ঢাকা ০৭:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনা পালানোর আগে যা ঘটেছিল গণভবনে

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

জুলাই আন্দোলনের গণভবনে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় কাটানো শেষ দুই দিনে শেখ হাসিনা যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন। ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের গোপন বৈঠক হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল করা এক নথিতে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে।

৪ আগস্ট দুপুর থেকে ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত গণভবনে চলা নানা বৈঠকে শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে বলেন। নথিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, যা হওয়ার হবে, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না।

 

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ

ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা শক্ত হয়ে বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দিলে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী এতে সমর্থন জানিয়ে বলেন, গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললেই বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে। এছাড়া তারেক সিদ্দিকী বিমানবাহিনীকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথা বলায় বৈঠকে উপস্থিত এক সামরিক কর্মকর্তা ভীষণ রেগে যান।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, এই লোকটি আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে। ঠিক এ সময় এক অপরিচিত ব্যক্তি গণভবনে প্রবেশ করলে শেখ হাসিনা সভা শেষ করেন।

ট্রাইব্যুনাল নথি অনুসারে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা পর্যন্ত পা ধরে অনুরোধ করেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য, তবে তাতেও রাজি হননি তিনি। পরে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জয় মাকে পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হন এবং এরপরই শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন একটি বিদায়ি ভাষণ টেলিভিশনে প্রচার করতে, তবে সামরিক কর্মকর্তারা তা অনুমতি দেননি। ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেন এবং পরে ভারতে পালিয়ে যান। গণভবনে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় কাটানো শেষ দুই দিনে তিনি যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন।

নথিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে অপরাপর আসামিরা ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। গুলিতে স্কুলছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিয়ার শহিদ হন।

নথিতে আরও বলা হয়, ১৪ জুলাই রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। হামলার সুযোগ করে দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে, যা বিশ্বের যে কোনো আদালতে দাখিল করা হলে তাকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

 

 

 

প্রলয়/তাসনিম তুবা 

নিউজটি শেয়ার করুন

শেখ হাসিনা পালানোর আগে যা ঘটেছিল গণভবনে

আপডেট সময় : ১২:০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

জুলাই আন্দোলনের গণভবনে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় কাটানো শেষ দুই দিনে শেখ হাসিনা যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন। ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের গোপন বৈঠক হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল করা এক নথিতে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে।

৪ আগস্ট দুপুর থেকে ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত গণভবনে চলা নানা বৈঠকে শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে বলেন। নথিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, যা হওয়ার হবে, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না।

 

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ

ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা শক্ত হয়ে বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দিলে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী এতে সমর্থন জানিয়ে বলেন, গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললেই বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে। এছাড়া তারেক সিদ্দিকী বিমানবাহিনীকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথা বলায় বৈঠকে উপস্থিত এক সামরিক কর্মকর্তা ভীষণ রেগে যান।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, এই লোকটি আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে। ঠিক এ সময় এক অপরিচিত ব্যক্তি গণভবনে প্রবেশ করলে শেখ হাসিনা সভা শেষ করেন।

ট্রাইব্যুনাল নথি অনুসারে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা পর্যন্ত পা ধরে অনুরোধ করেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য, তবে তাতেও রাজি হননি তিনি। পরে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জয় মাকে পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হন এবং এরপরই শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন একটি বিদায়ি ভাষণ টেলিভিশনে প্রচার করতে, তবে সামরিক কর্মকর্তারা তা অনুমতি দেননি। ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেন এবং পরে ভারতে পালিয়ে যান। গণভবনে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় কাটানো শেষ দুই দিনে তিনি যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন।

নথিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে অপরাপর আসামিরা ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। গুলিতে স্কুলছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিয়ার শহিদ হন।

নথিতে আরও বলা হয়, ১৪ জুলাই রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। হামলার সুযোগ করে দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে, যা বিশ্বের যে কোনো আদালতে দাখিল করা হলে তাকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

 

 

 

প্রলয়/তাসনিম তুবা