সেফ হোম থেকে মুক্ত হলেও অপহরণসহ ধর্মান্তরের রহস্যের জট খোলেনি

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রাম থেকে অপহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠা সেই কিশোরী (১৬) সেইফ হোম থেকে মুক্ত হয়েছে। থানায় আত্মসমর্পনের পর বাবা-মায়ের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানালে সেইফ হোমে ঠাই হয় কিশোরীর। প্রায় ৫ মাস পর সেইফ হোম থেকে বাড়ি গেলেও অপহরণসহ ধর্মান্তরের রহস্যের জট খুলেনি। মুক্ত হওয়ার পর যদিও ওই কিশোরীকে তার পরিবার সংবাদকর্মীসহ স্থানীয়দের সামনে কথা বলতে দেয়া হয়নি অজ্ঞাত কারণে। কিশোরীর পরিবার ইতিপুর্বে তাকে (কিশোরীকে) খ্রিস্টান ধর্মে দিক্ষিত করার লক্ষ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে অভিযোগ তুলেছিলেন সংবাদকর্মীদের কাছে, যা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো এলাকায়।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ০৪ এপ্রিল ওই কিশোরীকে তার বাড়ীর সামনে থেকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। নিখোজের ২০ দিন পর এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামী করে ২৫ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে কিশোরীর মা রওশনারা বেগম বাদী হয়ে মামলা দয়ের করেন। কিশোরীর প্রতিবেশি শরিফুল ইসলাম বাবু, আপন মামী আম্বিয়া বেগম, স্কুল পড়ুয়া মামাতো ভাই সিয়াম ব্যাপারিসহ সহযোগি বিল্লাল, রুবেল এবং আলম মিয়াকে, তাকে (কিশোরী) জোরপূর্বক অপহরণ ও সহায়তা করেছে উল্লেখ করে আসামী করা হয়।

আদালতের নির্দেশে ০২ মে মামলাটি কোতয়ালী থানায় নথিভুক্ত করা হয়। মামলার অভিযোগে শরিফুল ইসলাম বাবুকে প্রধান আসামী করা হয় এবং ওই কিশোরীর কলেজে যাতায়াতের পথে প্রতিবেশি শরিফুল ইসলাম বাবু কু-প্রস্তাব দিতেন বলেও উল্লেখ করা হয়।মামলা দায়েরের পর ১৮ মে ওই কিশোরী মামীর সাথে কোতয়ালী থানায় হাজির হলে তাকে সেইফ হোমে পাঠানো হয়। জবান বন্দিতে তিনি (কিশোরী) মামীর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় মা বকা দিতো উল্লেখ করেন এবং মায়ের বকার কারণেই স্বেচ্ছায় মামীর কাছে চলে গিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।মামলার আইনজীবি গোলাম মনসুর নান্নু জানান, ১৮ মে আদালতে উপস্থাপনের পর বাবা মায়ের জিম্মায় দিতে চাইলে ওই কিশোরী যেতে অস্বিকৃতী জানায়। এসময় তার মা রওশনারা বেগম তাকে (কিশোরী) জোরপুর্বক বয়স্ক ব্যক্তির সাথে বিবাহ দেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানালে আদালত তাকে সেইফ হোমে পাঠায়। পরে একাধিকবার আদালতের ধার্য তারিখে আদালত মায়ের জিম্মায় পাঠাতে চাইলে সে (কিশোরী) যেতে অস্বিকৃতি জানায়।

