ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলোচিত জোড়া শিশু নুহা ও নাবা ঘরে ফিরলেও এখনো হতাশায় পরিবারটি

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৫২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৬৮ বার পড়া হয়েছে

কুড়িগ্রাম সদর প্রতিনিধি

জন্মের পর চিকিৎসার জন্য জোড়া শিশু নুহা ও নাবাকে নিয়ে ঘর ছাড়েন শ্রমিক আলমগীর হোসেন রানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ দফা অস্ত্রপচার ও চিকিৎসার পর মঙ্গলবার বাড়িতে আসেন তারা। দেশে জোড়া শিশুর সফল অস্ত্রোপাচারে শুধু চিকিৎসকরাই খুশি হন নি, এ খবরে দেশের মানুষও খুশি হয়েছে। দীর্ঘ ৩২ মাস হাসপাতালে থাকার পর নুহা ও নাবা এখন কুড়িগ্রামে বাবার বাড়িতে।নুহা -নাবার চঞ্চলতায় মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। আশ পাশের লোকজন প্রতিদিন আসছেন নুহা নাবাকে দেখতে।

তবে আরো একটি অস্ত্রোপাচারের জন্য লক্ষাধিক টাকার দুঃশ্চিন্তায় হতাশা নুহা ও নাবার বাবা মা আলমগীর রানা—নাসরিন দম্পতি। দেশের মানুষ ও সরকারি সহযোগিতার আশায় দিন কাটছে নুহা ও নাবার পরিবারের।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে বাড়ি রানা—নাসরিন দম্পতির। আলমগীর হোসেন রানা একজন পরিবহন শ্রমিক। স্ত্রী নাসরিন বেগম ২০২১ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি বেসকারি ক্লিনিকে জোড়া লাগানো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। মেরুদন্ড জোড়া লাগানো জমজ দুই কন্যাকে পেয়ে আনন্দের বদলে বিষাদ ভরে যায় এই দম্পতির মন। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার জন্য যেতে পারছিলেন না কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। এ অবস্থায় ওই বছরের ৪ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিশু দুটোকে।

এই জোড়া শিশুদের পৃথক করাসহ চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়। সেখানকার চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেনের তত্বাবধানে ৮ দফা অস্ত্রোপচারের পর গত বছর জানুয়ারি মাসে পৃথক করা হয় শিশু দুটিকে। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা মাইলফলক হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাদের।

অবশেষে সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা শেষে সোমবার রাতে হাসপাতাল ত্যাগ করে জোড়া শিশু নুহা ও নাবা। তাদের এই অকল্পনীয় পৃথক চিকিৎসা নিয়ে স্বস্তি ফিরলেও এখনো হতাশায় ভুগছেন আলমগীর নাসরিন দম্পত্তি।প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ আর শেষ অস্ত্রোপাচারে তিন লাখ টাকা কিভাবে জুঠবে সেই চিন্তা দিন কাটছে এ দম্পতির।

আলমগীর হোসেন রানা বলেন, নুহা- নাবা চিকিৎসার পিছনে প্রায় ৫১ টাকা খরচ হয়েছে। আমি গরীব মানুষ সব টাকা মানুষ সহযোগিতা করেছে।ওদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি আমার পরিবহন শ্রমিকের কাজটাও হারিয়ে ফেলেছি।বর্তমানে বেকার আছি।নিজের সন্তানদের চিকিৎসা কিভাবে করাবো জানি না। দেশের মানুষ যদি আরেকবার পাশে দাড়াতো নিষ্পাপ বাচ্চা দুটোর জীবন স্বাভাবিক হতো।

প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, আলমগীর হোসেন রানা গরীব মানুষ। ওর বাচ্চা দুটোকে দেখে খুব মায়া হয়।ফুটফুটে বাচ্চা দুটোর পাশে দাড়ালে পরিবারটির উপকার হতো।

আরেক প্রতিবেশী আবু তালেব বলেন, আলমগীর হোসেন রানার মেয়ে দুটোকে দেখতে এসেছি। পুতুলের মত দেখতে মেয়ে দুটো।একটি মেয়ে এখনো অস্বাভাবিক আছে।রানার কাছে শুনলাম আরো নাকি অস্ত্রোপাচার বাকি আছে।ওই চিকিৎসার জন্য নাকি জন প্রতি লক্ষাধিক টাকার দরকার।এই অভাবি সংসারে রানা নিজে কি খাবে সন্তানের চিকিৎসা কেমনে করাবে আল্লাহ পাক জানে।আরেকবার কেউ যদি সহযোগিতা করতো তাহলে ভালো হতো।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ নুর ইসলাম বলেন, সবার সহযোগিতার হাত বাড়ালে আশা করি নুহা ও নাবার শেষ অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব হতো।আলমগীর গরীব মানুষ এত টাকা কোথায় পাবে।তাই দেশের সহৃদয়বান মানুষেরা যদি নুহা -নাবার পাশে দাড়াতো তাহলে পরিবারটি উপকৃত হতো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আলোচিত জোড়া শিশু নুহা ও নাবা ঘরে ফিরলেও এখনো হতাশায় পরিবারটি

