ভাঙ্গায় প্রধান শিক্ষক অরুণ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাজী শামসুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতি অরুণ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ তুলে স্কুলটির সাবেক অভিভাবক সদস্য এনায়েত মুন্সী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার পরিবারের লোকজনের ছত্রছায়ায় স্কুলটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর, ফরিদপুর দূর্ণীনিতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন দপ্তরে অরুন চন্দ্র দত্ত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও অর্থের বিনিময়ে দপ্তরগুলি ম্যানেজ করেই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের গত এক বছর পার হলেও কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের ২০ মে অরুন চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম ও দূর্ণীতির সংবাদ সংগ্রহকালে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর অনুরোধ জানান ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু, রহস্যজনক কারণে উক্ত ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেন দেখার কেউ নেই। জানাগেছে, কাজী শামসুন্নেছো পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ চন্দ্র দত্ত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও অর্থের বিনিময়ে দপ্তরগুলিকে ম্যানেজ করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর স্বাক্ষর জাল করে টিউশন ফি উত্তোলন করে অর্থ আত্নসাৎ, ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং এন্ড ট্রেইেলারিং সেলাই মেশিন অন্যত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থ আত্নসাৎ , বৈজ্ঞানিক ও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রাংশ বিক্রি, ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ আত্নসাৎ এবং এফ.ডি.আর এর অসচ্ছতা, অসাম্প্রদায়িক আচরণ ও সীমাহীন দুর্ণীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেন।

লিখিত অভিযোগসূত্রে জানাযায়, প্রধান শিক্ষক অরুণ চন্দ্র দত্তের অসাম্প্রদায়িক আচরণ ও সীমাহীন দুর্ণীতি গুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. কাজী শামসুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের টিউশন ফি (ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা) দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করে আসছেন। যার কোন সঠিক হিসাব নাই এমনকি বিদ্যালয়ের গোচ্ছিত এফ.ডি.আর এর অসচ্ছতা রয়েছে। কমিটির কোন সদস্য হিসাব চাইলে সে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রসঙ্গে পরিবর্তন করেন। ২. বিদ্যালয়ের সভাপতি (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) এর স্বাক্ষর জাল করে টিউশন ফি (ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা) উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ করা। ৩. ২০১৮ সাল থেকে অদ্যাবধি অত্র বিদ্যালয়ের সকল টিউশন ফি (ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা) উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করেছেন। যার কোন স্বচ্ছ হিসাব সে কাউকে দেখান নাই।

৪. বিদ্যালয়ের বাৎষরিক আয়-ব্যয় এর হিসাব সে কাউকে দেখান না। বিভিন্ন রকমের উন্নয়নমূলক কাজ দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন এবং ভাউচার স্বাক্ষর কমিটি তার নিজস্ব মতে তৈরি করেন যাতে কেউ তার দূর্ণীতি গুলো বুঝতে না পারেন। ৫. পুরাতন ভবনে ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং এন্ড ট্রেইলারিং এর প্রায় ১৫-১৮টি সরকারি অনুদানের কয়েক লক্ষ টাকার উন্নত মানের সেলাই মেশিন গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ।

৬. ভোকেশনাল ও জেনারেল শাখার বিজ্ঞাগারে পূর্বের এবং নতুন অনেক দামি দামি উন্নত মানের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাংশ ও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রাংশ গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।

৭. ফুড প্রসেসিং এন্ড প্রিজারভেশন এর আসবাবপত্র অন্যত্র বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, এমনকি পুরাতন ভবনে ৫-৭ টি রুমের ফ্যান ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

৮. উক্ত প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের কোভিড-১৯ চলাকালীন সময় স্কুল ফান্ডে টাকা থাকা স্বত্ত্বেও ১১ (এগারো) মাসের বেতন দেয় নি। কিন্তু শ্রেণি শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে প্রতি মাসের টাকা উত্তোলন করেছেন। এমনকি প্রতিটি শিক্ষকই তখন অনলাইনে লাইভে এসে করোনার ভয় না করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অনলাইন ক্লাস চালু কওে শিক্ষা প্রদান করেছেন।

