ ও মালি রাসেল আহম্মদ, অফিস স্টাফ ওয়াসিম। এছাড়া পাসপোর্ট অফিসের সামনের চারজন ব্যবসায়ী। পরশ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাজহারুল ইসলাম, সায়মা টেলিকমের মালিক মহিবুল ইসলাম, ইউসুফ টেলিকমের ইউসুফ আলী ও লিটন টেলিকমের লিটন হোসেন। কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আবেদনকারী, দালাল ও ডিএসবি সূত্রে কথা বলে এমন চিত্র মিলেছে। আবেদনকারী সেজে পাসপোর্ট অফিসের সামনে একটি টেলিকমের দোকানে গিয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
নতুন আবেদন ও নামের বানান ঠিক করতে হলে কি প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে জানালে এক দালাল বলেন, এখানে দুই সিস্টেমে কাজ হয়। এক নরমাল আবেদন আর প্যাকেজ সিষ্টেমে। প্যাকেজ সিস্টেমে আসলে আমরা অফিসের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব ঠিক করে দেব। আপনার কোনো ঝামেলা হবে না। এজন্য আমাদের ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে সরকারি খরচ ৫ হাজার ৮০০ টাকা যার মানি রিসিট পাবেন। বাকি টাকা অফিসকে দিতে হবে। অফিসের হাসানুজ্জামান ভাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। তার সাথে অন্যরাও আছেন। ওই দালাল বলেন, পুলিশ ভেরিফিকিশন হবে কি হবে না সেটা নির্ভর করে স্যারদের ওপর। তারা চাইলে হবে, না চাইলে হবে না। সব প্যাকেজর ওপর নির্ভর করে। আর আপনি সাধারণভাবে গেলে নানা ভুল ধরে কাগজপত্র নেই বেল হয়রানি হতে হবে।
এছাড়া ফিঙ্গার দিতেও ঝামেলাই পড়বেন। এবার কমপক্ষে ৩০ জন আবেদনকারীর তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদক। এর মধ্যে নতুন আবেদনকারী ছাড়াও নামের ও জন্মতারিখের ভুল সংশোধনের আবেদন আছে। অলোক কুমার সরকার। তিনি দীর্ঘদিন মেশিন রেডিবল পার্সপোর্ট ব্যবহার করে আসছিলেন। সম্প্রতি ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন। আগের পাসপোর্টে তার নামের সাথে নতুন ই-পাসপোর্টে নামের একটি অক্ষর পরিবর্তনের আবেদন করেন। সেখানে একটি অক্ষর পরিবর্তনের আবেদন করা হয়। আবেদন করার পর সাধারণত নতুন করে পুলিশি তদন্ত ছাড়াই ই-পাসপোর্ট পাওয়ার কথা অলোক কুমার সরকারের।
তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র অফিসের কর্মচারীদের নির্ধারিত দালাল ধরে না আসার কারণে তাকে হয়রানি হতে হয়। পুলিশি তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। মো. মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি নতুন করে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন। তিনি নামের আগে এমডি পরিবর্তন করে শুধুমাত্র মেহেদী হাসান নামে পাসপোর্ট নেওয়ার আবেদন করেন। তাকেও পুলিশি তদন্তের নামে হয়রানি করেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আর দালালদের সিন্ডিকেট। পরে তিনি টাকা দিয়ে পার পান।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার বাসিন্দা মিরাজুল ইসলাম পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। প্রথমে দালাল ধরে না আসায় মাস খানেক তার আবেদন ফেলে রাখা হয়। এরপর তিনি দালাল ধরে অফিসের এক কর্মচারীকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দেন। পরে ফিঙ্গার দিতে আরো ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়।
এছাড়া আরো অতিরিক্ত ৭০০ টাকা খরচ হয় সেবা নিতে। পাসপোর্ট অফিসের সামনে যে ৪টি টেলিকমের দোকান আছে সেখান থেকে মুলত নিয়ন্ত্রণ হয় সবকিছু। আবেদনকারীরা এসব দোকানে আসলে প্রথম কোনো সিষ্টেমে আবেদন করবেন সেটি জানতে চাওয়া হয়। এরপর রফাদফা হলে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইলে আবেদনপত্রের প্রথম পাতা হোয়াটসঅ্যাপে চলে যায়। এরপর আবেদনকারীর নাম টুকে রাখেন কর্মচারীরা। এ কাজের মুল নেতৃত্ব দিচ্ছেন রেকর্ড কিপার হাসানুজ্জামান। দিনে এভাবে ১০০ থেকে ১৫০ আবেদনের ম্যাসেজ চলে যাচ্ছে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইলে। রাত হলে টাকা ভাগাভাগি হয়ে যায়। প্রতিটি আবেদন থেকে কমপক্ষে ১ হাজার থেকে জটিলতা অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন তারা। আর বিষয়টি জেনেও নিশ্চুপ সহকারি পরিচালক আব্দুর রহমান।
