ঢাকা ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জিয়াউর রহমান এক দূরদর্শী নেতা ও দেশ গঠনের রূপকার: মোহাম্মদ মাসুদ ভালুকায় ইয়াবাসহ ৪ মাদক কারবারি গ্রেফতার রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি বছরই ৩টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন: প্রধান উপদেষ্টা এদেশে সবার অধিকার সমান, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ থাকবে না: সেনাপ্রধান ইসলামী জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে খেলাফত আন্দোলন জামায়াত ও এনসিপির মতো কিছু গোষ্ঠী চায় না দেশে নির্বাচন হোক: দুলু কারচুপি প্রতিহতের প্রস্তুতি নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ত্রিশালে জমকালো আয়োজনে ক্রিকেট ফাইনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন ‘জুনিয়র টাইগার’ দুর্গাপুরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আনন্দ র‌্যালি চাঁদাবাজদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভূমি সেবায় মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন ঈশ্বরগঞ্জের এসিল্যান্ড ইকবাল হোসেন

আতিকুর রহমান শিপন, ঈশ্বরগঞ্জ সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ০৭:২৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • / ৩৩২ বার পড়া হয়েছে

একটি দরজা, যেটি সবসময় খোলা। এক মুখ যেটি ভরসা দেয়, ভয় নয়। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের দিকে এখন এমনভাবেই তাকায় সাধারণ মানুষ। আর এর পেছনের মানুষটি এসিল্যান্ড মো. ইকবাল হোসেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি যেন ভূমি সেবাকে নিয়ে এসেছেন মানুষের দোরগোড়ায়, সরলতা, সততা আর সাহসিকতার ছায়ায়। গাজীপুরের টঙ্গীর এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ইকবাল হোসেন বেড়ে উঠেছেন সংগ্রাম আর স্বপ্নের মিশেলে। বাবার কঠোর পরিশ্রম আর মায়ের নিঃশব্দ আত্মত্যাগ তাঁকে শিখিয়েছে মানুষের কষ্ট বুঝতে, পাশে দাঁড়াতে।

শৈশব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর বিসিএস এই পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি একটাই বিশ্বাস নিয়ে: প্রশাসন মানে শাসন নয়, সেবা। ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসনে যোগ দিয়েই তিনি উপলব্ধি করেন, ভূমি অফিসের কাজ কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ নয়, এটা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার লড়াই। তাই তিনি বদলে ফেলেন চিরচেনা কাঠামো। ‘উন্মুক্ত দরজার নীতি’ চালু করে অফিসে আনেন উষ্ণতা। দালাল ছাড়া, অনুমতি ছাড়া, যে কেউ এসে কথা বলতে পারে তাঁর সঙ্গে এটাই তাঁর শাসন নয়, সহমর্মিতার নমুনা।

গ্রামে গ্রামে গিয়ে শুনেছেন মানুষের অভিযোগ। খাস জমি নিরূপণ করে সঠিকভাবে বন্দোবস্ত দিয়েছেন, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে জনগণকে করেছেন সচেতন। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় এনেছেন গতি, যা কমিয়েছে ভোগান্তি, বাড়িয়েছে স্বচ্ছতা। ভূমি কর আদায়ে এসেছে রেকর্ড সাফল্য, যা পরিণত হয়েছে জনগণের জন্য রাস্তাঘাট, পার্ক আর উন্নয়নে বিনিয়োগে।

তবে শুধু ভূমি সেবা নয়, মানবিক উন্নয়নেও তিনি পিছিয়ে নেই। শিশুদের খেলাধুলার জন্য পরিকল্পনা করেছেন একটি পার্ক নির্মাণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ করেছেন অবহেলিত শ্মশানভূমি। দুর্যোগে ছুটে গেছেন ত্রাণ নিয়ে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন হাতে ধরে। ঈদ হোক বা বন্যা, মানুষ জানে, ইকবাল স্যার থাকবেন সবার আগে। এই সব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন “শ্রেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ভূমি)” পুরস্কার। তবে তাঁর চোখে সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো সাধারণ মানুষের মুখের হাসি।

কোনো বৃদ্ধ যখন বলেন, “বাবারে, এবার একটু শান্তি পেলাম”, কিংবা কোনো নারী বলেন, “স্যার, নিজের নামে কাগজ পাইলাম” এই কথাগুলোই তাঁর প্রেরণা। স্থানীয়দের মতে, ইকবাল স্যারের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন সাদা ও ভালো মনের মানুষ। একজন অফিসারের কড়া চেহারার আড়ালে যিনি রাখেন এক মানবিক হৃদয়। জমি নিয়ে যে অফিসে একসময় মানুষ ঢুকত কাঁপা কাঁপা হাতে, সেই অফিস এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বাসের জায়গা। নিজেকে কখনো ‘কর্তা’ ভাবেন না মো. ইকবাল হোসেন।