৯. উক্ত প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকদের এমপিও, উচ্চতর স্কেল, বিএড স্কেল, এমপিওতে নাম সংশোধন, বোর্ডের চিঠি ইত্যাদি কাজের জন্য শিক্ষকদের কাগজপত্র স্বাক্ষর না করে ও রেজুলেশনের কথা বলে এবং তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর নাম ভাঙ্গীয়ে ও তার বড় বোন অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতির থাকায় তাদের ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের নিকট থেকে তিনি বিভিন্ন সময় অন্যায় এবং অবৈধভাবে কৌশলে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেন এবং করে নেন।

১০. উক্ত প্রধান শিক্ষক গণমাধ্যমকর্মী (সাংবাদিকদের) অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার ভিডিও ভাইরাল, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, অর্থ আত্মসাৎ এর মামলা, বিভিন্ন দপ্তর থেকে দূর্ণীতির তদন্তের চিঠি, এলাকার জনগনের প্রতিবাদ, সাংবাদিক সম্মেলন, মানববন্ধন হওয়া, দূর্ণীতির পোষ্টারিং ইত্যাদি অভিযোগ থাকা স্বত্বেও কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে ঐতিহ্যবাহী কাজী শামসুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষকদের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রদ্ধাবোধ দিন দিন কুমে আসছে। এহেন আচরণের কারণে ছাত্রীরা টিসি ও টিসি ছাড়া অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

অভিযোগ সূত্রে আরো জানাযায়, উক্ত মালামাল আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অর্থাৎ প্রায় ৪/৫ মাস পূর্বে অন্যত্র বিক্রি করেন। স্থানীয়রা জানান, অত্র বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী মোঃ মজিবুর রহমান প্রধান শিক্ষকের সকল অনিয়ম দুর্নীতির সাথে সরাসরি সহযোগিতা করে আসছিলেন। প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব কাজ করেছেন। পরবর্তীতে সরকার পতনের পর নিজে বাঁচার জন্য ভাঙ্গা থানায় একটি মামলাও দায়ের কারেন। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত জানান, এনায়েত মুন্সী স্কুলের কেউ নন। তাকে হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ বানোয়াট ও অসত্য বলে দাবি করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জালাল উদ্দিন জানান, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানা নেই তাঁর। তবে, প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্তকার্য চলমান রয়েছে। সম্প্রতী, দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে তদন্তকার্যক্রম ব্যাহত হয়, খুব শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হবে। উল্ল্যেখ্য, গত ২০ নভেম্বর সমকাল ও চ্যানেল ২৪ সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্রের বিরুদ্ধে ২ সাংবাদিককে অকথ্য গালাগালের ভিডিও ভাইরাল সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর অরুন দত্তের বিরুদ্ধে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ জেলা প্রশাসক, দূর্ণীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। দুর্ণীতিবাজ প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে দৃষ্টানÍ মূলক শাস্তির দাবী জানান স্থানীয় সচেতন মহল।

 

প্রলয় ডেস্ক/আ

Recent Posts

ত্রিশালে অসহায় পরিবারের কাকরুল গাছের বাগান কেটে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীরমপুর ভাটিপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সূয্যত…

4 hours ago

আইসিইউতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল, দেখার কেউ নেই

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য।…

4 hours ago

চিলমারীর অসহায় রফিকুল পরিবারের পাশে চার সাংবাদিক

নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট…

4 hours ago

ময়মনসিংহে স্টেশন রোডে অবৈধ হকার উচ্ছেদ

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দেড়শ দোকান উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ নগরীর স্টেশন রোডে…

4 hours ago

রাজবাড়ীতে অচল খাল সচল ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কৃষক সমিতির বিক্ষোভ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা অচল খাল সচল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক…

6 hours ago

ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট)…

6 hours ago

This website uses cookies.