সম্প্রতি বদলি হওয়ায় সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেনের সময়ও মানুষকে এভাবে হয়রানি করেছেন হাসানুজ্জামানসহ অন্যরা। হাসানুজ্জামান এ অফিসে প্রায় ৮ বছরের বেশি সময় চাকরি করছেন। তিনি একাই অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন। সিস্টেমে না আসলে নানা ভুল ধরে দিনের পর দিন হয়রানি করায় তার কাজ। স্থানীয়রা জানান, নামের বানান সংশোধন আর জন্মতারিখ পরিবর্তনের জন্য কেউ আসলে তাদের টার্গেট করেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত দোকানে পাঠানো হয় আবেদনপত্র সংশোধনের জন্য। সেখানে বসেই রফাদফা করে আসতে হয়। যারা রফাদফা করে টাকা দিয়ে আবেদন করেন তাদের পুলিশি তদন্তে পাঠানো হয় না। আর যারা রফাদফা না করে সরাসরি আসেন তাদের পুলিশি তদন্তের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এভাবে হাজার হাজার ফাইল আটকে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশের গোপন শাখার একজন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে বলেন, ‘কোন আবেদন তদন্ত হবে আর না হবে সেটি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা নির্ধারণ করেন। ছোট-খাটো কোনো সংশোধনের ক্ষেত্রে পুনরায় তদন্তের প্রয়োজন হয় না। সেটি সহকারী পরিচালক ইচ্ছা করলে ছেড়ে দিতে পারেন। আমাদের অফিসের কোনো সদস্য আগে এ সিন্ডিকেটে ছিলেন, তবে এখন তাদের সাবধান করা হয়েছে।
আরো পড়ুন-
গত সোমবার ( ২৮ অক্টোবর) বেশ কয়েকজন আবেদনকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে আবুল কালাম, তানভির আহমেদ ও রুবেল হোসেন। এদের প্রত্যেকেই পাসপোর্ট অফিসের সামনের একটি দোকান থেকে সিষ্টেমের মাধ্যমে আবেদন করেন। যার ফলে তাদের কোন হয়রানি হতে হয়নি। হয়রানির শিকার এমন একজন আবেদনকারী শিমুল মিয়া। বাড়ি মিরপুরে। কথা হলে বলেন, সামান্য সংশোধনের জন্য আবেদনের পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন মিরপুর থানায় পাঠানোর পর দুই সপ্তাহ পড়ে আছে। এভাবে হয়রানি করছে পাসপোর্ট অফিসের লোকজন। দালাল ধরে সিষ্টেমে না যাওয়ার কারণে আমার তদন্ত পাঠিয়েছে। এভাবে শত শত ফাইল তারা আটকে রেখে পুলিশ তদন্তের নামে হয়রানি করছে। আবার অনেকের কোনো তদন্তই হচ্ছে না।
সায়মা টেলিকমের মালিক মহিবুল ইসলাম বলেন, আবেদনকারীরা আমাদের কাছে আসেন সহযোগিতার জন্য। আমরা সহযোগিতা করি। অফিসের লোকজনের সাথে সম্পর্ক আছে। তাদের কাছে আমরা সহযোগিতার জন্য মাঝে মধ্যে যায়।’ রেকর্ড কিপার হাসানুজ্জামান বলেন,‘ কোন লোকজনকে হয়রানি করা হয় না। অফিসের কেউ টাকা পয়সা নেয় কি-না আমি জানি না। নিয়ে থাকলে সেই দায়দায়িত্ব তার।’ সহকারী পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা কারা অফিসে সিন্ডিকেট করেছে এসব অপকর্ম করছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। অনুসন্ধান চালিয়ে বের করা হবে।
নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…
এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য।…
নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…
সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দেড়শ দোকান উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ নগরীর স্টেশন রোডে…
রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…
সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…
This website uses cookies.