ঢাকা ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছেলের ‘অপরাধে’ মাকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করলেন ইউপি সদস্য

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলায় সালিশ বৈঠকে এক নারীকে আইউব আলী নামে এক ইউপি সদস্যের (মেম্বার) লাঠিপেটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) এক মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ওই নারীর স্বামীর দাবি, ‘তিনি বিএনপি করায় তার স্ত্রীকে এমন নির্যাতন করেছেন আওয়ামী লীগের ইউপি সদস্য।

আইউব আলী সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওই ওয়ার্ডের শামসুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্ষমতার দাপটে এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমিদখলসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী ওই নারী সাত সন্তানের মা। তার স্বামী কৃষিকাজ করে ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

ওই নারীর স্বামী বলেন, ঘটনাটি আট মাস আগের। আমি চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। আওয়ামী লীগের মেম্বার আইউব আলী আমাকে ৮-৯টি মামলায় জড়িয়েছেন। ঘরে লুটপাট চালিয়েছেন। তাতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে আমার নিরপরাধ ছেলেকে চোর সব্যস্ত করে স্ত্রীকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে। এতোদিন কথা বলতে পারিনি, এখন আমি এর বিচার চাই।

ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে আশপাশে মানুষ জড়ো হয়ে আছে। মাঝখানে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছেলের অপরাধে মায়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে। একপর্যায়ে ওই নারীকে সবার সামনে উপর্যুপরি লাঠিপেটা করতে থাকেন ইউপি সদস্য আইউব আলী। এ সময় উপস্থিত অনেকে একজন নারীকে এভাবে না মারার অনুরোধ করলেও কথা শোনেননি ইউপি সদস্য। আবার অনেকেই ওই নারীকে দায়ী করে গালাগালি করতে থাকেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করা হয়। তারপর আমাকে দোষী করা হয়। মেম্বার আইয়ুব আলী সবার সামনে আমাকে লাঠিপেটা করেন। আমি তখন অপরাধীর মা তাই কারও কাছে ন্যায়বিচার পাইনি। ঘটনাটি আমি কাউকে জানাতে পারিনি কারণ আইয়ুব আলী মেম্বার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য।’

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, ‘আমার ঘরবাড়ি লুট করা হয়েছে। আমাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটা অনেক আগের। তবে আমরা মুখ খুলতে পারতাম না। আমাদের অনেক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি সবার শাস্তির দাবি করছি।’

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আইউব আলী ভিডিওর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি আট মাস আগের। অভিযুক্ত পরিবারটি আমার আত্মীয় হয়। সমাজ রক্ষার স্বার্থে অপরাধী ছেলেকে আশ্রয় দেওয়ায় তার মাকে শাসন করেছি।

জনপ্রতিনিধি হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন কেন জানতে চাইলে দুইবারের এ ইউপি সদস্য বলেন, তখন বুঝতে পারিনি। আসলে বিষয়টি এভাবে করা আমার উচিত হয়নি। এখন বুঝতে পারছি এটা খুব অন্যায় হয়ে গেছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

আরও পড়ুন: 

এ বিষয়ে চরজব্বর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘আপনার কাছে শুনলাম মাত্র আমি ভিডিওটা দেখিনি। এছাড়াও কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। আপনার কাছে থাকলে আমাকে ভিডিওটা দিয়েন। এছাড়াও যদি অভিযোগ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ছেলের ‘অপরাধে’ মাকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করলেন ইউপি সদস্য

আপডেট সময় : ১২:৪৫:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলায় সালিশ বৈঠকে এক নারীকে আইউব আলী নামে এক ইউপি সদস্যের (মেম্বার) লাঠিপেটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) এক মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ওই নারীর স্বামীর দাবি, ‘তিনি বিএনপি করায় তার স্ত্রীকে এমন নির্যাতন করেছেন আওয়ামী লীগের ইউপি সদস্য।

আইউব আলী সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওই ওয়ার্ডের শামসুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্ষমতার দাপটে এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমিদখলসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী ওই নারী সাত সন্তানের মা। তার স্বামী কৃষিকাজ করে ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

ওই নারীর স্বামী বলেন, ঘটনাটি আট মাস আগের। আমি চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। আওয়ামী লীগের মেম্বার আইউব আলী আমাকে ৮-৯টি মামলায় জড়িয়েছেন। ঘরে লুটপাট চালিয়েছেন। তাতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে আমার নিরপরাধ ছেলেকে চোর সব্যস্ত করে স্ত্রীকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে। এতোদিন কথা বলতে পারিনি, এখন আমি এর বিচার চাই।

ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে আশপাশে মানুষ জড়ো হয়ে আছে। মাঝখানে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছেলের অপরাধে মায়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে। একপর্যায়ে ওই নারীকে সবার সামনে উপর্যুপরি লাঠিপেটা করতে থাকেন ইউপি সদস্য আইউব আলী। এ সময় উপস্থিত অনেকে একজন নারীকে এভাবে না মারার অনুরোধ করলেও কথা শোনেননি ইউপি সদস্য। আবার অনেকেই ওই নারীকে দায়ী করে গালাগালি করতে থাকেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করা হয়। তারপর আমাকে দোষী করা হয়। মেম্বার আইয়ুব আলী সবার সামনে আমাকে লাঠিপেটা করেন। আমি তখন অপরাধীর মা তাই কারও কাছে ন্যায়বিচার পাইনি। ঘটনাটি আমি কাউকে জানাতে পারিনি কারণ আইয়ুব আলী মেম্বার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য।’

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, ‘আমার ঘরবাড়ি লুট করা হয়েছে। আমাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটা অনেক আগের। তবে আমরা মুখ খুলতে পারতাম না। আমাদের অনেক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি সবার শাস্তির দাবি করছি।’

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আইউব আলী ভিডিওর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি আট মাস আগের। অভিযুক্ত পরিবারটি আমার আত্মীয় হয়। সমাজ রক্ষার স্বার্থে অপরাধী ছেলেকে আশ্রয় দেওয়ায় তার মাকে শাসন করেছি।

জনপ্রতিনিধি হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন কেন জানতে চাইলে দুইবারের এ ইউপি সদস্য বলেন, তখন বুঝতে পারিনি। আসলে বিষয়টি এভাবে করা আমার উচিত হয়নি। এখন বুঝতে পারছি এটা খুব অন্যায় হয়ে গেছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

আরও পড়ুন: 

এ বিষয়ে চরজব্বর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘আপনার কাছে শুনলাম মাত্র আমি ভিডিওটা দেখিনি। এছাড়াও কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। আপনার কাছে থাকলে আমাকে ভিডিওটা দিয়েন। এছাড়াও যদি অভিযোগ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’