ঢাকা ১০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে ৩ যুবকের সলিল সমাধি

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৬:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১১৮ বার পড়া হয়েছে

শরিফুল রোমান, মুকসুদপুর

সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের তিন যুবকের সলিল সমাধি হয়েছে।

মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে নিহত তিন যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ছাড়াও সাইফুল ব্যাপারী নামে আরও এক যুবকের খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের নিহতদের মরদেহ ও নিখোঁজ যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত দেশে আনার জন্য সরকারে নিকট দাবি জানিয়েছে।

নিহতরা হলেন, মুকসুদপুরের রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) ও মোল্লাদী গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।

রফিকুল শেখের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ছোট বেলায় মা-বাবা হারায় রফিকুল। এরপর থেকে চাচার কাছে বড় হয়। তাই চাচার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ইতালিতে যাওয়ার আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে স্বপ্নের সমাধি ঘটলো রফিকুলের।

একই অবস্থা আরাফসান ইসলাম আশিকের। ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৭ লাখ টাকা দেন পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে। লিবিয়া যাওয়ার পর তিন থেকে চার বার কথা হয়। এরপর থেকে আর খোঁজ ছিলো না আশিকের।

রফিকুলের চাচা মো. জয়নাল শেখ জানান, স্বপ্ন পূরণ করতে ইতালি যাওয়ার জন্য নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রেই প্রাণ দিতে হলো রফিকুলের। তার মরদেহ দ্রুত দেশে আনার দাবি জানান।

নিহত আশিকের বাবা মেহেদী শেখ বলেন, ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করি। পরে পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে সেই টাকা দেই। লিবিয়া যাওয়ার পর কয়েকবার কথা হয়। পরে জানতে পারি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আমার ছেলে মারা গেছে। দালাল বাবু হাওলাদারের শাস্তি চাই।

ছাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার বলেন, ‘লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে তিন দফা টাকা নিয়েছে। ২৪ লাখ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও টাকা নিয়েছে ২৬ লাখ। আমি দ্রুত মরদেহ ফেরত পাওয়া পাশাপশি দালালদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। নিহতদের পরিবারের কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর লিবিয়ার ব্রেগা উপকূল থেকে এ পর্যন্ত ২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সবাই বাংলাদেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট।

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে শনিবার রাত পৌনে ১০টায় ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আশঙ্কার কথা জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রেগা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজদাদিয়ায় ২০টি মরদেহ ইতোমধ্যেই সমাহিত করা হয়েছে। মরদেহগুলো পচন ধরতে শুরু করেছিল। কেউই তাদের পরিচয় কিংবা জাতীয়তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ধারণা, তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।

নিউজটি শেয়ার করুন

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে ৩ যুবকের সলিল সমাধি

আপডেট সময় : ১১:৩৬:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শরিফুল রোমান, মুকসুদপুর

সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের তিন যুবকের সলিল সমাধি হয়েছে।

মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে নিহত তিন যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ছাড়াও সাইফুল ব্যাপারী নামে আরও এক যুবকের খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের নিহতদের মরদেহ ও নিখোঁজ যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত দেশে আনার জন্য সরকারে নিকট দাবি জানিয়েছে।

নিহতরা হলেন, মুকসুদপুরের রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) ও মোল্লাদী গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।

রফিকুল শেখের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ছোট বেলায় মা-বাবা হারায় রফিকুল। এরপর থেকে চাচার কাছে বড় হয়। তাই চাচার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ইতালিতে যাওয়ার আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে স্বপ্নের সমাধি ঘটলো রফিকুলের।

একই অবস্থা আরাফসান ইসলাম আশিকের। ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৭ লাখ টাকা দেন পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে। লিবিয়া যাওয়ার পর তিন থেকে চার বার কথা হয়। এরপর থেকে আর খোঁজ ছিলো না আশিকের।

রফিকুলের চাচা মো. জয়নাল শেখ জানান, স্বপ্ন পূরণ করতে ইতালি যাওয়ার জন্য নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রেই প্রাণ দিতে হলো রফিকুলের। তার মরদেহ দ্রুত দেশে আনার দাবি জানান।

নিহত আশিকের বাবা মেহেদী শেখ বলেন, ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করি। পরে পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে সেই টাকা দেই। লিবিয়া যাওয়ার পর কয়েকবার কথা হয়। পরে জানতে পারি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আমার ছেলে মারা গেছে। দালাল বাবু হাওলাদারের শাস্তি চাই।

ছাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার বলেন, ‘লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে তিন দফা টাকা নিয়েছে। ২৪ লাখ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও টাকা নিয়েছে ২৬ লাখ। আমি দ্রুত মরদেহ ফেরত পাওয়া পাশাপশি দালালদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। নিহতদের পরিবারের কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর লিবিয়ার ব্রেগা উপকূল থেকে এ পর্যন্ত ২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সবাই বাংলাদেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট।

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে শনিবার রাত পৌনে ১০টায় ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আশঙ্কার কথা জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রেগা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজদাদিয়ায় ২০টি মরদেহ ইতোমধ্যেই সমাহিত করা হয়েছে। মরদেহগুলো পচন ধরতে শুরু করেছিল। কেউই তাদের পরিচয় কিংবা জাতীয়তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ধারণা, তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।