ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নান্দাইলে রাজনৈতিক পরিচয়ে হচ্ছে দোকানের বন্দোবস্ত, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১১২ বার পড়া হয়েছে

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শতবর্ষী শাইলধরা বাজারে দোকান বরাদ্দের নামে শুরু হয়েছে ‘ভাগবাটোয়ারা’। সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পর প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে লিজ দেওয়ার কথা থাকলেও,এখন পর্যন্ত কোনো দোকান চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।বরং রাজনৈতিক পরিচয় ও অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীরা একাধিক দোকান বরাদ্দ পাওয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।

তাঁদের দাবি—যাঁরা কোনোদিন বাজারে ব্যবসা করেননি,তাঁদেরও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দোকান‘পাইয়ে দেওয়া’ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে,স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা এতে জড়িত।প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় আরও হতাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করছেন,দোকান বরাদ্দ চূড়ান্ত করার আগে উন্মুক্তভাবে একটি তালিকা প্রকাশ করতে হবে।এবং সেই তালিকায় দোকান বরাদ্দের যৌক্তিকতা দেখাতে হবে।

প্রায় ৭০টি দোকান উচ্ছেদ, এরপরেই শুরু হয় অনিশ্চয়তা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ নভেম্বর গাংগাইল ও চন্ডীপাশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নিজ বানাইল ও শাইলধরা মৌজায় অবস্থিত শাইলধরা বাজারে অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন সরকারি রেকর্ডভুক্ত প্রায় ৬৭ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করে।শতবর্ষের পুরনো বাজারটিতে আগে থেকেই গড়ে উঠেছিল প্রায় ৭০টি দোকান। এসব দোকান ভেঙে ফেলার পর ঘোষণা আসে,সরকারি নীতিমালা অনুসারে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে একসনা (১ বছরের) বন্দোবস্ত বা লিজ দেওয়া হবে।

এই খবরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে।বাজারে মসজিদের তত্বাবধানে থাকা ১০টি দোকান বাদ দিয়ে বাকি দোকানগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়।জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তালিকা পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলমান।তবে তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই বাজারে ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক তৎপরতা,আর শুরু হয় দোকান নিয়ে দালালদের দৌড়ঝাঁপ।

বংশপরম্পরায় ব্যবসা,তবু দোকান অনিশ্চিত!

স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন,“আমার বাপ-দাদা এই বাজারে ব্যবসা করেছে, আমিও করছি।আমরা নিয়ম মেনে আবেদন করেছি।কিন্তু শুনছি,যারা কোনোদিন এই বাজারে ব্যবসা করেনি,তারাও টাকা দিয়ে লিজ নিতে চাচ্ছে।এটা আমাদের সঙ্গে অন্যায়।”

একই অভিযোগ করেন বাজারের আরেক পুরাতন ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া।তাঁর বক্তব্য,“আমি ১৫ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করছি।বছরে বছরে দোকান ভাড়া দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছি।এখন শুনি—যারা কখনো ব্যবসা করেনি,তারাই টাকা দিয়ে দোকান নিচ্ছে।আর আমাদের নাম বাদ যাচ্ছে।এটা মেনে নেবো না। দোকান না পেলে আমরা রাস্তায় নামব,বাজার ছেড়ে দেবো না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন,
“যারা বিএনপির সঙ্গে রাজনীতির ‘লিংক’ রাখে,তারা দুই-তিনটা করে দোকান নিয়ে নিচ্ছে।মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হচ্ছে। প্রশাসনের কিছু লোকও সেটা জানে,কিন্তু দেখেও চুপ।আমরা যারা প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,আমাদের গলা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও বলেন,“এখানে একটি চক্র তৈরি হয়েছে।দোকান বরাদ্দের নামে তারা লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছে।দোকান বরাদ্দ না হলে আমরা শুধু ব্যবসা হারাবো না,আমাদের পরিবারও পথে বসবে।আমরা আর বসে থাকবো না।”

জনগণের হুঁশিয়ারি: ‘দোকান না পেলে বাজার বন্ধ করে দেবো’

শুধু ব্যবসায়ী স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন,“প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দোকান না পেলে এই বাজার আর চলতে দেওয়া হবে না।এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন হবে।”

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন,“উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা শাইলধরা বাজারে সার্বিয়ার দিয়ে মেপে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়েছে।
কোনো দোকান এখনো বরাদ্দ হয়নি। তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে।প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে কাউকে লিজ দেওয়া হবে না। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।”

বক্তব্য পাওয়া যায়নি উপজেলা প্রশাসনের

এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সবশেষে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি

