ঢাকা ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদীতে পুলিশের পিটুনিতে সিএনজি চালকের মৃত্যু, পুলিশ বলছে স্টোক

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৮৯ বার পড়া হয়েছে

আলি হায়দার, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পুলিশের পিটুনিতে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (০৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কটিয়াদী উপজেলার ফেকামারা গ্রামে এ ঘটনা হয়। তবে পুলিশ বলছে অভিযানের সময় দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে স্টোক করে সিএনজি চালকের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া চালকের নাম ইয়াসিন মিয়া (৪০)। তাঁর বাড়ি নরসিংদী সদরে।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানায়, ইয়াসিন কয়েক বছর ধরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ফেকামারা গ্রামে থাকেন। তাঁর মূল পেশা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালানো। সোমবার সন্ধ্যায় লিটন মিয়া নামের এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তখন ওই বাড়িতে ইয়াসিন ছিলেন। পুলিশ দেখে ইয়াসিনসহ বাড়ির সবাই দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে কিন্ত ইয়াসিন পালাতে পারেননি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এসময় পুলিশ ইয়াসিরকে পেটাতে থাকলে ইয়াসিন ঘটনা স্থলেই জ্ঞান হারায়। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পুলিশ নিশ্চিত হয় লিটনের বাড়িতে মাদকের একটি বড় চালান রয়েছে। মাদকের চালান পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা শহরে পাঠানো হবে। তবে অভিযানের সময় কোনো প্রকার মাদক উদ্ধার করা যায়নি। পরে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ইয়াসিনের সুরুতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় এবং রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

ইয়াসিরের স্ত্রী আমেন খাতুন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার স্বামী পুলিশের হাতে ধরা পরার পর নিজেকে সিএনজি চালক পরিচয় দেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে সবার সামনে মারধর শুরু করে। পুলিশের মারধরের কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়।

লিটন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ওই বাড়িতে ইয়াসিন কেন যেতে পারেন- এমন প্রশ্নে আমেনা খাতুন বলেন, লিটনের বাড়ি ফেকামারা গ্রামে। আমরাও ফেকামারা গ্রামে থাকি। হয়ত আগ থেকে পরিচিত ছিলেন। তবে কেন ওই বাড়িতে গেছে কারণ জানা নেই।

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) মুঠোফোনে কথা হয় কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সংবাদ পাই চিহ্নিত মাদক কারবারি লিটন মাদকের একটি বড় চালান আসছে। তাঁকে ধরার জন্য এসআই কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন এএসআই নাহিদ, এএসআই মস্তুফা ও কনস্টেবল আশরাফুল। মূলত পুলিশ দেখে পালানোর সময় অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান ইয়াসিন। হাসপাতালে নেবার পর ইয়াসিনের মৃত্যু হয়।

ওসি আরও বলেন, চিকিৎসকরা জানায় ইয়াসিন স্ট্রোক করে মারা গেছে। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ইয়াসিনের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন ওসি।

কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ঈসা খাঁন বলেন, হাসপাতালে মৃত অবস্থায় ইয়াসিনকে আনা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের তেমন কোনো মেজর চিহ্ন পাওয়া যায় নাই। মৃত্যুর পর স্কিনের কালার চেঞ্জ হলে যেমন হয় তেমন পাওয়া গেছে। এখন এগুলো কি আঘাতের জন্য হইছে নাকি অন্য কোনো কিছু তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বলা যাবে।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাইদুল ইসলাম বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন করার সময় আমি সামনে ছিলাম। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাইনি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে সে স্ট্রোক করে মারা গেছে নাকি নির্যাতনে মারা গেছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। আমরা শুনেছি দৌঁড়ে পালানোর সময় স্ট্রোক করে মারা গেছে। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে মরদেহের সুরুতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে অভিযানের পর থেকে লিটনের বাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়ে আছেন। লিটনের মূল পেশা মাদক- এই বিষয়টি প্রতিবেশীদের প্রায় সবাই নিশ্চিত করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