বলেন, “আমি জনগণের কর্মচারী। ভূমি অধিকার কোনো দয়া নয়, এটা মানুষের প্রাপ্য।” তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে ভূমি অফিসের সংস্কৃতি, অসহায় মানুষরা এখন জানেন, আইনের সঙ্গে আছেন একজন হৃদয়ের মানুষও। মো. ইকবাল হোসেন কেবল একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন—তিনি একজন নীরব বিপ্লবের পথিক। ভূমি প্রশাসনের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন এক মানবিক বার্তা—যেখানে রাষ্ট্র মানে কেবল নির্দেশ নয়, বরং ভালোবাসা, সহানুভূতি আর পরিবর্তনের অঙ্গীকার।

 

প্রলয়/মোমিন তালুকদার

নিউজটি শেয়ার করুন

ভূমি সেবায় মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন ঈশ্বরগঞ্জের এসিল্যান্ড ইকবাল হোসেন

আপডেট সময় : ০৭:২৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

একটি দরজা, যেটি সবসময় খোলা। এক মুখ যেটি ভরসা দেয়, ভয় নয়। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের দিকে এখন এমনভাবেই তাকায় সাধারণ মানুষ। আর এর পেছনের মানুষটি এসিল্যান্ড মো. ইকবাল হোসেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি যেন ভূমি সেবাকে নিয়ে এসেছেন মানুষের দোরগোড়ায়, সরলতা, সততা আর সাহসিকতার ছায়ায়। গাজীপুরের টঙ্গীর এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ইকবাল হোসেন বেড়ে উঠেছেন সংগ্রাম আর স্বপ্নের মিশেলে। বাবার কঠোর পরিশ্রম আর মায়ের নিঃশব্দ আত্মত্যাগ তাঁকে শিখিয়েছে মানুষের কষ্ট বুঝতে, পাশে দাঁড়াতে।

শৈশব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর বিসিএস এই পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি একটাই বিশ্বাস নিয়ে: প্রশাসন মানে শাসন নয়, সেবা। ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসনে যোগ দিয়েই তিনি উপলব্ধি করেন, ভূমি অফিসের কাজ কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ নয়, এটা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার লড়াই। তাই তিনি বদলে ফেলেন চিরচেনা কাঠামো। ‘উন্মুক্ত দরজার নীতি’ চালু করে অফিসে আনেন উষ্ণতা। দালাল ছাড়া, অনুমতি ছাড়া, যে কেউ এসে কথা বলতে পারে তাঁর সঙ্গে এটাই তাঁর শাসন নয়, সহমর্মিতার নমুনা।

গ্রামে গ্রামে গিয়ে শুনেছেন মানুষের অভিযোগ। খাস জমি নিরূপণ করে সঠিকভাবে বন্দোবস্ত দিয়েছেন, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে জনগণকে করেছেন সচেতন। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় এনেছেন গতি, যা কমিয়েছে ভোগান্তি, বাড়িয়েছে স্বচ্ছতা। ভূমি কর আদায়ে এসেছে রেকর্ড সাফল্য, যা পরিণত হয়েছে জনগণের জন্য রাস্তাঘাট, পার্ক আর উন্নয়নে বিনিয়োগে।

তবে শুধু ভূমি সেবা নয়, মানবিক উন্নয়নেও তিনি পিছিয়ে নেই। শিশুদের খেলাধুলার জন্য পরিকল্পনা করেছেন একটি পার্ক নির্মাণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ করেছেন অবহেলিত শ্মশানভূমি। দুর্যোগে ছুটে গেছেন ত্রাণ নিয়ে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন হাতে ধরে। ঈদ হোক বা বন্যা, মানুষ জানে, ইকবাল স্যার থাকবেন সবার আগে। এই সব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন “শ্রেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ভূমি)” পুরস্কার। তবে তাঁর চোখে সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো সাধারণ মানুষের মুখের হাসি।

কোনো বৃদ্ধ যখন বলেন, “বাবারে, এবার একটু শান্তি পেলাম”, কিংবা কোনো নারী বলেন, “স্যার, নিজের নামে কাগজ পাইলাম” এই কথাগুলোই তাঁর প্রেরণা। স্থানীয়দের মতে, ইকবাল স্যারের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন সাদা ও ভালো মনের মানুষ। একজন অফিসারের কড়া চেহারার আড়ালে যিনি রাখেন এক মানবিক হৃদয়। জমি নিয়ে যে অফিসে একসময় মানুষ ঢুকত কাঁপা কাঁপা হাতে, সেই অফিস এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বাসের জায়গা। নিজেকে কখনো ‘কর্তা’ ভাবেন না মো. ইকবাল হোসেন।

বলেন, “আমি জনগণের কর্মচারী। ভূমি অধিকার কোনো দয়া নয়, এটা মানুষের প্রাপ্য।” তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে ভূমি অফিসের সংস্কৃতি, অসহায় মানুষরা এখন জানেন, আইনের সঙ্গে আছেন একজন হৃদয়ের মানুষও। মো. ইকবাল হোসেন কেবল একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন—তিনি একজন নীরব বিপ্লবের পথিক। ভূমি প্রশাসনের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন এক মানবিক বার্তা—যেখানে রাষ্ট্র মানে কেবল নির্দেশ নয়, বরং ভালোবাসা, সহানুভূতি আর পরিবর্তনের অঙ্গীকার।

 

প্রলয়/মোমিন তালুকদার