ঢাকা ০৬:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নিজাম শেখের নেতৃত্বে প্রতারণার রমরমা ব্যবসা

ফরিদপুর, সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ১১:২৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
  • / ১৫০ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ভিসা ও মাস্টার কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি- কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি প্রতারক চক্র। সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে জাল কার্ড তৈরি করে টাকা উত্তোলন করায় ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারণ গ্রাহক।

এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ একাউন্ট হ্যাক করে সরকারি বয়স্ক, শিক্ষা, বিধবা ভাতা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রতারণার রমরমা বানিজ্য চলছে। এই প্রতারক চক্রটির মূল হোতা ও মাস্টারমাইন্ড নিজাম শেখ ও তার অন্যতম সহযোগী টুটুল আকন্দ।

নিজাম শেখ উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের দেওড়া নয়াকান্দা গ্রামের বজলু শেখের ছেলে। এলাকায় তাঁর রয়েছে সঙ্গবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। প্রায় অর্ধশত প্রতারককে নিয়ে পরিচালনা করছে জাল- জালিয়াতির ব্যবসা। নিজেই হাতে কলমে এলাকার বেকার যুবকদের প্রতারণা ব্যবসার কলাকৌশল প্রশিক্ষণ দিয়ে দল ভারী করছে।এবং তার রয়েছে সঙ্গবদ্ধ একটি কিশোর গ্যাং।এ কারণেই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না এলাকার সাধারণ মানুষ।

প্রতারক নিজামের একান্ত সহযোগি টুটুল আকন্দ
দক্ষিণ কালামৃধা গ্রামের মৃত মোখলেস আকন্দের ছেলে। এই টুটুল আকন্দ এক সময় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল পরে নিজামের প্রতারণা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে।

নিজামের ব্যক্তিগত অন্য সহযোগিদের মধ্যে রয়েছে দেওড়া গ্রামের শামচুল হকের ছেলে মিরাজুল, হবি চোকদারের ছেলে ফয়সাল, মৃত: সাহাবুদ্দিন হাওলাদারের ছেলে কামাল হাওলাদার, মৃত: আজিমুদ্দিন মোল্লার ছেলে জাকির মোল্লাসহ প্রায় অর্ধশত সহযোগী।

ভয়ংকর প্রতারক এই নিজাম ও টুটুলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২৫/৩০ টি প্রতারণার মামলা রয়েছে।

সম্প্রতি নিজাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে বোমা হামলা করে ব্যাপক আলোচনায় আসে। নিজাম ও তার কয়েক সহযোগি গত ৪ মাস আগে মাদারীপুর জেলা পুলিশের হাতে ইয়াবা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহারকৃত সরঞ্জাম সহ আটক হয়।জামিনে মুক্ত হবার পরই পুনরায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেফতার হয় এবং ২ মাস কারাভোগের পর পুনরায় বেরিয়ে এসে দলের সদস্য সংখ্যা আরও বাড়িয়ে প্রতারণার ব্যবসা চালু করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬/২০ টি প্রতারণার মামলা থাকার পরও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে বীরদর্পে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের কোটি- কোটি টাকা।এসব বিকাশ- নগদ ও ভিসা কার্ড প্রতারকদের কারণে বিপাকে পড়েছে সাধারণ গ্রাহকরা।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সূত্র মতে জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী যুবলীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য (ফরিদপুর-৪) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সাথে নিজামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সুবাদে সে এলাকায় গড়ে তুলেছে সক্রিয় একটি কিশোর গ্যাং ও জালিয়াতীর স্বর্গরাজ্য। মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছত্রছায়াতেই সে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পরেও তার প্রতারণা ব্যবসার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি। নিজাম প্রতারণার মাধ্যমে শুন্য থেকে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার রয়েছে আলীশান বাড়ি, গাড়ী, স্থানীয় দেওড়া বাজারে দোকান-পাট সহ বেশ কয়েক একর জমি।

জানাযায়, কয়েক বছর আগেও তাদের আর্থিক অবস্থা ততটা উন্নত ছিল না।কিন্তু হঠাৎ করেই যেন, আলাদিনের চেরাগ’ হাতে
পেয়ে যান এই প্রতারক নিজাম।নগদ- বিকাশ ও ভিসা কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বনে গেছেন কোটিপতি। এই প্রতারক চক্রটি এতই ভয়ংকর যে, সরকারি সহায়তার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এমনকি মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি উপবৃত্তির টাকাও জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে।এতে বিভ্রান্তিতে পড়ছে ভাতা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর আস্থাভাজন হওয়ায় তারই নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর সরাসরি বোমা হামলা করে রাতারাতি হিরো খ্যাতি অর্জন করে প্রতারক নিজাম শেখ।

এলাকাবাসি বলছে, মাঝে মাঝেই এই প্রতারক নিজাম শেখ কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে নিয়ে যায়,আবার অদৃশ্য কারণে অল্প দিনের মধ্যেই ফিরে আসে এবং সেই পুরনো প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী অবিলম্বে নিজাম শেখ ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড টুটুল আকন্দসহ সকল সহযোগিদের গ্রেফতার করে প্রতারণা ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু ও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

 

 

