ঢাকা ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবনায় সরকারি খাল দখল করে ইজারাদারকে মারধর ও ৪ লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৫২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১২০ বার পড়া হয়েছে

পাবনা সংবাদদাতা

পাবনার চাটমোহরে সরকারি খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে আব্দুস সাত্তার নামের এক ইউনিয়ন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। একই সাথে ইজারাদারকে মারধর ও হত্যা হুমকি দেয়ার পাশাপাশি ৪ লাখ টাকার মাছ লুটেরও অভিযোগ ভূক্তভোগীর। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় বার বার অভিযোগ জানিয়ে মেলেনি প্রতিকার। সবর্শেষ পুলিশ সুপার, র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী।

অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তার উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের হাঁসুপুর গ্রামের মৃত. ইয়াকুব মুসুল্লির ছেলে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে ভূক্তভোগী একই ইউনিয়নের হান্ডিয়াল খন্দকার পাড়ার মৃত. গিয়াস উদ্দিন খন্দকারের ছেলে সানোয়ার খন্দকার।

লিখিত অভিযোগ ও অন্যান্য নথি বলছে, ১৯৯৯ সালে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ও নিমাইচড়া ইউনিয়নে অবস্থিত পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাধের বড়পিট বা খাল পাঁচ বছরের জন্য প্রথম ইজারা নেন ওই এলাকার কয়েকজন সুফলভোগী। এরমধ্যে ভূক্তভোগী সানোয়ার খন্দকার অন্যতম একজন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে হান্ডিয়াল ইউনিয়নের ডেফলচরা রাস্তা হতে শাহাদৎ’র পুকুরের দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত ওয়াপদা বাধের ১.৫০ একর খাল ইজারা নেন।

এরপর কয়েক দফায় ইজারা নবায়নের মাধ্যমে এ খালে মাছ চাষ করতে থাকেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন এই খাল ভ্রমাত্মকভাবে জেলা প্রশাসন নিজেদের দাবি করে অন্যত্র ইজারা দিলে এটি ভোগদখলে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে এ জটিলতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে সুফলভোগীদের পক্ষে ভূক্তভোগী সানোয়ার খন্দকার ২০১২ সালে চাটমোহর থানা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা (মোকদ্দমা নং: ৪৯/১২) দায়ের করেন। ২০১৩ সালে এ মামলার রায়ে সানোয়ার খন্দকার ও সুফভোগীদের বিনা বাধায় ভোগদখলের নির্দেশ দেয়া হয়। একইসাথে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি এ খাল অন্যত্র ইজারা বা ভোগদখলে বিধিনিষেধ দেয় আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের দপ্তর হতে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা আপিল করলেও তা খারিজ করে আগের রায়ই বহাল রাখে আদালত।

এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০১৩ সালের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে ইজারার চেক না কাটলেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ভূক্তভোগী সানোয়ার খন্দকার ও তার সাথে থাকা সুফলভোগীরা এখনো ওই খাল ভোগদখল করছেন। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নাহলেও ৫ আগস্টের পর সানোয়ার খন্দকারের লিজ নেয়া খাল অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার দখলে নেন। বৈধ কাগজপত্র দেখালেও ভূক্তভোগীকে খালে না আসতে হুমকি ধামকি দেন ও মারধর করেন। এমনকি ৪ লাখ টাকার মাছ লুট করার পাশাপাশি ভূক্তভোগীকে হত্যার হুমকিও দেন।

এব্যাপারে ভূক্তভোগী সানোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি খাল লিজ নিয়ে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগদখল করছি। সরকার পতনের পর হুট করে সাত্তার বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে খাল দখলে নিয়েছেন। আমার ৪ লাখ টাকার মাছ ইতোমধ্যে জোর করে লুটে নিয়েছেন। বাধা দিতে গেলে মারধর করেছেন, হত্যা হুমকিও দিয়েছেন। বার বার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা মেলেনি। আমি এর বিচার চাই।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও সুফলভোগী বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই খাল খাচ্ছেন সানোয়ার। এখন হুট করে সে খাল দখলে নিয়েছেন। প্রকাশ্যে বলেও বেড়াচ্ছেন – সরকার যাকেই লিজ দিক, খালের এটুকু আমিই খাবো।

তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাত্তার। তিনি বলেন, তারা এই খাল নিজেরা একা খেতো, একটা মানুষকেও মাছ ধরতে দিতো না। তাই এলাকার মানুষ এটিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমি জনগণের পক্ষে শুধু সাথে থেকেছি। সরকারি খাল ইজারাদার ছাড়া আপনি বা জনগণ নামতে পারেন বা উন্মুক্ত করতে পারেন? – এসময় এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি অভিযুক্ত।

দলীয় পরিচয়ে কোনো অপকর্ম করার সুযোগ নেই জানিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ রয়েছে অপকর্মকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার। এবিষয়টি আপনার থেকে প্রথম শুনলাম, খোঁজ নিয়ে দোষ পেলে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ইজারা সংক্রান্ত বা সুফলভোগীদের বৈধতা অবৈধতা নিয়ে কোনো জটিলতা থাকলে সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু লোকাল ঝামেলায় আমাদের তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবেন।

এব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রেজিনুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে এটি নিরসনে চাটমোহর থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

