ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উখিয়ায় সোনার পাড়া বাজারে ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:০৭:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৭৯ বার পড়া হয়েছে

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সোনার পাড়া বাজারে বর্তমানে চলছে এক ধরনের নীরব শোষণ। দীর্ঘদিন ধরেই বাজারটি পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকার হাজারো মানুষের বাণিজ্যিক প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কৃষক, জেলে, দিনমজুর ও সীমিত পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিপণন কেন্দ্র।

কিন্তু বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই বাজারে ইজারাদারদের ‘আসিল আদায়’ কার্যক্রম যেন রূপ নিয়েছে একপ্রকার চাঁদাবাজিতে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পূর্বে দৈনিক ১০০ টাকা করে আদায় করা হলেও, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকা। ফলে অতি ক্ষুদ্র খুচরা বিক্রেতারাও আর্থিকভাবে চাপে পড়ে গেছেন। এরচেয়েও বড় আশঙ্কার বিষয়, ফল ও ফলমূল বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগে যেখানে দৈনিক ২২০ টাকা আদায় করা হতো, সেখানে এখন নেওয়া হচ্ছে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। কোনো রকম সরকারি ঘোষণা ছাড়াই এই অতিরিক্ত আদায়কে ‘অবিচার ও শোষণ’ বলে অভিহিত করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের দাবি, এসব আদায়ের পেছনে একটি প্রভাবশালী মহলের মদদ রয়েছে, যারা ইজারার নামে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাঁধে অনৈতিকভাবে আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাজার ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আশপাশের ছোট বাজারগুলোতে ব্যবসা স্থানান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

সোনার পাড়া বাজারে নিয়মিত আসা ক্রেতারাও জানাচ্ছেন অসন্তোষ। বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই অতিরিক্ত আসিল আদায় অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ইতোমধ্যে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা সোনার পাড়া বাজারে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক একটি ন্যায্য ও সহনশীল আসিল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তারা বলেন, সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ইজারার টাকা আদায় করতে হবে। না হলে এই বাজারেও রুমখা বাজারের মতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক সমাজের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এদিকে বাজারের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন,
৩০ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করি, কিন্তু এমন খারাপ সময় আগে কখনো দেখিনি। সবাই যেন শুধু গরিবের পকেট কাটতেই ব্যস্ত।

স্থানীয়রা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য একটি বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মত মানবিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে একই প্রত্যাশা, আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, যেন কেউ কারও উপর জুলুম না করে এবং আমরা ন্যায্যভাবে জীবিকা চালাতে পারি।

প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে জনস্বার্থ রক্ষা করা। এই মুহূর্তে উখিয়ার সোনার পাড়া বাজারে সৃষ্ট সংকট নিরসনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।

নিউজটি শেয়ার করুন

উখিয়ায় সোনার পাড়া বাজারে ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় : ০৫:০৭:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সোনার পাড়া বাজারে বর্তমানে চলছে এক ধরনের নীরব শোষণ। দীর্ঘদিন ধরেই বাজারটি পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকার হাজারো মানুষের বাণিজ্যিক প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কৃষক, জেলে, দিনমজুর ও সীমিত পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিপণন কেন্দ্র।

কিন্তু বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই বাজারে ইজারাদারদের ‘আসিল আদায়’ কার্যক্রম যেন রূপ নিয়েছে একপ্রকার চাঁদাবাজিতে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পূর্বে দৈনিক ১০০ টাকা করে আদায় করা হলেও, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকা। ফলে অতি ক্ষুদ্র খুচরা বিক্রেতারাও আর্থিকভাবে চাপে পড়ে গেছেন। এরচেয়েও বড় আশঙ্কার বিষয়, ফল ও ফলমূল বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগে যেখানে দৈনিক ২২০ টাকা আদায় করা হতো, সেখানে এখন নেওয়া হচ্ছে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। কোনো রকম সরকারি ঘোষণা ছাড়াই এই অতিরিক্ত আদায়কে ‘অবিচার ও শোষণ’ বলে অভিহিত করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের দাবি, এসব আদায়ের পেছনে একটি প্রভাবশালী মহলের মদদ রয়েছে, যারা ইজারার নামে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাঁধে অনৈতিকভাবে আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাজার ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আশপাশের ছোট বাজারগুলোতে ব্যবসা স্থানান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

সোনার পাড়া বাজারে নিয়মিত আসা ক্রেতারাও জানাচ্ছেন অসন্তোষ। বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই অতিরিক্ত আসিল আদায় অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ইতোমধ্যে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা সোনার পাড়া বাজারে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক একটি ন্যায্য ও সহনশীল আসিল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তারা বলেন, সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ইজারার টাকা আদায় করতে হবে। না হলে এই বাজারেও রুমখা বাজারের মতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক সমাজের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এদিকে বাজারের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন,
৩০ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করি, কিন্তু এমন খারাপ সময় আগে কখনো দেখিনি। সবাই যেন শুধু গরিবের পকেট কাটতেই ব্যস্ত।

স্থানীয়রা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য একটি বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মত মানবিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে একই প্রত্যাশা, আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, যেন কেউ কারও উপর জুলুম না করে এবং আমরা ন্যায্যভাবে জীবিকা চালাতে পারি।

প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে জনস্বার্থ রক্ষা করা। এই মুহূর্তে উখিয়ার সোনার পাড়া বাজারে সৃষ্ট সংকট নিরসনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।