প্রলয়/তাসনিম তুবা

নিউজটি শেয়ার করুন

ই-পেপার

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নিজাম শেখের নেতৃত্বে প্রতারণার রমরমা ব্যবসা

আপডেট সময় : ১১:২৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ভিসা ও মাস্টার কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি- কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি প্রতারক চক্র। সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে জাল কার্ড তৈরি করে টাকা উত্তোলন করায় ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারণ গ্রাহক।

এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ একাউন্ট হ্যাক করে সরকারি বয়স্ক, শিক্ষা, বিধবা ভাতা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রতারণার রমরমা বানিজ্য চলছে। এই প্রতারক চক্রটির মূল হোতা ও মাস্টারমাইন্ড নিজাম শেখ ও তার অন্যতম সহযোগী টুটুল আকন্দ।

নিজাম শেখ উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের দেওড়া নয়াকান্দা গ্রামের বজলু শেখের ছেলে। এলাকায় তাঁর রয়েছে সঙ্গবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। প্রায় অর্ধশত প্রতারককে নিয়ে পরিচালনা করছে জাল- জালিয়াতির ব্যবসা। নিজেই হাতে কলমে এলাকার বেকার যুবকদের প্রতারণা ব্যবসার কলাকৌশল প্রশিক্ষণ দিয়ে দল ভারী করছে।এবং তার রয়েছে সঙ্গবদ্ধ একটি কিশোর গ্যাং।এ কারণেই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না এলাকার সাধারণ মানুষ।

প্রতারক নিজামের একান্ত সহযোগি টুটুল আকন্দ
দক্ষিণ কালামৃধা গ্রামের মৃত মোখলেস আকন্দের ছেলে। এই টুটুল আকন্দ এক সময় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল পরে নিজামের প্রতারণা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে।

নিজামের ব্যক্তিগত অন্য সহযোগিদের মধ্যে রয়েছে দেওড়া গ্রামের শামচুল হকের ছেলে মিরাজুল, হবি চোকদারের ছেলে ফয়সাল, মৃত: সাহাবুদ্দিন হাওলাদারের ছেলে কামাল হাওলাদার, মৃত: আজিমুদ্দিন মোল্লার ছেলে জাকির মোল্লাসহ প্রায় অর্ধশত সহযোগী।

ভয়ংকর প্রতারক এই নিজাম ও টুটুলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২৫/৩০ টি প্রতারণার মামলা রয়েছে।

সম্প্রতি নিজাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে বোমা হামলা করে ব্যাপক আলোচনায় আসে। নিজাম ও তার কয়েক সহযোগি গত ৪ মাস আগে মাদারীপুর জেলা পুলিশের হাতে ইয়াবা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহারকৃত সরঞ্জাম সহ আটক হয়।জামিনে মুক্ত হবার পরই পুনরায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেফতার হয় এবং ২ মাস কারাভোগের পর পুনরায় বেরিয়ে এসে দলের সদস্য সংখ্যা আরও বাড়িয়ে প্রতারণার ব্যবসা চালু করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬/২০ টি প্রতারণার মামলা থাকার পরও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে বীরদর্পে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের কোটি- কোটি টাকা।এসব বিকাশ- নগদ ও ভিসা কার্ড প্রতারকদের কারণে বিপাকে পড়েছে সাধারণ গ্রাহকরা।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সূত্র মতে জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী যুবলীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য (ফরিদপুর-৪) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সাথে নিজামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সুবাদে সে এলাকায় গড়ে তুলেছে সক্রিয় একটি কিশোর গ্যাং ও জালিয়াতীর স্বর্গরাজ্য। মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছত্রছায়াতেই সে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পরেও তার প্রতারণা ব্যবসার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি। নিজাম প্রতারণার মাধ্যমে শুন্য থেকে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার রয়েছে আলীশান বাড়ি, গাড়ী, স্থানীয় দেওড়া বাজারে দোকান-পাট সহ বেশ কয়েক একর জমি।

জানাযায়, কয়েক বছর আগেও তাদের আর্থিক অবস্থা ততটা উন্নত ছিল না।কিন্তু হঠাৎ করেই যেন, আলাদিনের চেরাগ’ হাতে
পেয়ে যান এই প্রতারক নিজাম।নগদ- বিকাশ ও ভিসা কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বনে গেছেন কোটিপতি। এই প্রতারক চক্রটি এতই ভয়ংকর যে, সরকারি সহায়তার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এমনকি মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি উপবৃত্তির টাকাও জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে।এতে বিভ্রান্তিতে পড়ছে ভাতা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর আস্থাভাজন হওয়ায় তারই নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর সরাসরি বোমা হামলা করে রাতারাতি হিরো খ্যাতি অর্জন করে প্রতারক নিজাম শেখ।

এলাকাবাসি বলছে, মাঝে মাঝেই এই প্রতারক নিজাম শেখ কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে নিয়ে যায়,আবার অদৃশ্য কারণে অল্প দিনের মধ্যেই ফিরে আসে এবং সেই পুরনো প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী অবিলম্বে নিজাম শেখ ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড টুটুল আকন্দসহ সকল সহযোগিদের গ্রেফতার করে প্রতারণা ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু ও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

 

 

প্রলয়/তাসনিম তুবা