শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে নেমেছে পর্যটকদের ঢল

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে ফিরে

বিশ্ব নন্দিত পর্যটন নগরী সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এই মুহূর্তে হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত সৈকত। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার দিনের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির সুবাদে পর্যটকদের ঢল নেমেছে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল ও মোটেলে কোনো রুম খালি নেই বলে জানা গেছে। এই মৌসুমে পর্যটক আসার কারণে হোটেল মালিকেরা শতকোটি টাকার ব্যবসার আশা করছেন।

গত শুক্রবার থেকেই কক্সবাজারের সৈকত এবং তার আশপাশের স্থানগুলো পুরোদমে পর্যটকদের দখলে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরের হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলোর সব রুম পূর্ণ হয়ে গেছে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছু রুম খালি থাকতে পারে, তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় শতভাগ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এদিকে, হোটেল মালিকেরা আশা করছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে অন্তত ৭ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন। কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে আসছেন। আমাদের হোটেলগুলোর প্রায় সব রুমই বুক হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুম চাইলেও দিতে পারছি না।

এই সময়টিতে শহরের হোটেল মালিকেরা ব্যবসায়িক দিক থেকে বিশেষ সুবিধা লাভ করছেন এবং আগামী মাসগুলোর জন্যও তারা আশা করছেন সমান পরিমাণ ভিড় হবে। সী গাজীপুর রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার বলেন, গতকাল থেকে আমাদের রিসোর্টে কোনো রুম খালি নেই। এটা জানুয়ারি ১০ পর্যন্ত থাকবে বলে আমরা আশা করছি। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক শিমু শারমিন জানিয়েছেন, আমরা বন্ধুরা মিলে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছি। কিন্তু কোনো রুম বুকিং না দিয়ে এখানে আসা আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন কোথাও রুম পাচ্ছি না। কিছু কটেজের রুম খালি রয়েছে, তবে সেগুলো মানসম্মত নয় এবং দামও বেশি। পর্যটক আল মামুন বলেন, আমাদের সন্তানদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তাই পুরো পরিবার নিয়ে এই ভ্রমণটি করছি। সৈকতে এসে এত মানুষের ভিড় দেখে ভালো লাগছে। ১৪ ডিসেম্বর, শনিবার, সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে সৈকতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট—কলাতলী, সুগন্ধা এবং লাবনী—পুরোপুরি পর্যটকে ভরা। অন্যান্য পয়েন্টগুলোতে ভিড় ছিল না তেমন।

পর্যটকেরা সাগরে স্নান করছেন, ওয়াটার বাইক এবং বিচ বাইক চড়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। বালিয়াড়িতে ঘোড়া চড়ে ছবি তোলার পাশাপাশি পর্যটকেরা আনন্দ উপভোগ করছেন। কক্সবাজার পর্যটক সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসাইন জানান, কক্সবাজারে লাখো পর্যটক আসায় আমরা পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কোনো পর্যটক যদি হয়রানির শিকার হন, তবে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কক্সবাজার রিজিওনাল টুরিস্ট পুলিশ সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের টহল আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। পর্যটকদের যেকোনো সমস্যা হলে তা আমরা দ্রুত সমাধান করব। কক্সবাজারে এই মুহূর্তে পর্যটকদের আগমনে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি পর্যটকদেরও এই ভ্রমণ স্মরণীয় হয়ে উঠছে। আগামী সপ্তাহে আরো লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । দৈনিক প্রলয়