মঠবাড়িয়ার এক মাদ্রাসায় ৭ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক-কর্মচারী ১৬ জন

- আপডেট সময় : ০৪:০৪:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
- / ৯৩ বার পড়া হয়েছে
মো. রুম্মান হাওলাদার, মঠবাড়িয়া
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার একটি মাদ্রাসায় কাগজ-কলমে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা মেলে ৭ জন শিক্ষার্থী। তবে প্রতিদিন ক্লাশ করে এর থেকেও কম শিক্ষার্থী। অথচো ওই মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ জন। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা বেশি হলেও কোন জবাবদিহিতা ছাড়া নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছে কর্তৃপক্ষ। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া নেহাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসাটি যেন দুর্ণীতির এক আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
১৯৭৮ সালে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। দীর্ঘ দিন ভালোভাবে কার্যক্রম চললেও ২০০৭ সালের সিডরের পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দেউলিয়া পর্যায়। মাসের-পর মাস প্রতিষ্ঠান প্রধান (সুপার) মো. আনিসুর রহমান অনুপস্থিত থাকেন এবং মাঝে-মাঝে গিয়ে অফিস সহায়ক মধু মিয়ার সহযোগিতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত করলেও অজ্ঞাত করানে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
একাধিক বার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা, বিভিন্ন শ্রেনিকক্ষে ৬-৭ জন শিক্ষার্থী। ক্লাসরুমে সরকারের দেয়া বইগুলো পড়ে আছে কিন্তু বইগুলো বিতরণ করার মতন শিক্ষার্থী নেই। ১২ জন শিক্ষক থাকলেও উপস্থিত থাকেন ৬-৮ জন শিক্ষক। রোববার ষষ্ঠ শ্রেণীতে ৪ জন এবং ৭ম শ্রেণীতে ৩ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো। বিদ্যালয়টির ৮ম ও নবম-দশম শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী শূণ্য।
নাম না প্রকাশে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা হাজিরা খাতায় উপস্থিতি স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন। আর কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে নেই ল্যাব এবং ল্যাপটপ। চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। কাগজ-কলমে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫-২০ জনও পাঠ গ্রহণ করে না। এছাড়াও কম্পিউটার শিক্ষক এমাদুল হক এর কম্পিউটারের বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নেই। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য অফিস সহায়ক মধু মিয়া ও সুপার যোগসাজশ করে সকল সুবিধা গ্রহণ করেন এবং নিয়োগ বানিজ্য করে থাকে। তাদের কারনেই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস। এখানে সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়না।
দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা আল আমীন হোসেন ম্দ্রাসাটির দ্বৈণ্যদশার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বাদশা ম্দ্রাসাটির দ্বৈণ্যদশার সত্যতা অকপটে স্বীকার করেণ। তবে তিনি কারণ উল্লেখ করেণনি। কম্পিউটার শিক্ষক এমাদুল হক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুপারের গাফলতির কারণে মাদ্রাসাটির এ অবস্থা।
আরও পড়ুন:
সহকারী সুপার মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের শেষ দিকে যোগদান করার পর দেখতে পাই শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। শুধুমাত্র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য, অফিস সহায়ক মধু মিয়া ও সুপার মো. আনিসুর রহমান এর কারনেই মাদ্রাসাটির এ অবস্থা।
অফিস সহায়ক মধু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, কয় টাহা লগবে ! এরকম প্রতিবছর তদন্ত হয়। কাগজপাতি সব সুপারের কাছে সঠিক ভাবে জমা আছে। মাদ্রাসা সুপার মো. আনিসুর রহমান এর মুঠোফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেণ নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, ‘শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি একাধিকবার পরিদর্শন করেছি’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাউয়ূম বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।