ঢাকা ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুলেটবিদ্ধ মাহমুদুলের যন্ত্রণার অবসান হবে কবে?

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৫৭ বার পড়া হয়েছে

রফিকুল ইসলাম সুইট

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু হাসান বুলেটবিদ্ধ হয়েও অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন। কিন্তু শরীরে বুলেট রয়ে গেছে। তাই এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের শিক্ষার্থী মো. মাহমুদুল হাসান (১৯) গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে তিনি গুলিতে আহত হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুল মান্নান ও গৃহিণী মোছা. মুসলিমা খাতুনের ঘরে ২০০৪ সালের ২২ এপ্রিল জন্ম নেন মো. মাহমুদুল হাসান।
তার পিতা মাওলানা আব্দুল মান্নান একটি মসজিদের ইমাম। তিনভাই এক বোনের মধ্যে মাহমুদুল সবার ছোট। তিনি ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গত ৪ আগস্ট বেলা ১১ টার পর এডওয়ার্ড কলেজ গেট থেকে বৈষম্য বিরোধী মিছিল বের হয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের পাশে আব্দুল হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান করে। দুপুর ১২ টার দিকে সমাবেশ স্থলের উত্তর দিক থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুলি শুরু করে। এ সময় নিলয় ও জাহিদুল শহিদ হন। শহিদ জাহিদুলের লাশ উদ্ধারের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন হাসান। আহত হাসান কে প্রথমে বেসরকারি শিমলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে হাসানের শরীর থেকে বুলেট বের করতে না পেরে পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন হাসান। এখনও তার শরীর থেকে বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। ভীষণ যন্ত্রণা তার শরীরে। তিনি এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান। কিন্তু কবে আসবে এই মুক্তি তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে আহত মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলাম। গত ৪ আগষ্ট ১১ টার দিকে আমি এডওয়ার্ড কলেজ গেটে অবস্থান করি। তারপর বৈষম্য বিরোধী বিশাল মিছিলে যোগ দিয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের পাশে যাই। দুপুর ১২ টার দিকে সমাবেশ স্থলের উত্তরে সদর থানার দিক থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় নিলয় ও জাহিদুল শহিদ হন। আহত জাহিদুলকে উদ্ধার করতে গেলে একটি বুলেট এসে আমার বুকের ডান পাশে লাগে। এ সময় আন্দোলনরত সহযোদ্ধারা আমাকে উদ্ধার করে পাশের বেসরকারি শিমলা হাসপাতালে ভর্তি করে। এখানে আমার শরীর থেকে বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। এরপর আমাকে পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। কিন্ত আমার শরীর থেকে বুলেট বের করা এখনও সম্ভব হয়নি। প্রায়ই ব্যথা হয়। আমাদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতের এবং আন্দোলনকারীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। যারা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিচার চাই।

 

এ ব্যাপারে আহত মাহমুদুল হাসানের পিতা মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ছেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ায় আমি খুশি। আমার ছেলে বুকে গুলি লেগে আহত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে বেঁেচ আছে। সিএমএইচ এ চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের সন্তানেরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিহত ও আহত হয়েছে। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে যেন আর কোন বৈষম্য না থাকে এটাই আমার চাওয়া। আহতদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতের এবং আন্দোলনকারীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকার যেন সবকিছু যথাযথ মূল্যায়ন করে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে সে দাবি আমাদের সকলের।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বুলেটবিদ্ধ মাহমুদুলের যন্ত্রণার অবসান হবে কবে?

আপডেট সময় : ১২:০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

রফিকুল ইসলাম সুইট

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু হাসান বুলেটবিদ্ধ হয়েও অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন। কিন্তু শরীরে বুলেট রয়ে গেছে। তাই এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের শিক্ষার্থী মো. মাহমুদুল হাসান (১৯) গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে তিনি গুলিতে আহত হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুল মান্নান ও গৃহিণী মোছা. মুসলিমা খাতুনের ঘরে ২০০৪ সালের ২২ এপ্রিল জন্ম নেন মো. মাহমুদুল হাসান।
তার পিতা মাওলানা আব্দুল মান্নান একটি মসজিদের ইমাম। তিনভাই এক বোনের মধ্যে মাহমুদুল সবার ছোট। তিনি ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গত ৪ আগস্ট বেলা ১১ টার পর এডওয়ার্ড কলেজ গেট থেকে বৈষম্য বিরোধী মিছিল বের হয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের পাশে আব্দুল হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান করে। দুপুর ১২ টার দিকে সমাবেশ স্থলের উত্তর দিক থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুলি শুরু করে। এ সময় নিলয় ও জাহিদুল শহিদ হন। শহিদ জাহিদুলের লাশ উদ্ধারের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন হাসান। আহত হাসান কে প্রথমে বেসরকারি শিমলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে হাসানের শরীর থেকে বুলেট বের করতে না পেরে পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন হাসান। এখনও তার শরীর থেকে বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। ভীষণ যন্ত্রণা তার শরীরে। তিনি এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান। কিন্তু কবে আসবে এই মুক্তি তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে আহত মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলাম। গত ৪ আগষ্ট ১১ টার দিকে আমি এডওয়ার্ড কলেজ গেটে অবস্থান করি। তারপর বৈষম্য বিরোধী বিশাল মিছিলে যোগ দিয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের পাশে যাই। দুপুর ১২ টার দিকে সমাবেশ স্থলের উত্তরে সদর থানার দিক থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় নিলয় ও জাহিদুল শহিদ হন। আহত জাহিদুলকে উদ্ধার করতে গেলে একটি বুলেট এসে আমার বুকের ডান পাশে লাগে। এ সময় আন্দোলনরত সহযোদ্ধারা আমাকে উদ্ধার করে পাশের বেসরকারি শিমলা হাসপাতালে ভর্তি করে। এখানে আমার শরীর থেকে বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। এরপর আমাকে পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। কিন্ত আমার শরীর থেকে বুলেট বের করা এখনও সম্ভব হয়নি। প্রায়ই ব্যথা হয়। আমাদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতের এবং আন্দোলনকারীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। যারা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিচার চাই।

 

এ ব্যাপারে আহত মাহমুদুল হাসানের পিতা মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ছেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ায় আমি খুশি। আমার ছেলে বুকে গুলি লেগে আহত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে বেঁেচ আছে। সিএমএইচ এ চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের সন্তানেরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিহত ও আহত হয়েছে। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে যেন আর কোন বৈষম্য না থাকে এটাই আমার চাওয়া। আহতদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতের এবং আন্দোলনকারীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকার যেন সবকিছু যথাযথ মূল্যায়ন করে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে সে দাবি আমাদের সকলের।