ইমরান খানের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিভ্রান্ত পিটিআই নেতৃত্ব

- আপডেট সময় : ০৬:৪৮:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ৮ বার পড়া হয়েছে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অসঙ্গত রাজনৈতিক অবস্থান এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) শীর্ষ নেতৃত্ব বিভ্রান্ত, হতাশ এবং ক্রমেই বিভক্ত হয়ে পড়ছে।
মিডিয়া প্রতিবেদনে জানা গেছে, মঙ্গলবার আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন দলের কিছু সিনিয়র নেতা। সেখানে ইমরান খান সামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপের জন্য একটি ইঙ্গিত দেন। তবে একইসঙ্গে তিনি একটি ‘লাল রেখা’ টেনে দেন—সরকার বা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)-এর সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। খবর জিও নিউজের।
কিন্তু এর ঠিক একদিন পর, ইমরান খানের মন্তব্যে নাটকীয় মোড় আসে। বুধবার কারাগারে তাকে দেখতে গিয়ে তার বোনেরা জানান, তিনি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করার ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ফিল্ড মার্শাল না হয়ে বরং তাকে ‘রাজা’ ঘোষণা করা উচিত ছিল।
এ মন্তব্যে পিটিআই নেতাদের মধ্যে নতুন করে হতাশা ছড়িয়েছে। এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যখন আমাদের নেতা সরাসরি সামরিক নেতৃত্বকে ব্যঙ্গ করেন, তখন আমরা কিভাবে গঠনমূলক সংলাপে যেতে পারি?
অবস্থার আরও জটিলতা বাড়ায় ইমরান খানের বোন আলিমা খানের এ মন্তব্য প্রচার, যার আগে পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান ইতোমধ্যেই আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হওয়ার জন্য গণমাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
একজন পিটিআই নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অবস্থানে কোনো সামঞ্জস্য নেই। একদিন এক কথা বলা হয়, পরদিন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলা হয়। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও হয়তো না বুঝেই তার আবেগঘন মন্তব্যগুলো প্রচার করে দেন।
পিটিআই-এর কিছু জ্যেষ্ঠ নেতা এ পরিস্থিতিতে দলীয় সমন্বয় নিয়ে গোপনে আলোচনায় বসেন। অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, যখন দলের অভ্যন্তরেই মতৈক্য নেই, তখন আগামীর পথ কিভাবে নির্ধারিত হবে।
মজার ব্যাপার হলো, গত সপ্তাহেই ইমরান খান সরকারপক্ষের সঙ্গে সংলাপে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নতুন সংলাপ আহ্বানের প্রেক্ষিতে। কিন্তু বুধবারের বৈঠকে আবার তিনি বলেন, সেটা ‘একটি ভুল বোঝাবুঝি’ ছিল এবং তিনি কখনোই পিএমএলএন জোটের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেননি। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা সম্ভব হলেও সরকারের সঙ্গে নয়।
‘আমরা কী করব এ পরিস্থিতিতে?’—একজন অভ্যন্তরীণ নেতা হতাশ হয়ে বলেন। ‘আমাদের নেতা এক কথা বলেন, আবার বলেন সেটা তিনি বলেননি। আর তার পরিবারের বক্তব্যগুলো পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে।’
ইমরান খানের চলমান আইনি জটিলতা এবং রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। দল একটি ঐক্যমত তৈরি করতে পারবে কি না, বা আদৌ ইমরান খান সেটি হতে দেবেন কি না—এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
প্রলয়/তাসনিম তুবা