ঢাকা ০৪:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সংকট, জনদুর্ভোগ চরমে

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৬২ বার পড়া হয়েছে

মীর সবুর আহম্মেদ, মুক্তাগাছা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সেবা প্রদানের মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের সেবাপ্রাপ্তির নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাবে জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ থেকে ১৫০০ রোগীকে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক দ্বারা সেবা দিতে হয়, যা সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে রোগীদের চাপ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও কর্মচারীদের দাবি, প্রধান কর্মকর্তার অনুপস্থিতি এবং প্রশাসনিক তদারকির অভাবের কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

অনেক রোগীর অভিযোগ, কিছু ডাক্তার সময়ের আগে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান এবং প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া, প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালদের দৌরাত্ম্য নরমাল ডেলিভারি রোগীসহ অন্যান্য রোগীদের বিভ্রান্ত করে বাইরে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়েই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়, যা রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ রোগী ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তাগাছায় এসে ভর্তি হচ্ছেন। তবে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ক্লিনার সংকট সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাহুল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ডেঙ্গু রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু ক্লিনার সংকট থাকায় পুরোপুরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ডাক্তার এবং অন্যান্য স্টাফের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে সেবার মান উন্নত হবে। হাসপাতাল চত্বরে মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য কমাতে আইনগত পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মুক্তাগাছাবাসী এবং রোগীদের স্বজনরা সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ পূরণ, চিকিৎসকদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিতি, এবং রোগীদের প্রতি জনবান্ধব আচরণের দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া, প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করা এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সংকট, জনদুর্ভোগ চরমে

আপডেট সময় : ০৯:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

মীর সবুর আহম্মেদ, মুক্তাগাছা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সেবা প্রদানের মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের সেবাপ্রাপ্তির নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাবে জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ থেকে ১৫০০ রোগীকে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক দ্বারা সেবা দিতে হয়, যা সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে রোগীদের চাপ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও কর্মচারীদের দাবি, প্রধান কর্মকর্তার অনুপস্থিতি এবং প্রশাসনিক তদারকির অভাবের কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

অনেক রোগীর অভিযোগ, কিছু ডাক্তার সময়ের আগে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান এবং প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া, প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালদের দৌরাত্ম্য নরমাল ডেলিভারি রোগীসহ অন্যান্য রোগীদের বিভ্রান্ত করে বাইরে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়েই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়, যা রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ রোগী ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তাগাছায় এসে ভর্তি হচ্ছেন। তবে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ক্লিনার সংকট সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাহুল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ডেঙ্গু রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু ক্লিনার সংকট থাকায় পুরোপুরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ডাক্তার এবং অন্যান্য স্টাফের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে সেবার মান উন্নত হবে। হাসপাতাল চত্বরে মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য কমাতে আইনগত পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মুক্তাগাছাবাসী এবং রোগীদের স্বজনরা সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ পূরণ, চিকিৎসকদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিতি, এবং রোগীদের প্রতি জনবান্ধব আচরণের দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া, প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করা এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।