নিউজটি শেয়ার করুন

নান্দাইলে রাজনৈতিক পরিচয়ে হচ্ছে দোকানের বন্দোবস্ত, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শতবর্ষী শাইলধরা বাজারে দোকান বরাদ্দের নামে শুরু হয়েছে ‘ভাগবাটোয়ারা’। সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পর প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে লিজ দেওয়ার কথা থাকলেও,এখন পর্যন্ত কোনো দোকান চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।বরং রাজনৈতিক পরিচয় ও অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীরা একাধিক দোকান বরাদ্দ পাওয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।

তাঁদের দাবি—যাঁরা কোনোদিন বাজারে ব্যবসা করেননি,তাঁদেরও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দোকান‘পাইয়ে দেওয়া’ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে,স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা এতে জড়িত।প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় আরও হতাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করছেন,দোকান বরাদ্দ চূড়ান্ত করার আগে উন্মুক্তভাবে একটি তালিকা প্রকাশ করতে হবে।এবং সেই তালিকায় দোকান বরাদ্দের যৌক্তিকতা দেখাতে হবে।

প্রায় ৭০টি দোকান উচ্ছেদ, এরপরেই শুরু হয় অনিশ্চয়তা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ নভেম্বর গাংগাইল ও চন্ডীপাশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নিজ বানাইল ও শাইলধরা মৌজায় অবস্থিত শাইলধরা বাজারে অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন সরকারি রেকর্ডভুক্ত প্রায় ৬৭ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করে।শতবর্ষের পুরনো বাজারটিতে আগে থেকেই গড়ে উঠেছিল প্রায় ৭০টি দোকান। এসব দোকান ভেঙে ফেলার পর ঘোষণা আসে,সরকারি নীতিমালা অনুসারে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে একসনা (১ বছরের) বন্দোবস্ত বা লিজ দেওয়া হবে।

এই খবরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে।বাজারে মসজিদের তত্বাবধানে থাকা ১০টি দোকান বাদ দিয়ে বাকি দোকানগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়।জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তালিকা পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলমান।তবে তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই বাজারে ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক তৎপরতা,আর শুরু হয় দোকান নিয়ে দালালদের দৌড়ঝাঁপ।

বংশপরম্পরায় ব্যবসা,তবু দোকান অনিশ্চিত!

স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন,“আমার বাপ-দাদা এই বাজারে ব্যবসা করেছে, আমিও করছি।আমরা নিয়ম মেনে আবেদন করেছি।কিন্তু শুনছি,যারা কোনোদিন এই বাজারে ব্যবসা করেনি,তারাও টাকা দিয়ে লিজ নিতে চাচ্ছে।এটা আমাদের সঙ্গে অন্যায়।”

একই অভিযোগ করেন বাজারের আরেক পুরাতন ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া।তাঁর বক্তব্য,“আমি ১৫ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করছি।বছরে বছরে দোকান ভাড়া দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছি।এখন শুনি—যারা কখনো ব্যবসা করেনি,তারাই টাকা দিয়ে দোকান নিচ্ছে।আর আমাদের নাম বাদ যাচ্ছে।এটা মেনে নেবো না। দোকান না পেলে আমরা রাস্তায় নামব,বাজার ছেড়ে দেবো না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন,
“যারা বিএনপির সঙ্গে রাজনীতির ‘লিংক’ রাখে,তারা দুই-তিনটা করে দোকান নিয়ে নিচ্ছে।মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হচ্ছে। প্রশাসনের কিছু লোকও সেটা জানে,কিন্তু দেখেও চুপ।আমরা যারা প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,আমাদের গলা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও বলেন,“এখানে একটি চক্র তৈরি হয়েছে।দোকান বরাদ্দের নামে তারা লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছে।দোকান বরাদ্দ না হলে আমরা শুধু ব্যবসা হারাবো না,আমাদের পরিবারও পথে বসবে।আমরা আর বসে থাকবো না।”

জনগণের হুঁশিয়ারি: ‘দোকান না পেলে বাজার বন্ধ করে দেবো’

শুধু ব্যবসায়ী স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন,“প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দোকান না পেলে এই বাজার আর চলতে দেওয়া হবে না।এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন হবে।”

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন,“উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা শাইলধরা বাজারে সার্বিয়ার দিয়ে মেপে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়েছে।
কোনো দোকান এখনো বরাদ্দ হয়নি। তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে।প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে কাউকে লিজ দেওয়া হবে না। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।”

বক্তব্য পাওয়া যায়নি উপজেলা প্রশাসনের

এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সবশেষে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি