ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজাবাসীদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তুতি

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে অধিবাসীদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, রোববার (১৭ আগস্ট) থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেসামরিকদের জন্য তাঁবু ও আশ্রয় সামগ্রী জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কেরেম শালোম সীমান্তপথ দিয়ে এসব রসদ পাঠানো হবে বলেও আইডিএফ নিশ্চিত করেছে।

এর আগে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটিকে হামাসের শেষ ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করে নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অভিযান শুরু হওয়ার আগেই বেসামরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এখনো এ স্থানান্তর কার্যক্রম কোথায় এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘ এ পরিকল্পনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় বাস্তবে কোথাও নিরাপদ নয়, ফলে মানুষকে দক্ষিণে সরানো মানেই তাদের ভোগান্তি আরও বাড়ানো। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ এ উদ্যোগকে ‘গাজা দখলের অংশ’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে প্রকাশ্য উপহাস’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, ক্ষুধা, হত্যাযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যেই মানুষকে পালাতে বাধ্য করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

গত এক সপ্তাহ ধরে গাজা সিটির জেইতুন ও শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক ও বিমান হামলা তীব্রতর হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায়ও বিমান হামলা চালানো হয়, যেখানে এক দম্পতি ও তাদের আড়াই মাস বয়সী শিশু নিহত হয়েছেন।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৮২৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২৫১ জন অপুষ্টিজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা গেছেন আরও ১১ জন, যাদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে।

চিকিৎসা ব্যবস্থার ভয়াবহ অবস্থা নিয়েও সতর্ক করেছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ ও খাবারের অভাবে অন্তত ২০০ রোগীর জীবন সংকটাপন্ন। সংক্রমণ ঠেকাতে না পারায় প্রতিদিন বাড়ছে অঙ্গচ্ছেদের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে অন্তত ১৪ হাজার ৮০০ রোগীর জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার প্রয়োজন, যা গাজায় মেটানো সম্ভব নয়। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বরশ জানিয়েছেন, চলমান খাদ্য সংকটের কারণে প্রায় ৪০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের স্থানান্তর পরিকল্পনা কার্যকর হলে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহল।

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজাবাসীদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তুতি

আপডেট সময় : ০১:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে অধিবাসীদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, রোববার (১৭ আগস্ট) থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেসামরিকদের জন্য তাঁবু ও আশ্রয় সামগ্রী জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কেরেম শালোম সীমান্তপথ দিয়ে এসব রসদ পাঠানো হবে বলেও আইডিএফ নিশ্চিত করেছে।

এর আগে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটিকে হামাসের শেষ ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করে নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অভিযান শুরু হওয়ার আগেই বেসামরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এখনো এ স্থানান্তর কার্যক্রম কোথায় এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘ এ পরিকল্পনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় বাস্তবে কোথাও নিরাপদ নয়, ফলে মানুষকে দক্ষিণে সরানো মানেই তাদের ভোগান্তি আরও বাড়ানো। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ এ উদ্যোগকে ‘গাজা দখলের অংশ’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে প্রকাশ্য উপহাস’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, ক্ষুধা, হত্যাযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যেই মানুষকে পালাতে বাধ্য করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

গত এক সপ্তাহ ধরে গাজা সিটির জেইতুন ও শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক ও বিমান হামলা তীব্রতর হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায়ও বিমান হামলা চালানো হয়, যেখানে এক দম্পতি ও তাদের আড়াই মাস বয়সী শিশু নিহত হয়েছেন।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৮২৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২৫১ জন অপুষ্টিজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা গেছেন আরও ১১ জন, যাদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে।

চিকিৎসা ব্যবস্থার ভয়াবহ অবস্থা নিয়েও সতর্ক করেছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ ও খাবারের অভাবে অন্তত ২০০ রোগীর জীবন সংকটাপন্ন। সংক্রমণ ঠেকাতে না পারায় প্রতিদিন বাড়ছে অঙ্গচ্ছেদের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে অন্তত ১৪ হাজার ৮০০ রোগীর জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার প্রয়োজন, যা গাজায় মেটানো সম্ভব নয়। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বরশ জানিয়েছেন, চলমান খাদ্য সংকটের কারণে প্রায় ৪০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের স্থানান্তর পরিকল্পনা কার্যকর হলে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহল।