ঢাকা ১২:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সে যে গেল আর এলো না, আমার আর মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে’

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৮২ বার পড়া হয়েছে

নবজাতক মেয়েকে কোলে নিয়ে রামেক হাসপাতাল মর্গের মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা: ফাইল ছবি

রাজশাহী প্রতিনিধি

সে যে গেল আর এলো না, এখন কী হবে আমাদের, আমার আর মেয়ের দায়িত্ব এখন কে নেবে’ ‘নবজাতক মেয়েকে রেখেই চলে যেতে বাধ্য হলো মাসুদ। তাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মেয়ের কাছ থেকে, আমার কাছ থেকে। নবজাতক শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে বসে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা।

তিনি জানান, ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের জনক হয়েছেন মাসুদ। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলেন মাসুদা। কিন্তু ঘাতকরা তাকে সেই সুযোগ আর দিল না। মেয়ের আকিকার আগেই মাসুদকে কেড়ে নিয়েছে। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাসুদের লাশ নিতে মর্গে এসেছি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বিনোদপুরে হামলার শিকার হয়ে মারা যান মাসুদ। নবজাতক মেয়ের জন্য ওষুধ নিয়ে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে নবজাতক কন্যাসন্তানকে নিয়ে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন বিউটি আরা। হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

বিউটি আরা বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে গিয়ে উঠি। নিজে অসুস্থ থাকায় সংসাসের কাজকর্মও ঠিকভাবে করতে পারতাম না। মাসুদ মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে এলো না।

তিনি বলেন, দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম। পরিবারের কেউ আমাদের মেনে নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকি। মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য কোয়ার্টার পেয়েছিল। সে নিজেও অসুস্থ ছিল। ১০ বছর ধরে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল না। কৃত্রিম পায়ে খুড়িয়ে চলত। মাসুদের কী দোষ ছিল? সে তো আন্দোলনের সময় অফিসে যেত, অফিস শেষ হলে বাসায় ফিরত।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এক পা না থাকা একটি পঙ্গু মানুষ কীভাবে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে-এটি তারা বুঝতে পারছেন না!

রোববার দুপুরে রামেক হাসপাতালে মাসুদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম ও গণপিটুনি। তবে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

নগরীর মতিহার থানার ওসি আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার পর্যন্ত মাসুদের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ থানায় এজাহার দেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ই-পেপার

সে যে গেল আর এলো না, আমার আর মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে’

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজশাহী প্রতিনিধি

সে যে গেল আর এলো না, এখন কী হবে আমাদের, আমার আর মেয়ের দায়িত্ব এখন কে নেবে’ ‘নবজাতক মেয়েকে রেখেই চলে যেতে বাধ্য হলো মাসুদ। তাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মেয়ের কাছ থেকে, আমার কাছ থেকে। নবজাতক শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে বসে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা।

তিনি জানান, ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের জনক হয়েছেন মাসুদ। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলেন মাসুদা। কিন্তু ঘাতকরা তাকে সেই সুযোগ আর দিল না। মেয়ের আকিকার আগেই মাসুদকে কেড়ে নিয়েছে। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাসুদের লাশ নিতে মর্গে এসেছি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বিনোদপুরে হামলার শিকার হয়ে মারা যান মাসুদ। নবজাতক মেয়ের জন্য ওষুধ নিয়ে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে নবজাতক কন্যাসন্তানকে নিয়ে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন বিউটি আরা। হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

বিউটি আরা বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে গিয়ে উঠি। নিজে অসুস্থ থাকায় সংসাসের কাজকর্মও ঠিকভাবে করতে পারতাম না। মাসুদ মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে এলো না।

তিনি বলেন, দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম। পরিবারের কেউ আমাদের মেনে নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকি। মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য কোয়ার্টার পেয়েছিল। সে নিজেও অসুস্থ ছিল। ১০ বছর ধরে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল না। কৃত্রিম পায়ে খুড়িয়ে চলত। মাসুদের কী দোষ ছিল? সে তো আন্দোলনের সময় অফিসে যেত, অফিস শেষ হলে বাসায় ফিরত।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এক পা না থাকা একটি পঙ্গু মানুষ কীভাবে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে-এটি তারা বুঝতে পারছেন না!

রোববার দুপুরে রামেক হাসপাতালে মাসুদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম ও গণপিটুনি। তবে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

নগরীর মতিহার থানার ওসি আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার পর্যন্ত মাসুদের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ থানায় এজাহার দেননি।