জাল চিকিৎসার কাগজ তৈরি করার অভিযোগ গাজীপুরে সরকারী হাসপাতালের দালালদের বিরুদ্ধে

- আপডেট সময় : ০৭:১০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
- / ১৪৮ বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে জাল চিকিৎসার কাগজ তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে রাকিব নামের এক দালালের বিরুদ্ধে। গাজীপুর আদালতে জাল চিকিৎসার কাগজ দাখিল করে যৌতুকের দাবিতে সাধারণ ও গুরুতর জখমের অপরাধ দেখিয়ে ভুক্তভোগী সাদ্দামের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক, নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতারক চক্রের নারী সদস্য।
অভিযোগকারী সাদ্দাম হলেন- গাজীপুরের পূবাইল থানার হায়দরাবাদ এলাকার আঃ বারেক হাওলাদারের ছেলে। অভিযূক্ত রাকিব কোয়ালিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মার্কেটিং এর চাকুরী করার পাশাপাশি সরকারী হাসপাতালে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, গত ০৫ ই মে ২০২৪ সালে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ইসলামীক শরীয়ত মোতাবেক এই নারীর সাথে ভুক্তভোগী সাদ্দামের বিবাহ হয়। তাদের ০১ জন মেয়ে সন্তান রয়েছে। ঘর সংসার করা কালে এই নারী সাদ্দামের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে সাধারণ ও গুরুতর জখমের অপরাধ দেখিয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫০/২৫ নং সিপি মামলা দায়ের করলে বিচারক এ.কিউ.এম নাছির উদ্দীন কোনাবাড়ি থানার ওসিকে এই ঘটনায় সিপি মামলাটি এফআইআর করার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত রবিবার (০২ মার্চ ২০২৫) জিএমপি কোনাবাড়ি থানায় ১নং মামলাটি রুজু করা হয়। এর আগে এই নারী একই অপরাধ দেখিয়ে যৌতুক আইনে কুড়িগ্রাম জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতে ২০২৪ সালে ১৭১ নং সিআর মামলা দায়ের করে।
ভুক্তভোগী ও থানা সূত্রে জানা যায়, এই নারী সাদ্দামের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টাসহ মারপিটে সাধারণ ও গুরুতর জখমের অপরাধ দেখিয়ে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসার জাল কাগজ বা রোগীর ছাড়পত্র দাখিল করে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫০/২৫ নং সিপি মামলাটি দায়ের করেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে এই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক শেখ ফরহাদ জখমীর চিকিৎসা সনদপত্রে উল্লেখ করেন, “ভিকটিম এই নারী গত ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ রেজিষ্ট্রেশন ৪২২৩০৫ নং মূলে উক্ত জখমীর নাম পুলিশ কেইস রেজিস্ট্রারের অন্তর্ভুক্ত নাই। বিধায় জখমীর চিকিৎসা সনদপত্র প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এঘটনায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি মূলক অভিযূক্ত দালাল রাকিবের কথোপকথনের অডিও কল রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, জাল চিকিৎসার ছাড়পত্র তৈরি করা যাবে কিন্তু সরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে আগের তারিখে অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কিছুদিন আগে এই দালালের বন্ধু শিশিরের বান্ধবীর স্বামীকে ফাসানোর জন্য ৯ হাজার টাকার বিনিময়ে চিকিৎসার ছাড়পত্র তৈরি করে দিয়েছিলাম। জাল চিকিৎসার কাগজ তৈরি করে শিশিরসহ তার বান্ধবী বিপাকে পড়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে প্রতিনিয়ত দালালরা রোগীদের হয়রানি করে থাকে। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেক অসহায় রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসন এই দালালদের অবাধ বিচরণ প্রতিরোধ করতে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয় নি। দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।
নারী নির্যাতনের মামলার বাদী প্রতারক এই নারীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে উনি গাজীপুর ও কুড়িগ্রামে একই ঘটনা নিয়ে পৃথক পৃথক যৌতুক, নারী নির্যাতনের মামলা করে সাদ্দামের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা আদায় করার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু চিকিৎসার জাল কাগজ তৈরি করার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রতিবেদককে মিথ্যা মামলা দায়ের করার হুমকী প্রদান করে।
এবিষয়ে গাজীপুরের কোয়ালিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার টিটু রায় জানান, রাকিব উনার অফিসে চাকুরী করত। কিছুদিন যাবত অফিসে আসেনা।
এবিষয়ে কোনাবাড়ি থানার এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, উনি নারী নির্যাতন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ভিকটিম এই নারীর জখম সংক্রান্তে দাখিলকৃত চিকিৎসার কাগজটি মিথ্যা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দ্বারা জানা গিয়েছে, এই নারী আদালতে দাখিলকৃত হাসপাতালের চিকিৎসার কাগজটি সঠিক নয়