ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানির ঈদে উখিয়ায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিতরণ হচ্ছে কোরবানির মাংস

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ১০:২২:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • / ৬০ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বসবাসরত আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য কোরবানির মাংস বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ২৩টিরও বেশি দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবার কোরবানির পশু সরবরাহ করেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি)-এর তত্ত্বাবধানে এসব পশু জবাই করে আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে ঈদের দিন সকালে দেড় কেজি করে মাংস বিতরণ করা হবে।

আরআরআরসির কার্যালয় সূত্র জানায়, ৫ জুন বুধবার বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ১,৭০০টি গরু, ৩৫০টি ছাগল এবং অতিরিক্ত ৫০ হাজার কেজি গরু-মহিষের কোরবানির মাংস মজুত হয়েছে। ঈদের দিন (৭ জুন) সকাল থেকেই এসব পশু জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। এই বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে, ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) ও রোহিঙ্গা মাঝিদের মাধ্যমে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এনজিও বর্তমানে তহবিল সংকটে রয়েছে, যার ফলে অনেক সংস্থার পক্ষে কোরবানির পশু কিনে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যে ২৩টিরও বেশি সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তাদের মাধ্যমে আমরা উখিয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু ও মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছি।

অন্যদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার আশ্রয়শিবিরগুলো এবারও কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত থাকছে। এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গত বছরও আমরা কোরবানির মাংস পাইনি। এবারও সেই একই অবস্থা। এনজিওগুলো কেবল উখিয়ায় কোরবানি দিচ্ছে।

তবে কিছু রোহিঙ্গা পরিবার নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কোরবানি দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। বিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের পাঠানো অর্থে প্রায় ৩০-৩৫টি গরু-মহিষ কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েকটি পরিবার। শালবাগান আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত আবদুল জব্বার জানান, গত বছর প্রবাসী স্বজনদের পাঠানো টাকায় প্রায় ৭০টি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। এবারও অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় পাঁচ হাজার গরু-মহিষ কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পশুর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এবার সেই সংখ্যাও আরও কমে গেছে। এতে কোরবানির মাংস পাওয়া নিয়ে হতাশা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।

আরআরআরসি সূত্র জানায়, প্রতিটি আশ্রয়শিবিরে কোরবানির পশু জবাই, বর্জ্য অপসারণ ও চামড়া সংরক্ষণের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তত্ত্বাবধানে মাঝিদের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে মাংস বিতরণ ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া স্থানীয় এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল, এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

কোরবানির মাংস হয়তো স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ ফিরিয়ে দিতে পারবে না, তবে রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের দিনে একটুখানি হাসি এনে দিতে পারে—এই আশায় প্রবাসী আত্মীয়-স্বজন, এনজিও কর্মী ও প্রশাসন সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের কোরবানি এখন আর শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তার প্রতীক। তবে টেকনাফের শিবিরগুলো বারবার বঞ্চিত হওয়ায় সঠিক নীতিগত ও প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ই-পেপার

কোরবানির ঈদে উখিয়ায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিতরণ হচ্ছে কোরবানির মাংস

আপডেট সময় : ১০:২২:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বসবাসরত আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য কোরবানির মাংস বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ২৩টিরও বেশি দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবার কোরবানির পশু সরবরাহ করেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি)-এর তত্ত্বাবধানে এসব পশু জবাই করে আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে ঈদের দিন সকালে দেড় কেজি করে মাংস বিতরণ করা হবে।

আরআরআরসির কার্যালয় সূত্র জানায়, ৫ জুন বুধবার বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ১,৭০০টি গরু, ৩৫০টি ছাগল এবং অতিরিক্ত ৫০ হাজার কেজি গরু-মহিষের কোরবানির মাংস মজুত হয়েছে। ঈদের দিন (৭ জুন) সকাল থেকেই এসব পশু জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। এই বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে, ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) ও রোহিঙ্গা মাঝিদের মাধ্যমে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এনজিও বর্তমানে তহবিল সংকটে রয়েছে, যার ফলে অনেক সংস্থার পক্ষে কোরবানির পশু কিনে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যে ২৩টিরও বেশি সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তাদের মাধ্যমে আমরা উখিয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু ও মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছি।

অন্যদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার আশ্রয়শিবিরগুলো এবারও কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত থাকছে। এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গত বছরও আমরা কোরবানির মাংস পাইনি। এবারও সেই একই অবস্থা। এনজিওগুলো কেবল উখিয়ায় কোরবানি দিচ্ছে।

তবে কিছু রোহিঙ্গা পরিবার নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কোরবানি দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। বিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের পাঠানো অর্থে প্রায় ৩০-৩৫টি গরু-মহিষ কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েকটি পরিবার। শালবাগান আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত আবদুল জব্বার জানান, গত বছর প্রবাসী স্বজনদের পাঠানো টাকায় প্রায় ৭০টি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। এবারও অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় পাঁচ হাজার গরু-মহিষ কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পশুর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এবার সেই সংখ্যাও আরও কমে গেছে। এতে কোরবানির মাংস পাওয়া নিয়ে হতাশা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।

আরআরআরসি সূত্র জানায়, প্রতিটি আশ্রয়শিবিরে কোরবানির পশু জবাই, বর্জ্য অপসারণ ও চামড়া সংরক্ষণের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তত্ত্বাবধানে মাঝিদের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে মাংস বিতরণ ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া স্থানীয় এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল, এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

কোরবানির মাংস হয়তো স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ ফিরিয়ে দিতে পারবে না, তবে রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের দিনে একটুখানি হাসি এনে দিতে পারে—এই আশায় প্রবাসী আত্মীয়-স্বজন, এনজিও কর্মী ও প্রশাসন সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের কোরবানি এখন আর শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তার প্রতীক। তবে টেকনাফের শিবিরগুলো বারবার বঞ্চিত হওয়ায় সঠিক নীতিগত ও প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।