ঢাকা ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হরিপুরে গ্রামবাংলার ঝোপঝাড় হতে বিলুপ্তির পথে কুচফল

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

সিরাজুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও
কুঁচবরন কন্যা তার মেঘবরন কেশ সুন্দরী কন্যার রূপ বর্ননায় দুধসাদা আর কালো চোখওয়ালা কুঁচফলের মত গায়ের রঙয়ের উপমা দিয়েছেন কবি।
এর ইংরেজি নাম – Indian Liquorice / Crabs Eye. বাংলাদেশে ২০১২ সালে এটিকে এক সংরক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
কিন্তু এখন চোখে দেখা তো দূরের কথা নতুন প্রজন্ম হয়ত এই নামটির সঙ্গেও পরিচিত নয়। দু-একটি পুরাতন সোনার দোকানে খোঁজ করলে হয়তো এর দেখা পাওয়া গেলেও যেতে পারে।

এই অদ্ভুত সুন্দর চোখওয়ালা কুঁচফল সাদা, কালো সহ নানা রঙয়ের হলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া ‌যায় লালকুঁচ।
কালের গর্ভে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই কুঁচ।

এটি একটি লতানো উদ্ভির এক সময় বাড়ির বেড়া সহ যত্রতত্র এ গাছ পাওয়া যেত। হয়তো এখনও গ্রাম বাংলার বিশেষ কোনো বনে বাদাড়ে দুএকটি এই কুঁচ লতার সন্ধান পাওয়া যেতেও পারে । নগর সভ্যতার করাল কুঠারাঘাতে আগামীতে এ দুর্লভ বাংলার রূপসী ফলদায়ী চমৎকার উদ্ভিদটি হয়তো একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এই গাছটি লতানো এবং বহু বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। এর শাখা বেশ নরম। পাতার দৈর্ঘ্য ২-৩ ইঞ্চি। প্রতিটি পত্রদণ্ডে ২০-৪০টি পাতা থাকে। বসন্তকালে পাতাগুলি ঝরে যায়। এর পুষ্পদণ্ডে প্রচুর ফুল ধরে। ফুলের বাইরের দিক পশমের মতো। ফুলগুলোতে লাল বা সাদা বর্ণের আভা দেখা যায়। এর ফল শুঁটির আকারে জন্মে। শুঁটিগুলো ১ থেকে ২ ইঞ্চি লম্বা হয়। শুঁটিগুলো শুকোলে এর বীজগুলো পরিপক্ব হয়ে লাল, কালো, সাদা ইত্যাদি নানা রঙের হয়ে থাকে। শীতের সময় এর ফুল হয় এবং গ্রীষ্মকালে ফল হয়। ফলের নাম রতি ফল। এর আরেক নাম সোনাকুঁড়ি। কুঁচফলের বীজের দুধে-আলতা রঙ থেকেই কুঁচবরণ কন্যার নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

রক্তকুঁচের আরও অনেক নাম আছে- চুরামনি, সৌম্যা, শিখী, তাম্রিকা, রক্তা, উচ্চটা, বন্যাসা ইত্যাদি। রক্তকুঁচের নাম শাঙ্গুষ্ঠা ও গুঞ্জা। ‘গুঞ্জ ফুলের মালা’ কথাটাও এই কুঁচ থেকেই এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। হরিপুর উপজেলায়
একশ্রেনীর আদিবাসীরা একসময় এই কুঁচএর লতা দিয়ে নানা ধরনের ঝুরি তৈরী করতো। কুঁচ এর পাতা, শিকড়, ছাল থেকে বিভিন্ন রকম ভেষজ ঔষধ পাওয়া যেত।

কুঁচফলের বাইরের আস্তরণ ভীষণই কঠিন। বীজের ভিতরের অংশ মারাত্মক বিষাক্ত যা কোনো গবাদি পশু খেলে এর থেকে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এই কুঁচের ফলের বৈশিষ্ট্য হল এর পরিণত বীজগুলির ওজন সাধারণত একই হয় এবং তা বহুবছর ধরে অপরিবর্তিত থাকে এই কারনে বাংলায় এক সময় সোনার দোকানে স্বর্ণের ওজনের ক্ষেত্রে স্বর্ণকাররা এই কুঁচফল ব্যবহার করতেন। প্রতিটি কুঁচের ওজনকে ১ রতি বলা হতো। এই এককের বিচারে ওজনের যে এককগুলো নির্ধারিত হতো, তা হলো
১ কুঁচ১ রতি
৮ রতি১ মাশা
১২ মাশা ১ তোলা
১ তোলা ১১.৬ গ্রাম

একসময় কুঁচফল নারীদের শোভাবর্ধনে অলঙ্কার ও পুতুলের চোখ তৈরীতে খুবই ব্যবহৃত হতো। সাদা, কালো, লাল ও গোলাপি রংয়ের এই ফল দেখতে পাওয়া যায়।
যদিও সে সব অতীত। প্রকৃত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে অচিরেই হয়তো হারিয়ে যাবে বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী অনন্য সুন্দর ফলের এই বিরল উদ্ভিদটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

