সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নীরবতা
জয়দেবপুরে দখলবাজদের কবলে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ

- আপডেট সময় : ০৪:০০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
মোঃ আনোয়ার হোসেন
গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় রেলওয়ের মূল্যবান জমি একদল প্রভাবশালী দখলবাজের কবলে পড়ে আছে। দখলদাররা রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে দোকানপাট, হোটেল, কাপড়ের মার্কেট, বাজার ইত্যাদি গড়ে তুলে রেলওয়ে পুলিশ, আরএনবি ও রেল স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই নিয়মিত চাঁদা বাজি করছে। প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও উদাসীনতায় এই দখলদাররা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজরা রাজনৈতিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে রেলওয়ের মূল্যবান জায়গা দখল করে দোকান তুলে চাঁদাবাজি করছেন। এর ফলে বড় অঙ্কের রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। এছাড়াও রেললাইনের দুইপাশের একর একর জমি দখল করে ভাসমান দোকান গড়ে তোলার কারণে রেললাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জয়দেবপুর এলাকায় রেলের জমি দখল করে ‘গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের অফিস তৈরি করেছে একদল দখলবাজ। বিভিন্ন সময়ে রেলের জমি প্রভাবশালীরা অবৈধ উপায়ে দখল করে রাজত্ব করছেন। বছরের পর বছর রেলের এই বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জয়দেবপুর রেলস্টেশনের উত্তর পাশে রেলগেইট সংলগ্ন জয়দেবপুর মৌজার আর.এস ৭৪৮ নং দাগের রেলওয়ের এই জমি অবৈধ দখল করেছেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ওরফে মোফাজ্জল চেয়ারম্যান ও তার ভাই শাখাওয়াত, তার অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা- বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খন্দকার রুবেল, রাজু সাহা, বাবুসহ নাম না জানা আরো অনেকেই। ফলের দোকানের চাঁদা তুলে বাবু, কাপড়ের মার্কেটের চাঁদা তুলে বাবুল, চা দোকান ও হোটেলের চাঁদা তুলে শাখাওয়াত এবং প্রতিটি দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চাঁদা তুলে আহসান উল্লাহ। প্রতিদিন এখানে বাজার বসে। এর ফলে পথচারীদের চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এবং সড়কে যানজট সৃষ্টি করে। বিএনপির এই নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় উনার ছেলে শাহরিয়ার মিদু, ভাতিজা রক্তিম, সৌরভ। তাদের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ ও জিম্মি। এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রয়েছে সদর থানাসহ আশপাশের থানায় একাধিক মামলা। থানা পুলিশও তাদের গ্রেফতার করতে ভয় পায়। এই দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মদদে এই দখলবাজরা রেলওয়ের জমি দখল করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয় গত ৫ই ডিসেম্বর একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ দখল নিজ নিজ উদ্যোগে সরাতে নির্দেশ দেয়। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তবে রেলের এমন নির্দেশ পাত্তা দেননি দখলদাররা। উল্টো নতুন করে দখল হয়েছে অনেক জমি।
স্থানীয়দের দাবি, এই পরিস্থিতিতে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের দৃশ্যমান কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। পাশাপাশি অবৈধ সকল ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা সহ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেলওয়ের মূল্যবান জমি উদ্ধার এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দখল প্রতিরোধে প্রশাসনের সক্রিয়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে জানতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফাহিমুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রেলওয়ের জমি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরো পড়ুন –
- বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের অশালীন মন্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সারজিস আলম
- আইনের শিথিলতায় বেড়ে চলেছে সাংবাদিকদের হত্যা, নির্যাতন ও হুমকি
- সাংবাদিক তুহিন হত্যা ও আনোয়ার হোসেনের উপর হামলার প্রতিবাদে ত্রিশালে মানববন্ধন