কটিয়াদীতে পুলিশের পিটুনিতে সিএনজি চালকের মৃত্যু, পুলিশ বলছে স্টোক

আপডেট সময় : ০৩:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

আলি হায়দার, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পুলিশের পিটুনিতে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (০৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কটিয়াদী উপজেলার ফেকামারা গ্রামে এ ঘটনা হয়। তবে পুলিশ বলছে অভিযানের সময় দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে স্টোক করে সিএনজি চালকের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া চালকের নাম ইয়াসিন মিয়া (৪০)। তাঁর বাড়ি নরসিংদী সদরে।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানায়, ইয়াসিন কয়েক বছর ধরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ফেকামারা গ্রামে থাকেন। তাঁর মূল পেশা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালানো। সোমবার সন্ধ্যায় লিটন মিয়া নামের এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তখন ওই বাড়িতে ইয়াসিন ছিলেন। পুলিশ দেখে ইয়াসিনসহ বাড়ির সবাই দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে কিন্ত ইয়াসিন পালাতে পারেননি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এসময় পুলিশ ইয়াসিরকে পেটাতে থাকলে ইয়াসিন ঘটনা স্থলেই জ্ঞান হারায়। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পুলিশ নিশ্চিত হয় লিটনের বাড়িতে মাদকের একটি বড় চালান রয়েছে। মাদকের চালান পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা শহরে পাঠানো হবে। তবে অভিযানের সময় কোনো প্রকার মাদক উদ্ধার করা যায়নি। পরে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ইয়াসিনের সুরুতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় এবং রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

ইয়াসিরের স্ত্রী আমেন খাতুন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার স্বামী পুলিশের হাতে ধরা পরার পর নিজেকে সিএনজি চালক পরিচয় দেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে সবার সামনে মারধর শুরু করে। পুলিশের মারধরের কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়।

লিটন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ওই বাড়িতে ইয়াসিন কেন যেতে পারেন- এমন প্রশ্নে আমেনা খাতুন বলেন, লিটনের বাড়ি ফেকামারা গ্রামে। আমরাও ফেকামারা গ্রামে থাকি। হয়ত আগ থেকে পরিচিত ছিলেন। তবে কেন ওই বাড়িতে গেছে কারণ জানা নেই।

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) মুঠোফোনে কথা হয় কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সংবাদ পাই চিহ্নিত মাদক কারবারি লিটন মাদকের একটি বড় চালান আসছে। তাঁকে ধরার জন্য এসআই কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন এএসআই নাহিদ, এএসআই মস্তুফা ও কনস্টেবল আশরাফুল। মূলত পুলিশ দেখে পালানোর সময় অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান ইয়াসিন। হাসপাতালে নেবার পর ইয়াসিনের মৃত্যু হয়।

ওসি আরও বলেন, চিকিৎসকরা জানায় ইয়াসিন স্ট্রোক করে মারা গেছে। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ইয়াসিনের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন ওসি।

কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ঈসা খাঁন বলেন, হাসপাতালে মৃত অবস্থায় ইয়াসিনকে আনা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের তেমন কোনো মেজর চিহ্ন পাওয়া যায় নাই। মৃত্যুর পর স্কিনের কালার চেঞ্জ হলে যেমন হয় তেমন পাওয়া গেছে। এখন এগুলো কি আঘাতের জন্য হইছে নাকি অন্য কোনো কিছু তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বলা যাবে।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাইদুল ইসলাম বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন করার সময় আমি সামনে ছিলাম। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাইনি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে সে স্ট্রোক করে মারা গেছে নাকি নির্যাতনে মারা গেছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। আমরা শুনেছি দৌঁড়ে পালানোর সময় স্ট্রোক করে মারা গেছে। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে মরদেহের সুরুতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে অভিযানের পর থেকে লিটনের বাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়ে আছেন। লিটনের মূল পেশা মাদক- এই বিষয়টি প্রতিবেশীদের প্রায় সবাই নিশ্চিত করেন।