চিলমারীর অসহায় রফিকুল পরিবারের পাশে চার সাংবাদিক

- আপডেট সময় : ০৮:৪৬:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ৬৯ বার পড়া হয়েছে
নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ
এই দৃশ্য কোনো কল্পনা নয়, একেবারেই বাস্তব। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের পুটিমারী এলাকায় বাঁধের পাশে বসবাস করেন দিনমজুর রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম। তাদের সাত সন্তানের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। বাকি সন্তানদের মুখে নিয়মিত খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে প্রতিদিন লড়াই করতে হয় জীবন-মরণের চরম দ্বন্দ্বের সঙ্গে। রফিকুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। স্ত্রী স্বপ্না বেগমও অসুস্থ। তবুও সংসার ও সন্তানদের দেখাশোনার ভার একাই কাঁধে নিতে হয় তাকে। কখনো খেত থেকে কচু তুলে এনে রান্না করেন, আবার কখনো না খেয়েই সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেন।
অভাব-অনটনের কারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছেলে আবু সায়েম পড়াশোনার বদলে ঢাকায় গিয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। মায়ের অসুস্থতা আর বাবার সীমিত আয়ের কারণে সংসারের ভার কাঁধে নিতে হয়েছে এই ছোট্ট শিশুটিকে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে রফিকুল পরিবার। সন্তানদের নিয়মিত খাবার জোটে না, চিকিৎসার খরচ তো দূরের কথা।
এমন হৃদয়বিদারক খবর গত ৮ আগস্ট জাতীয় দৈনিকের একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ পড়ে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা প্রেসক্লার উলিপুরের চার সাংবাদিকের- নুর মোহাম্মদ রোকন, মোহাইমিনুল, শাহাজাহান খন্দকার ও সোহেল রানা সিপন। তারা নিজস্ব উদ্যোগে রফিকুল পরিবারের পাশে দাঁড়ান। ১৭ আগস্ট বিকেলে পরিবারটির হাতে তুলে দেন এক সপ্তাহের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।
এর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, আটা, সুজি, চিড়া, সেমাই, বিস্কুট, সবজি ও মুরগি। অসহায় রফিকুল ইসলাম বলেন, “একদিন কাজ করি, সেই টাকায় দুই দিন চলে। কিন্তু অসুস্থ স্ত্রী আর পাঁচটি সন্তানকে নিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়।” তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “ঘরে খাবার না থাকায় বাধ্য হয়ে কচু ফুল দিয়ে ডাল রান্না করেছিলাম। আজ সাংবাদিক ভাইয়েরা পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।”
সহায়তাকারী সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ রোকন বলেন, “আমরা পেশায় সাংবাদিক হলেও মানুষ হিসেবে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করেছি। সমাজের বিত্তবানরা যদি এভাবে এগিয়ে আসেন, তবে আর কোনো পরিবারকে অনাহারে দিন কাটাতে হবে না।” মানবিক আহ্বান- সমাজে অসংখ্য রফিকুল ও স্বপ্নার মতো পরিবার আছে, যারা অভাবের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রতিদিন অন্নের জন্য হাহাকার করছে। কারও সন্তান না খেয়ে ঘুমায়, আবার কারও ছোট্ট বয়সেই স্কুলের বদলে কাজে নামতে হয়। তাই সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ- একটু সহায়তা করুন, একটি পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে আপনার সামান্য দানই যথেষ্ট।