এদিকে ওই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে শরিফুল ইসলাম বাবু ও তার সাথী সঙ্গীরা, তাকে (কিশোরী) ফুসলিয়ে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাবী করা হয়। এমনকি আরো অনেককে একইভাবে প্রলোভন দেখিয়ে খ্রিস্টান ধর্মে দিক্ষিত করার উদ্ধেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তাদেরকে একটি “বিশেষ চক্র” ট্যাগ দেয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এলাকাবাসীর মধ্যে। এমনকি জনরোষ তৈরি হলে গা ঢাকা দেন শরিফুল ইসলাম বাবু। এরই মধ্যে গত ০৬ অক্টোবর ওই কিশোরীকে পিতার জিম্মায় সেফ হোম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তার মুক্তির খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীসহ উৎসুকরা প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে ওই কিশোরীর বাড়ীতে গেলেও অজ্ঞাত কারনে তাকে সামনে আনা হয়নি, এমনকি কোনো ধরনের কথাও বলতে দেয়া হয়নি।

এসময় পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান বাবা আয়ুব আলী ও মা রওশনারা বেগম। এসময় তারা বারবার বলেন, মেয়ে পেয়ে গেছি আমাদের আর কোনো অভিযোগ নেই। এ মামলার এক নম্বর আসামী শরিফুল ইসলাম বাবু জানান, ওই কিশোরীর মা ও বাবার অপপ্রচারের কারণে তিনি নিজ এলাকায় থাকতে পারছেন না। প্রাণ সংশয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে কোনো সময় তার উপর হামলা হতে পারে বলে জানান তিনি। বাবু এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন।আর কিশোরীর মামি আম্বিয়া বেগম জানান, মামলার বাদী ও কিশোরীর মা রওশনারা বেগম খুবই দূধর্ষ প্রকৃতির মানুষ, তিনি তার আপন ননদ। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তিনি একই উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় শশুর বাড়ীর লোকজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় জামাইকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে বসবাস করছেন। তিনি দাবী করেন, তার (রওশনারা) অত্যাচারে বাড়ী-ঘর ফেলে তারা ঢাকাতে চলে যান।

তিনি বলেন, ভিকটিম মেয়েটিকে ছোটো বেলা থেকেই কোলেপিঠে করে মানুষ করায় তার সাথে সখ্যতা বেশী। আর মা রওশনারা তার মেয়েটির সাথে বকাবাজি এবং অসদাচারণসহ ইচ্ছার বিপরীতে নানা ধরনের কাজ করানোর চেষ্টা করায় মেয়েটি আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলো মায়ের উপর। ওই দিনও বকা দেয়ায় সে রাগান্বিত হয়ে আমার কাছে ঢাকায় চলে যায়। মামলা হওয়ার পর তিনি নিজে সাথে করে থানায় কিশোরীকে উপস্থাপন করেন বলেও জানান।

তিনি আরো বলেন, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে রওশনারা (কিশোরীর মা) আমাদের সবাইকে খ্রিস্টান ট্যাগ দিয়েছেন। এতে আমরা সমাজের চোখে ঘৃণিত হচ্ছি এবং বর্তমানে প্রাণ সংশয়ে আছি। এ ঘটনায় তিনি সুষ্ঠু প্রতিকার দাবী করেন। আর ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল জানান, খ্রিস্টান ধর্মে দিক্ষিত করার কোনো অভিযোগ কেউ করেনি পুলিশের কাছে। তবে অপহরন মামলা হয়েছিলো। ওই কিশোরীকে সেফ হোম থেকে বাবার জিম্মায় দেয়া হয়েছে, তার (কিশোরীর) সাথে কথা বলে ব্যতিক্রম কিছু থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রলয় ডেস্ক

Recent Posts

১৮ বছর আগে বরখাস্ত ৩২৮ জনকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ

কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে। এই রায় আপিল বিভাগের ১৭…

1 hour ago

সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু গ্রেপ্তার

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল…

1 hour ago

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক গুরুতর অসুস্থ

আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, কবি ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি…

1 hour ago

সাবেক ডিবি প্রধান হারুনসহ ১৮ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদসহ ১৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে বিনা…

1 hour ago

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের চূড়ান্ত প্যানেলে অন্য যারা আছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ইনক্লুসিভ তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে…

1 hour ago

মাছ রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মাছ রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য…

1 hour ago

This website uses cookies.