ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইসিইউতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল, দেখার কেউ নেই

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর

হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতাল নিজেই যদি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তাকে সুস্থ করবে কে! বলছিলাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর সদর হাসপাতালের কথা। নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে উঠেছে চিকিৎসার সম্পূর্ণ অযোগ্য। এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগী ও স্বজনরা।

পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব, দালালদের দ্বৈরত্ব, অপরিষ্কার পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার এই সব তো আছেই সাথে যুক্ত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক,নার্স এবং হাসপাতালের পরিছন্নতাকর্মী দের দুর্ব্যবহার। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় অধিকাংশ সময় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের চারপাশে এবং ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধে অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক সময় সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শাহিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শেরপুর সদর হাসপাতালে আসি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কিন্তু যে ধরনের সেবা হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা তার বিন্দু পরিমাণ সেবা ও পাই নাই। কোন ধরনের ঔষধ দেওয়া হয় না হাসপাতাল থেকে সব বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। চারদিক ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা, এখানে একটা রাত কাটানো তো দূরের কথা ১০ মিনিট টিকে থাকা যায় না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে

চিকিৎসা নিতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা এই ওয়ার্ডের। বসে থাকার মত পরিবেশ টাও নেই এখানে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনেই হল ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান যা কখনো পরিস্কার করা হয় না। ফলে দুর্গন্ধে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। আর বাথরুম গুলোও কখন পরিস্কার করা হয় না ফলে ব্যবহারের অনুপোযোগী তো বটেই উল্টো ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারও নিম্নমানের। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি রোগীরা আরও দুর্ভোগে পড়ছেন। নষ্ট লিফটের কারণে মাঝপথে আটকা পড়ার মত ঘটনা ঘটছে প্রায়ই, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক।

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে রয়েছে আই সি ইউ ইউনিট যা নতুন ভবনের ৯ম তলায় অবস্থিত। ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই আই সি ইউ ইউনিট টি ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর । দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এর কার্যক্রম শুরু হয় নি। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালামাল ও যন্ত্রাংশ।

কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে ডাক্তার, নার্স সংকটের কারণে এটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। জেলা সদর হাসপাতালের এই সব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে কথা বলার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে বিগত সময়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে হলেও তিনি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সেব নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অবিলম্বে হাসপাতালের পরিবেশ উন্নয়ন, সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ এবং ভোগান্তি দূরীকরণের দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আইসিইউতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল, দেখার কেউ নেই

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর

হাসপাতালে অসুস্থ মানুষ যায় ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতাল নিজেই যদি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তাকে সুস্থ করবে কে! বলছিলাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর সদর হাসপাতালের কথা। নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে উঠেছে চিকিৎসার সম্পূর্ণ অযোগ্য। এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগী ও স্বজনরা।

পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব, দালালদের দ্বৈরত্ব, অপরিষ্কার পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার এই সব তো আছেই সাথে যুক্ত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক,নার্স এবং হাসপাতালের পরিছন্নতাকর্মী দের দুর্ব্যবহার। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় অধিকাংশ সময় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের চারপাশে এবং ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধে অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক সময় সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শাহিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শেরপুর সদর হাসপাতালে আসি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কিন্তু যে ধরনের সেবা হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা তার বিন্দু পরিমাণ সেবা ও পাই নাই। কোন ধরনের ঔষধ দেওয়া হয় না হাসপাতাল থেকে সব বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। চারদিক ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা, এখানে একটা রাত কাটানো তো দূরের কথা ১০ মিনিট টিকে থাকা যায় না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে

চিকিৎসা নিতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা এই ওয়ার্ডের। বসে থাকার মত পরিবেশ টাও নেই এখানে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনেই হল ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান যা কখনো পরিস্কার করা হয় না। ফলে দুর্গন্ধে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। আর বাথরুম গুলোও কখন পরিস্কার করা হয় না ফলে ব্যবহারের অনুপোযোগী তো বটেই উল্টো ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারও নিম্নমানের। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি রোগীরা আরও দুর্ভোগে পড়ছেন। নষ্ট লিফটের কারণে মাঝপথে আটকা পড়ার মত ঘটনা ঘটছে প্রায়ই, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক।

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে রয়েছে আই সি ইউ ইউনিট যা নতুন ভবনের ৯ম তলায় অবস্থিত। ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই আই সি ইউ ইউনিট টি ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর । দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এর কার্যক্রম শুরু হয় নি। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালামাল ও যন্ত্রাংশ।

কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে ডাক্তার, নার্স সংকটের কারণে এটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। জেলা সদর হাসপাতালের এই সব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে কথা বলার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে বিগত সময়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে হলেও তিনি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সেব নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অবিলম্বে হাসপাতালের পরিবেশ উন্নয়ন, সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ এবং ভোগান্তি দূরীকরণের দাবি জানিয়েছেন।