বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে দুই দলে বিভক্ত হয় শোবিজের শিল্পীরা। একদল শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলেছেন, ছিলেন রাজপথেও। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী শিল্পীরা ছিলেন নিশ্চুপ।
ছাত্র-জনতার যৌক্তিক এই আন্দোলনে তাদের কর্মকাণ্ডও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আন্দোলন দমাতে তারা হোয়াটসঅ্যাপে খুলেছিলেন ‘আলো আসবেই’ নামের একটি গ্রুপ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফাঁস হয় সেই গ্রুপের কথোপকথনের স্ক্রিনশট। যা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনাও হচ্ছে। আর সেই গ্রুপে যুক্ত ছিলেন দেশের নামকরা বেশ ক’জন তারকা।
তাদের মধ্যে একজন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। যদিও ইতিমধ্যে গুটি কয়েক শিল্পী ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে যুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন। তবে বেশির ভাগ শিল্পীই আছেন নীরব। এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন জ্যোতি। গতকাল বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এতদিন কথা বলিনি। কিন্তু আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। কারণ, আমাকেসহ ওই গ্রুপের সবাইকে সামাজিক কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনই করতে পারছি না। বলতে পারেন সামাজিক হেনস্তার শিকার হচ্ছি। তাই একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আমি আমার জায়গাটি পরিষ্কার করতে ফেসবুক লাইভে এসেছি। তিনি আরও বলেন, ‘যারা “আলো আসবেই” গ্রুপে ছিলেন তাদেরকে আপনারা দুটি তকমা দিয়ে কথা বলছেন ইদানীং। একটি হলো স্বৈরাচারের দোসর, আরেকটি হলো গণহত্যার ইন্ধনদাতা! এই দুটি কথার মানে কি আপনারা জানেন? আমরা কি করেছি যে এ ধরনের কথা শুনতে হবে? আমি আজ (বুধবার) থেকে আর একটি বারের জন্যও এই অপবাদ নিজের কাঁধে নিতে চাই না বলেই কথাগুলো বলতে এসেছি। আমি যে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তার কোনো প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে? না থাকলে এসব কথা কেন বলছেন? আপনারা কি জানেন, এই ধরনের অপবাদ মানুষের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে? আমি আর সহ্য করতে না পেরে আজ কথাগুলো বলছি।
এই অভিনেত্রী চাপের মধ্যে আছেন সেকথা জানিয়ে বলেন, ‘একে তো আমি নারী, আজকাল দেশে নারীদের কোনো সম্মান নেই। তার ওপর আমি অভিনেত্রী, তাতে তো আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা আরও সহজ! সেই সঙ্গে আমি হিন্দু, আমি অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ রাখি না- এই সবকিছুতেই তো আপনাদের সমস্যা।
এজন্য এমনিতেই আমি নানা ধরনের চাপের মধ্যে আছি। কিন্তু যে কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই তার জন্য দয়া করে আমাকে অপবাদ দিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না। এটুকু অনুরোধ থাকলো সবার প্রতি। গ্রুপে থাকা প্রসঙ্গে জ্যোতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন যেসব শিল্পী, তারাই ওখানে ছিলেন। এটা আমি ইনিয়েবিনিয়ে বলব না যে, আমাকে কেন অ্যাড করেছে, কে অ্যাড করেছে জানি না। আমি জেনে শুনেই গ্রুপটিতে ছিলাম। কারণ আমি জানতাম ওই গ্রুপের এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই যা আমাদের দেশের বা দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। যেকোনো ছোট ছোট বিষয়ে আমরা গ্রুপ খুলি। এটাও তেমন একটা গ্রুপ। এখানে আমি সব সময় ঢাকার কোথায় কি অবস্থা সেসব আপডেট দিতাম। কারণ, আমাদের তো পরিস্থিতি বুঝে ঘরের বাইরে বেরোতে হত। দু’একজনের দু’একটা কথা হয়ত আপনারা ক্ষতিকর মনে করছেন। কিন্তু সেই কথাগুলো কোন পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে সেটা আপনারা জানেন না। কোনো শিল্পী কখনোই মানুষ হত্যার সমর্থন করতে পারে না, এটা আপনারা ভুলে গেছেন।’
বিটিভিতে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সে সময় দুটি মাত্র প্রোগ্রামে গিয়েছি। একটি বিটিভিতে হামলার প্রতিবাদ করতে, অন্যটি আন্দোলনে যে ছাত্ররা আহত হয়েছে তাদের হাসপাতালে দেখতে। কিন্তু আপনারা ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টি কেউ সামনে আনলেন না, আনলেন বিটিভির বিষয়টি। আমরা তো সেখানে গিয়েছিলাম সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে। এটা তো দোষের কিছু নয়। আমরা সবসময় বলে এসেছি যে, এই ধরনের ধংসযজ্ঞ ছাত্ররা করতে পারে না। ছাত্রদের মধ্যে একদল সুবিধাবাদী ঢুকে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করেছে। তাহলে আপনারা কেন আলো আসবেই গ্রুপের শিল্পীদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন? অহেতুক আপনারা এই গ্রুপটিকে নিয়ে নানা রংচং মাখিয়ে শিল্পীগুলোকে ক্ষতির মুখে ফেলেছেন।
উল্লেখ্য, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস, নায়ক রিয়াজ, অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। আর এতে যুক্ত ছিলেন শোবিজে অনেক তারকা। এই তালিকায় আছেন- সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস, নায়ক রিয়াজ, জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, অভিনেত্রী অভিনেত্রী সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকে।,