ঢাকা ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রয়াত সাংবাদিক রিমনের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন ঋণের দায়ে ২ সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা সারাদেশে আওয়াজ উঠছে বিএনপি এবার ক্ষমতায় আসবে: আমান উল্লাহ আমান দেশের ক্রান্তিকালীন সময়ে জিয়া পরিবারই নেতৃত্ব দেয়: ব্যারিস্টার অমি মোমেনা বেওয়ার কান্নায় সাড়া দিয়ে সহায়তায় ছুটলেন উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ আটক ১ বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ত্রিশালে কুরআনখানী ও দোয়া মাহফিল কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণের জোরালো দাবি
সরকারি দপ্তর না রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল?

কুড়িগ্রামে সাবেক ফ্যাসিস্ট এমপির বাড়িতে এখনও জাতীয় মহিলা সংস্থা

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:২৭:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিতর্কিত ফ্যাসিস্ট নেতা এম এ মতিনের ব্যক্তিগত বাড়িতে এখনও কার্যক্রম চালাচ্ছে জাতীয় মহিলা সংস্থার উপজেলা কার্যালয়। সরকারি দপ্তরের জন্য নিজস্ব ভবন না থাকায় ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম চালানো আইনসিদ্ধ হলেও ফ্যাসিস্ট রাজনীতির পরিচিত মুখ এম এ মতিনের বাড়িকে সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করায় জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবেই অফিস ওই বাড়িতে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালের শেষের দিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় মহিলা সংস্থার উলিপুর শাখা গঠিত হয়। শুরুতেই উপজেলা অফিসটি বসানো হয় জোদ্দার পাড়ায় অবস্থিত অধ্যক্ষ নাসিমা বানুর বাড়িতে। তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেত্রী ও ওই সময় জেলা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা শাখায় চেয়ারম্যান করা হয় দলীয় আরেক নেত্রী রীতা সরকারকে। শুরু থেকেই মহিলা সংস্থার অফিস আওয়ামী লীগপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সংস্থার কার্যক্রম, কর্মকর্তা নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অর্থ বরাদ্দ সব কিছুতেই রাজনৈতিক প্রভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। উলিপুরেও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মতিনের বাড়ি ঘেরাও করে ছাত্র-জনতা। তাদের রোষানলে পড়ে ওই ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের একাংশ এবং মহিলা সংস্থার ফার্নিচারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দপ্তরটি স্থানান্তর না করে ভবনের পেছনের অংশ সংস্কার করে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। এই সিদ্ধান্তে মূল ভূমিকা রাখেন মহিলা সংস্থার মাঠ সমন্বয়কারী শংকর কুমার, যিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

ফলে প্রশ্ন উঠছে—সরকারি দপ্তর পরিচালনায় কীভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এতটা গভীরভাবে ঢুকে পড়েছে? ভাড়া এখনো মাসে ৮ হাজার টাকা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখনো প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা করে ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে সাবেক এমপি মতিনের প্রতিনিধি বা স্বজনের কাছে। অর্থাৎ সরকার নিজের অর্থেই এক সময়ের বিতর্কিত ফ্যাসিস্ট এমপিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে—যা সরকারি দায়িত্ববোধ এবং নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একজন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকারি দপ্তর ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে থাকতে পারে, তবে সেটি হতে হবে নিরপেক্ষ, রাজনৈতিকভাবে ক্লিন ব্যক্তির সম্পত্তি। কিন্তু এখানে তা হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতেও সাহস পায় না।” সচেতন মহলের ক্ষোভ।

এই ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিক, সচেতন নাগরিকসহ নানা মহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ- একদিকে যেখানে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার ও জবাবদিহিতার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে এক ফ্যাসিস্টের বাড়িতে সরকারি দপ্তর রেখে রাষ্ট্রই যেন তাকে পুনর্বাসন করছে। তারা বলেন, “এটি শুধু নীতিমালার লঙ্ঘন নয়, বরং একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক চরিত্রকে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা। সরকারি অর্থে সাবেক ক্ষমতাবানকে পুনর্বাসন করার নজির গণতন্ত্রবিরোধী ও ন্যায়ের পরিপন্থী।”

প্রশাসনের অবস্থান- বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জাতীয় মহিলা সংস্থার উপজেলা চেয়ারম্যান নয়ন কুমার সাহা বলেন, “এটা আমরা দেখছি। খুব দ্রুতই অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, দায়িত্বে অবহেলা এবং জনস্বার্থ উপেক্ষা করার বিষয়টি নিয়ে এখনও প্রশাসনের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জনমনে প্রশ্ন- জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন—একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারি দপ্তর কীভাবে এতদিন ধরে একটি বিতাড়িত রাজনীতিকের বাড়িতে রয়ে যায়? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

সরকারি দপ্তর না রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল?

