কঠিন চ্যালেঞ্জেও ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব ইউএনওর : রেকর্ড পরিমাণ সরকারি জমি উদ্ধার

সাইফুল ইসলাম, নান্দাইল

ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পালের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে নান্দাইলের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ সরকারি জায়গায় উদ্ধার করা হয়েছে। এনিয়ে শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই সরকারি কর্মকর্তা। তবে উদ্ধারকৃত এসব জায়গার নির্ধারিত সীমানায় স্থায়ীভাবে পিলার বসানোর এবং কিছু সরকারি স্থাপনা, পার্ক বা খেলার মাঠ নির্মাণ করে দিলেই এর চমৎকার সুফল মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় সুযোগ পেলেই দখলকৃত এসব জায়গা আবারও বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, গত বছরের (২০২৩) ৩১ আগস্ট ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় যোগদান করেন অরুণ কৃষ্ণ পাল। যোগদানের পর থেকেই সততা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা। বিশেষ করে তিনি সরকারি জমি উদ্ধারের মাধ্যমে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাল্য বিবাহ, মাদক, জুয়া, নারী নির্যাতন, সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সহ সকল প্রশাসনিক কাজ দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন অরুণ কৃষ্ণ পাল।

এছাড়াও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তার সরব উপস্থিতি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান, যেকোনো বিষয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপজেলার বাইরেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন অরুণ কৃষ্ণ পাল।

১৪৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার জমি উদ্ধার, বাদ যায়নি প্রভাবশালীরাও

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল দায়িত্ব নেওয়ার তার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে স্বল্প সময়েই বাসস্ট্যান্ড, খেলার মাঠ, বাজার, দোকানপাটসহ বিভিন্ন সরকারি জমি উদ্ধার হতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত নান্দাইল উপজেলায় সবমিলিয়ে প্রায় ১৯ একর দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত কয়েক মাসে সদর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মেইন রাস্তার পাশে ৭৮ শতক (মূল্য প্রায় ২৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা), নান্দাইল চৌরাস্তায় ৩.৬ একর (মূল্য প্রায় ৫৪ কোটি টাকা), মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কানুরামপুর মোড়ে ১ একর আনুমানিক (মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা) চন্ডীপাশা নতুন বাজারে ২.৫ একর (মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা) সরকারি জমি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে সিংরইল এলাকায় ১ একর ৭০ শতাংশ (মূল্য ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা), চর বেতাগৈর ইউনিয়নের চর ভেলামারী এলাকায় প্রায় ১০ একর, (আনুমানিক মূল্য ২ কোটি টাকা), মোগরমহল (নান্দাইল বাজার) ৩ শতক জমি উদ্ধার করের, যার আনুমানিক মূল্য ৯০ লক্ষ টাকা।

এছাড়াও সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) উপজেলার বাকচান্দা আব্দুস সামাদ একাডেমি নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ শতক জমি উদ্ধার করে প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া এসব অভিযানগুলোতে অন্যান্যদের মধ্যে ভূমিকা পালন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়জুর রহমান। এছাড়াও নান্দাইল মডেল থানা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, (কিশোরগঞ্জ) গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী উচ্ছেদ অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে।

অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়ায় স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস

এদিকে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে নান্দাইল প্রশাসনকে সাধুবাদও জানান তারা। একইসঙ্গে উদ্ধারকৃত এসব সরকারি জায়গা যেন আর কেউ কখনই দখল করতে না পারে, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান স্থানীয়রা।

রফিকুল ইসলাম নামক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, অরুণ কৃষ্ণ পাল নান্দাইলে আসার পর থেকে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হতে থাকে। তিনি শুধু শিক্ষাকেই গুরুত্ব দেননি, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ শারীরিক-মানসিক গঠনে নানারকম কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেন। তার নেতৃত্ব অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠসহ অসংখ্য খাস জমি উদ্ধার হয়েছে। এগুলোতে যদি পার্ক, খেলার মাঠসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা এর ব্যাপক সুফল পাবো বলে আশা করি।