আপডেট সময় : ০১:৫২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

কুড়িগ্রাম সদর প্রতিনিধি

জন্মের পর চিকিৎসার জন্য জোড়া শিশু নুহা ও নাবাকে নিয়ে ঘর ছাড়েন শ্রমিক আলমগীর হোসেন রানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ দফা অস্ত্রপচার ও চিকিৎসার পর মঙ্গলবার বাড়িতে আসেন তারা। দেশে জোড়া শিশুর সফল অস্ত্রোপাচারে শুধু চিকিৎসকরাই খুশি হন নি, এ খবরে দেশের মানুষও খুশি হয়েছে। দীর্ঘ ৩২ মাস হাসপাতালে থাকার পর নুহা ও নাবা এখন কুড়িগ্রামে বাবার বাড়িতে।নুহা -নাবার চঞ্চলতায় মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। আশ পাশের লোকজন প্রতিদিন আসছেন নুহা নাবাকে দেখতে।

তবে আরো একটি অস্ত্রোপাচারের জন্য লক্ষাধিক টাকার দুঃশ্চিন্তায় হতাশা নুহা ও নাবার বাবা মা আলমগীর রানা—নাসরিন দম্পতি। দেশের মানুষ ও সরকারি সহযোগিতার আশায় দিন কাটছে নুহা ও নাবার পরিবারের।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে বাড়ি রানা—নাসরিন দম্পতির। আলমগীর হোসেন রানা একজন পরিবহন শ্রমিক। স্ত্রী নাসরিন বেগম ২০২১ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি বেসকারি ক্লিনিকে জোড়া লাগানো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। মেরুদন্ড জোড়া লাগানো জমজ দুই কন্যাকে পেয়ে আনন্দের বদলে বিষাদ ভরে যায় এই দম্পতির মন। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার জন্য যেতে পারছিলেন না কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। এ অবস্থায় ওই বছরের ৪ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিশু দুটোকে।

এই জোড়া শিশুদের পৃথক করাসহ চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়। সেখানকার চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেনের তত্বাবধানে ৮ দফা অস্ত্রোপচারের পর গত বছর জানুয়ারি মাসে পৃথক করা হয় শিশু দুটিকে। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা মাইলফলক হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাদের।

অবশেষে সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা শেষে সোমবার রাতে হাসপাতাল ত্যাগ করে জোড়া শিশু নুহা ও নাবা। তাদের এই অকল্পনীয় পৃথক চিকিৎসা নিয়ে স্বস্তি ফিরলেও এখনো হতাশায় ভুগছেন আলমগীর নাসরিন দম্পত্তি।প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ আর শেষ অস্ত্রোপাচারে তিন লাখ টাকা কিভাবে জুঠবে সেই চিন্তা দিন কাটছে এ দম্পতির।

আলমগীর হোসেন রানা বলেন, নুহা- নাবা চিকিৎসার পিছনে প্রায় ৫১ টাকা খরচ হয়েছে। আমি গরীব মানুষ সব টাকা মানুষ সহযোগিতা করেছে।ওদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি আমার পরিবহন শ্রমিকের কাজটাও হারিয়ে ফেলেছি।বর্তমানে বেকার আছি।নিজের সন্তানদের চিকিৎসা কিভাবে করাবো জানি না। দেশের মানুষ যদি আরেকবার পাশে দাড়াতো নিষ্পাপ বাচ্চা দুটোর জীবন স্বাভাবিক হতো।

প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, আলমগীর হোসেন রানা গরীব মানুষ। ওর বাচ্চা দুটোকে দেখে খুব মায়া হয়।ফুটফুটে বাচ্চা দুটোর পাশে দাড়ালে পরিবারটির উপকার হতো।

আরেক প্রতিবেশী আবু তালেব বলেন, আলমগীর হোসেন রানার মেয়ে দুটোকে দেখতে এসেছি। পুতুলের মত দেখতে মেয়ে দুটো।একটি মেয়ে এখনো অস্বাভাবিক আছে।রানার কাছে শুনলাম আরো নাকি অস্ত্রোপাচার বাকি আছে।ওই চিকিৎসার জন্য নাকি জন প্রতি লক্ষাধিক টাকার দরকার।এই অভাবি সংসারে রানা নিজে কি খাবে সন্তানের চিকিৎসা কেমনে করাবে আল্লাহ পাক জানে।আরেকবার কেউ যদি সহযোগিতা করতো তাহলে ভালো হতো।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ নুর ইসলাম বলেন, সবার সহযোগিতার হাত বাড়ালে আশা করি নুহা ও নাবার শেষ অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব হতো।আলমগীর গরীব মানুষ এত টাকা কোথায় পাবে।তাই দেশের সহৃদয়বান মানুষেরা যদি নুহা -নাবার পাশে দাড়াতো তাহলে পরিবারটি উপকৃত হতো।