কুড়িগ্রামে সাবেক ফ্যাসিস্ট এমপির বাড়িতে এখনও জাতীয় মহিলা সংস্থা

আপডেট সময় : ০৭:২৭:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিতর্কিত ফ্যাসিস্ট নেতা এম এ মতিনের ব্যক্তিগত বাড়িতে এখনও কার্যক্রম চালাচ্ছে জাতীয় মহিলা সংস্থার উপজেলা কার্যালয়। সরকারি দপ্তরের জন্য নিজস্ব ভবন না থাকায় ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম চালানো আইনসিদ্ধ হলেও ফ্যাসিস্ট রাজনীতির পরিচিত মুখ এম এ মতিনের বাড়িকে সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করায় জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবেই অফিস ওই বাড়িতে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালের শেষের দিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় মহিলা সংস্থার উলিপুর শাখা গঠিত হয়। শুরুতেই উপজেলা অফিসটি বসানো হয় জোদ্দার পাড়ায় অবস্থিত অধ্যক্ষ নাসিমা বানুর বাড়িতে। তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেত্রী ও ওই সময় জেলা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা শাখায় চেয়ারম্যান করা হয় দলীয় আরেক নেত্রী রীতা সরকারকে। শুরু থেকেই মহিলা সংস্থার অফিস আওয়ামী লীগপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সংস্থার কার্যক্রম, কর্মকর্তা নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অর্থ বরাদ্দ সব কিছুতেই রাজনৈতিক প্রভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। উলিপুরেও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মতিনের বাড়ি ঘেরাও করে ছাত্র-জনতা। তাদের রোষানলে পড়ে ওই ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের একাংশ এবং মহিলা সংস্থার ফার্নিচারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দপ্তরটি স্থানান্তর না করে ভবনের পেছনের অংশ সংস্কার করে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। এই সিদ্ধান্তে মূল ভূমিকা রাখেন মহিলা সংস্থার মাঠ সমন্বয়কারী শংকর কুমার, যিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

ফলে প্রশ্ন উঠছে—সরকারি দপ্তর পরিচালনায় কীভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এতটা গভীরভাবে ঢুকে পড়েছে? ভাড়া এখনো মাসে ৮ হাজার টাকা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখনো প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা করে ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে সাবেক এমপি মতিনের প্রতিনিধি বা স্বজনের কাছে। অর্থাৎ সরকার নিজের অর্থেই এক সময়ের বিতর্কিত ফ্যাসিস্ট এমপিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে—যা সরকারি দায়িত্ববোধ এবং নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একজন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকারি দপ্তর ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে থাকতে পারে, তবে সেটি হতে হবে নিরপেক্ষ, রাজনৈতিকভাবে ক্লিন ব্যক্তির সম্পত্তি। কিন্তু এখানে তা হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতেও সাহস পায় না।” সচেতন মহলের ক্ষোভ।

এই ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিক, সচেতন নাগরিকসহ নানা মহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ- একদিকে যেখানে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার ও জবাবদিহিতার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে এক ফ্যাসিস্টের বাড়িতে সরকারি দপ্তর রেখে রাষ্ট্রই যেন তাকে পুনর্বাসন করছে। তারা বলেন, “এটি শুধু নীতিমালার লঙ্ঘন নয়, বরং একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক চরিত্রকে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা। সরকারি অর্থে সাবেক ক্ষমতাবানকে পুনর্বাসন করার নজির গণতন্ত্রবিরোধী ও ন্যায়ের পরিপন্থী।”

প্রশাসনের অবস্থান- বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জাতীয় মহিলা সংস্থার উপজেলা চেয়ারম্যান নয়ন কুমার সাহা বলেন, “এটা আমরা দেখছি। খুব দ্রুতই অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, দায়িত্বে অবহেলা এবং জনস্বার্থ উপেক্ষা করার বিষয়টি নিয়ে এখনও প্রশাসনের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জনমনে প্রশ্ন- জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন—একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারি দপ্তর কীভাবে এতদিন ধরে একটি বিতাড়িত রাজনীতিকের বাড়িতে রয়ে যায়? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।