হরিপুরে গ্রামবাংলার ঝোপঝাড় হতে বিলুপ্তির পথে কুচফল

আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

সিরাজুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও
কুঁচবরন কন্যা তার মেঘবরন কেশ সুন্দরী কন্যার রূপ বর্ননায় দুধসাদা আর কালো চোখওয়ালা কুঁচফলের মত গায়ের রঙয়ের উপমা দিয়েছেন কবি।
এর ইংরেজি নাম – Indian Liquorice / Crabs Eye. বাংলাদেশে ২০১২ সালে এটিকে এক সংরক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
কিন্তু এখন চোখে দেখা তো দূরের কথা নতুন প্রজন্ম হয়ত এই নামটির সঙ্গেও পরিচিত নয়। দু-একটি পুরাতন সোনার দোকানে খোঁজ করলে হয়তো এর দেখা পাওয়া গেলেও যেতে পারে।

এই অদ্ভুত সুন্দর চোখওয়ালা কুঁচফল সাদা, কালো সহ নানা রঙয়ের হলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া ‌যায় লালকুঁচ।
কালের গর্ভে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই কুঁচ।

এটি একটি লতানো উদ্ভির এক সময় বাড়ির বেড়া সহ যত্রতত্র এ গাছ পাওয়া যেত। হয়তো এখনও গ্রাম বাংলার বিশেষ কোনো বনে বাদাড়ে দুএকটি এই কুঁচ লতার সন্ধান পাওয়া যেতেও পারে । নগর সভ্যতার করাল কুঠারাঘাতে আগামীতে এ দুর্লভ বাংলার রূপসী ফলদায়ী চমৎকার উদ্ভিদটি হয়তো একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এই গাছটি লতানো এবং বহু বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। এর শাখা বেশ নরম। পাতার দৈর্ঘ্য ২-৩ ইঞ্চি। প্রতিটি পত্রদণ্ডে ২০-৪০টি পাতা থাকে। বসন্তকালে পাতাগুলি ঝরে যায়। এর পুষ্পদণ্ডে প্রচুর ফুল ধরে। ফুলের বাইরের দিক পশমের মতো। ফুলগুলোতে লাল বা সাদা বর্ণের আভা দেখা যায়। এর ফল শুঁটির আকারে জন্মে। শুঁটিগুলো ১ থেকে ২ ইঞ্চি লম্বা হয়। শুঁটিগুলো শুকোলে এর বীজগুলো পরিপক্ব হয়ে লাল, কালো, সাদা ইত্যাদি নানা রঙের হয়ে থাকে। শীতের সময় এর ফুল হয় এবং গ্রীষ্মকালে ফল হয়। ফলের নাম রতি ফল। এর আরেক নাম সোনাকুঁড়ি। কুঁচফলের বীজের দুধে-আলতা রঙ থেকেই কুঁচবরণ কন্যার নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

রক্তকুঁচের আরও অনেক নাম আছে- চুরামনি, সৌম্যা, শিখী, তাম্রিকা, রক্তা, উচ্চটা, বন্যাসা ইত্যাদি। রক্তকুঁচের নাম শাঙ্গুষ্ঠা ও গুঞ্জা। ‘গুঞ্জ ফুলের মালা’ কথাটাও এই কুঁচ থেকেই এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। হরিপুর উপজেলায়
একশ্রেনীর আদিবাসীরা একসময় এই কুঁচএর লতা দিয়ে নানা ধরনের ঝুরি তৈরী করতো। কুঁচ এর পাতা, শিকড়, ছাল থেকে বিভিন্ন রকম ভেষজ ঔষধ পাওয়া যেত।

কুঁচফলের বাইরের আস্তরণ ভীষণই কঠিন। বীজের ভিতরের অংশ মারাত্মক বিষাক্ত যা কোনো গবাদি পশু খেলে এর থেকে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এই কুঁচের ফলের বৈশিষ্ট্য হল এর পরিণত বীজগুলির ওজন সাধারণত একই হয় এবং তা বহুবছর ধরে অপরিবর্তিত থাকে এই কারনে বাংলায় এক সময় সোনার দোকানে স্বর্ণের ওজনের ক্ষেত্রে স্বর্ণকাররা এই কুঁচফল ব্যবহার করতেন। প্রতিটি কুঁচের ওজনকে ১ রতি বলা হতো। এই এককের বিচারে ওজনের যে এককগুলো নির্ধারিত হতো, তা হলো
১ কুঁচ১ রতি
৮ রতি১ মাশা
১২ মাশা ১ তোলা
১ তোলা ১১.৬ গ্রাম

একসময় কুঁচফল নারীদের শোভাবর্ধনে অলঙ্কার ও পুতুলের চোখ তৈরীতে খুবই ব্যবহৃত হতো। সাদা, কালো, লাল ও গোলাপি রংয়ের এই ফল দেখতে পাওয়া যায়।
যদিও সে সব অতীত। প্রকৃত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে অচিরেই হয়তো হারিয়ে যাবে বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী অনন্য সুন্দর ফলের এই বিরল উদ্ভিদটি।