ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার চান সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫৯ বার পড়া হয়েছে

প্রলয় ডেস্ক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলি ও প্রাণহানির ঘটনাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে হত্যা মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবদার জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সদ্য সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

জননিরাপত্তা বিভাগের বর্তমান সিনিয়র সচিব ড. আব্দুল মোমেনের কাছে তিনি আবেদন পাঠিয়েছেন। তার নামে এখন পর্যন্ত তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।

হাসিনার পতনের পর গত ১৪ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে জুলাই গণহত্যার জন্য তাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। ভোটারবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার অস্বাভাবিক দেখানোর পেছনেও তার হাত ছিল।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সচিব জাহাংগীর আবেদনে লিখেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। এটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারীদের পরিবার বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কর্তৃক বিভিন্ন থানা ও আদালতে বেশকিছু ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সিভিল প্রশাসনের অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে লালবাগ, যাত্রাবাড়ী ও তেজগাঁও থানায় করা মামলায় আমার নাম রয়েছে।

তিনি লেখেন, মামলার কারণে আমি, আমার পরিবারের সদস্যরা সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এবং আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি। আমি হৃদরোগসহ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে একটি রিং পরানো হয়েছে এবং আরও একটিতে ১৫ শতাংশ ব্লক রয়েছে।

ছাত্র-জনতা হত্যাকে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক এসব হতাহতের ঘটনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাকেও খুনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঘটে যাওয়া হতাহতের বিষয়গুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে সাচিবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করার সুযোগ একজন সচিব হিসেবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়। ফলে মামলাগুলোর কোনোটিতে আমার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনকালে জননিরাপত্তা সচিব হিসেবে জাহাংগীরের দায় আছে কি না, সেটি বর্তমানে দায়িত্বশীলরা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবেন বলে আশা করছি। এর আগে স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হবে না বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের ‘একদলীয়’ প্রহসনের নির্বাচনে ভোটের হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তখন নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি মো. জাহাংগীর আলম।

বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোটকে ৪২ শতাংশ দেখিয়েছিলেন ইসি সচিব জাহাংগীর। ভোটের পর দিন অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ওই সময় পাশে বসা ইসি জাহাংগীর আলম সঙ্গে সঙ্গে বলেন, স্যার এটা ৪২ শতাংশ হবে।

এ সময় সিইসি বলেন, তাই নাকি? ও আচ্ছা, তাহলে ৪২ শতাংশই পড়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচার করে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। বিতর্কিত এ ভোটের হিসাব নিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কারণ সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল একেবারেই ফাঁকা। সাধারণ মানুষ ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। সূত্র: কালবেলা

নিউজটি শেয়ার করুন

মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার চান সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর

আপডেট সময় : ১২:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রলয় ডেস্ক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলি ও প্রাণহানির ঘটনাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে হত্যা মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবদার জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সদ্য সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

জননিরাপত্তা বিভাগের বর্তমান সিনিয়র সচিব ড. আব্দুল মোমেনের কাছে তিনি আবেদন পাঠিয়েছেন। তার নামে এখন পর্যন্ত তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।

হাসিনার পতনের পর গত ১৪ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে জুলাই গণহত্যার জন্য তাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। ভোটারবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার অস্বাভাবিক দেখানোর পেছনেও তার হাত ছিল।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সচিব জাহাংগীর আবেদনে লিখেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। এটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারীদের পরিবার বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কর্তৃক বিভিন্ন থানা ও আদালতে বেশকিছু ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সিভিল প্রশাসনের অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে লালবাগ, যাত্রাবাড়ী ও তেজগাঁও থানায় করা মামলায় আমার নাম রয়েছে।

তিনি লেখেন, মামলার কারণে আমি, আমার পরিবারের সদস্যরা সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এবং আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি। আমি হৃদরোগসহ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে একটি রিং পরানো হয়েছে এবং আরও একটিতে ১৫ শতাংশ ব্লক রয়েছে।

ছাত্র-জনতা হত্যাকে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক এসব হতাহতের ঘটনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাকেও খুনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঘটে যাওয়া হতাহতের বিষয়গুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে সাচিবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করার সুযোগ একজন সচিব হিসেবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়। ফলে মামলাগুলোর কোনোটিতে আমার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনকালে জননিরাপত্তা সচিব হিসেবে জাহাংগীরের দায় আছে কি না, সেটি বর্তমানে দায়িত্বশীলরা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবেন বলে আশা করছি। এর আগে স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হবে না বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের ‘একদলীয়’ প্রহসনের নির্বাচনে ভোটের হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তখন নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি মো. জাহাংগীর আলম।

বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোটকে ৪২ শতাংশ দেখিয়েছিলেন ইসি সচিব জাহাংগীর। ভোটের পর দিন অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ওই সময় পাশে বসা ইসি জাহাংগীর আলম সঙ্গে সঙ্গে বলেন, স্যার এটা ৪২ শতাংশ হবে।

এ সময় সিইসি বলেন, তাই নাকি? ও আচ্ছা, তাহলে ৪২ শতাংশই পড়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচার করে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। বিতর্কিত এ ভোটের হিসাব নিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কারণ সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল একেবারেই ফাঁকা। সাধারণ মানুষ ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। সূত্র: কালবেলা