পাবনায় সরকারি খাল দখল করে ইজারাদারকে মারধর ও ৪ লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

আপডেট সময় : ০৫:৫২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পাবনা সংবাদদাতা

পাবনার চাটমোহরে সরকারি খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে আব্দুস সাত্তার নামের এক ইউনিয়ন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। একই সাথে ইজারাদারকে মারধর ও হত্যা হুমকি দেয়ার পাশাপাশি ৪ লাখ টাকার মাছ লুটেরও অভিযোগ ভূক্তভোগীর। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় বার বার অভিযোগ জানিয়ে মেলেনি প্রতিকার। সবর্শেষ পুলিশ সুপার, র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী।

অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তার উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের হাঁসুপুর গ্রামের মৃত. ইয়াকুব মুসুল্লির ছেলে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে ভূক্তভোগী একই ইউনিয়নের হান্ডিয়াল খন্দকার পাড়ার মৃত. গিয়াস উদ্দিন খন্দকারের ছেলে সানোয়ার খন্দকার।

লিখিত অভিযোগ ও অন্যান্য নথি বলছে, ১৯৯৯ সালে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ও নিমাইচড়া ইউনিয়নে অবস্থিত পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাধের বড়পিট বা খাল পাঁচ বছরের জন্য প্রথম ইজারা নেন ওই এলাকার কয়েকজন সুফলভোগী। এরমধ্যে ভূক্তভোগী সানোয়ার খন্দকার অন্যতম একজন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে হান্ডিয়াল ইউনিয়নের ডেফলচরা রাস্তা হতে শাহাদৎ’র পুকুরের দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত ওয়াপদা বাধের ১.৫০ একর খাল ইজারা নেন।

এরপর কয়েক দফায় ইজারা নবায়নের মাধ্যমে এ খালে মাছ চাষ করতে থাকেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন এই খাল ভ্রমাত্মকভাবে জেলা প্রশাসন নিজেদের দাবি করে অন্যত্র ইজারা দিলে এটি ভোগদখলে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে এ জটিলতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে সুফলভোগীদের পক্ষে ভূক্তভোগী সানোয়ার খন্দকার ২০১২ সালে চাটমোহর থানা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা (মোকদ্দমা নং: ৪৯/১২) দায়ের করেন। ২০১৩ সালে এ মামলার রায়ে সানোয়ার খন্দকার ও সুফভোগীদের বিনা বাধায় ভোগদখলের নির্দেশ দেয়া হয়। একইসাথে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি এ খাল অন্যত্র ইজারা বা ভোগদখলে বিধিনিষেধ দেয় আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের দপ্তর হতে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা আপিল করলেও তা খারিজ করে আগের রায়ই বহাল রাখে আদালত।

এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০১৩ সালের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে ইজারার চেক না কাটলেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ভূক্তভোগী সানোয়ার খন্দকার ও তার সাথে থাকা সুফলভোগীরা এখনো ওই খাল ভোগদখল করছেন। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নাহলেও ৫ আগস্টের পর সানোয়ার খন্দকারের লিজ নেয়া খাল অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার দখলে নেন। বৈধ কাগজপত্র দেখালেও ভূক্তভোগীকে খালে না আসতে হুমকি ধামকি দেন ও মারধর করেন। এমনকি ৪ লাখ টাকার মাছ লুট করার পাশাপাশি ভূক্তভোগীকে হত্যার হুমকিও দেন।

এব্যাপারে ভূক্তভোগী সানোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি খাল লিজ নিয়ে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগদখল করছি। সরকার পতনের পর হুট করে সাত্তার বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে খাল দখলে নিয়েছেন। আমার ৪ লাখ টাকার মাছ ইতোমধ্যে জোর করে লুটে নিয়েছেন। বাধা দিতে গেলে মারধর করেছেন, হত্যা হুমকিও দিয়েছেন। বার বার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা মেলেনি। আমি এর বিচার চাই।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও সুফলভোগী বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই খাল খাচ্ছেন সানোয়ার। এখন হুট করে সে খাল দখলে নিয়েছেন। প্রকাশ্যে বলেও বেড়াচ্ছেন – সরকার যাকেই লিজ দিক, খালের এটুকু আমিই খাবো।

তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাত্তার। তিনি বলেন, তারা এই খাল নিজেরা একা খেতো, একটা মানুষকেও মাছ ধরতে দিতো না। তাই এলাকার মানুষ এটিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমি জনগণের পক্ষে শুধু সাথে থেকেছি। সরকারি খাল ইজারাদার ছাড়া আপনি বা জনগণ নামতে পারেন বা উন্মুক্ত করতে পারেন? – এসময় এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি অভিযুক্ত।

দলীয় পরিচয়ে কোনো অপকর্ম করার সুযোগ নেই জানিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ রয়েছে অপকর্মকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার। এবিষয়টি আপনার থেকে প্রথম শুনলাম, খোঁজ নিয়ে দোষ পেলে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ইজারা সংক্রান্ত বা সুফলভোগীদের বৈধতা অবৈধতা নিয়ে কোনো জটিলতা থাকলে সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু লোকাল ঝামেলায় আমাদের তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবেন।

এব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রেজিনুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে এটি নিরসনে চাটমোহর থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।