তিনি বলেন, নান্দাইলের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভয়ে থাকেন, কখন ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল চলে আসেন। যেকারণে ক্লাসে ছাত্র উপস্থিতিও ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। যদিও আমি নিজে একজন শিক্ষক, আমার কাছে তার এই কর্মকাণ্ডগুলো খুবই ইফেক্টিভ মনে হয়। তবে নান্দাইলে তার সবচেয়ে বড় ও সাহসী কাজ হলো দখল হওয়া কোটি কোটি টাকা সরকারি জমি উদ্ধার।

প্রভাবশালীদের হুমকি-ধামকি দমাতে পারেনি অরুণ কৃষ্ণকে

উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে দখল হওয়া জমি উদ্ধার করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রভাবশালীদের হুমকি-ধামকি মোকাবেলা করতে হয় ইউএনওকে। এরপরও কেনোকিছুই দমাতে পারেনি তাকে। কাজ চালিয়ে গেছেন আপন গতিতে, যার ফলে অল্প সময়েই জয় করে নিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসীদের মন।

আব্দুর রহিম নামক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, নিজ জায়গায় দোকান করে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু গত ৮/১০ বছরের রাস্তার পাশের সব জায়গা দখল করে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে উঠেছিল, যার ফলে আমি পড়ে গেছিলাম একেবারেই পেছনের দিকে পড়ে গিয়ে দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছিলাম। আর দখলকারীরা এই দিনগুলোতে আঙুল ফুল কলাগাছ হয়েছে। ইউএনওর নেতৃত্বে অবৈধ সব দোকানপাট ভেঙে ফেলায় এবার স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারছি৷

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময়েও তিনি বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাত্তা দেননি৷ তাদের মাধ্যমে দখলকৃত অসংখ্য জায়গাও দখলমুক্ত করা হয়েছে। যদিও এসব কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন যদি এমন জনবান্ধব হয়, তাহলে তার ফল আমরা সাধারণ মানুষরাই সবসময় পাবো।

নান্দাইল উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল বলেন,স্বাধীনতার পর নান্দাইলে রেকর্ড সরকারি জায়গায় বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের নেতৃত্বে দখলমুক্ত বা উদ্ধার হয়েছে।এইজন্য ধন্যবাদ জানাই ইউএনওকে। তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকৃত সরকারি জায়গায় সাধারণের জন্য যাত্রীছাউনি ও খোলা জায়গায় যানবাহন স্ট্যান্ড নির্মাণ অথবা সরকারের পক্ষ থেকে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণের জোর দাবি জানাই।

উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে: অরুণ কৃষ্ণ পাল

উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, আমি নান্দাইলে যোগদানের পর সরকারি জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করি, তখন সাবেক দুইবারের এমপি তুহিন এবং পরবর্তীতে একজন মন্ত্রীর অধিনে কাজ করতে হয়েছে। এখন আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে, এভাবে বার বার ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার মধ্যেও ব্যালেন্স করে উচ্ছেদ অভিযানগুলো করা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপর আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই কাজগুলো করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকারি জায়গায়গুলো যারা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে, তারা সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই হয়ে থাকে। তবে আমি যতদিন আছি সরকারি জায়গাতে কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। যদি কেউ পুনরায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা হতে পারে। আমার এই উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রলয় ডেস্ক/আ

Recent Posts

বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শর্ট সার্কিট, ভালুকায় কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাঁঠালীতে অবস্থিত ইকরাম সোয়েটার্স লিঃ এর অভ্যন্তরে গত (১৫ এপ্রিল…

13 hours ago

সদরপুরে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মানববন্ধন

মুহাম্মাদ জাকির হুসাইন ফরিদী, সদরপুর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সদরপুর উপজেলা শাখার আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক…

13 hours ago

গফরগাঁও এ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আ.ন.ম উবাইদুল্লাহর বিরুদ্ধে জমি মালিকদের…

17 hours ago

কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবারর (১৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় কুড়িগ্রাম জেলা…

2 days ago

সরকারের সমালোচনা করা রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার: আশফাক নিপুন

বাকস্বাধীনতার পক্ষে সরব হয়েছেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। ‘সরকারের সমালোচনা করা রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার’ হিসেবে তিনি…

2 days ago

জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধে আইনি নোটিশ

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার পর এবার জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতি নিষিদ্ধ…

2 days ago

This website uses cookies.