গাসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদের পাহাড়

- আপডেট সময় : ০৪:৫৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২৪৮ বার পড়া হয়েছে
আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর
বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন গাজীপুর মহানগরীর ৩৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলাল। তিনি তৎকালীন গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজি, কর ফাঁকিসহ ফৌজদারী বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সাবেক এই কাউন্সিলর ও তার পরিবার। সাবেক এই কাউন্সিলর দুলাল গাছার মরহুম মঙ্গল মিয়ার ছেলে। প্রায় ৩০ বছর আগে সাবেক এই কাউন্সিলর ও তার বড় ভাই বাচ্চু মিয়ার মহানগরীর গাছা থানার কুনিয়া তারগাছ এলাকায় মুদির দোকান ছিল।
গাজীপুর ২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলের অনুসারী হয়ে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে এখন পলাতক। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দুলালের হাতে ছিল ‘আলাদিনের চেরাগ’। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কয়েক শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক বনে যান দুলাল ও তার পরিবারের লোকজন। শুধু সম্পদই নয় ক্ষমতাও ছিল তার হাতের মুঠোও। যখন যাকে ইচ্ছে করেছেন হয়রানি-নির্যাতন। তার দাপটে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনসহ অন্য দলের অনেক নেতাকর্মীও কোণঠাসা ছিলেন। তার কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই রেহাই পেতেন না কেউই। দুলাল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শুল্ক কর ফাকি দেওয়ার অভিযোগ পুরনো। তবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি এনবিআর। অভিযোগ আছে, ভবন নির্মাণে অনিয়মের। দুলালের পুত্র সাব্বির আহমেদ রাজ।
গাজীপুর মহানগরীর ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ তাঁকে চেনে ‘রাজ’ নামে। বয়স ৩২। এ বয়সেই মাদক বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য, সন্ত্রাস, ডিশ-ইন্টারনেট বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সাব্বির বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতারও হয়েছিল। তাঁর রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও। আর তার বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন ও চাচাতো ভাই রিপন যুবলীগ নেতা হওয়ায় বেপরোয়া তাদের নিজস্ব বাহিনী। দুই ভাইয়ের নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। সাদ্দাম একটি সমিতি পরিচালনা করে। চড়া সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। সাবেক এই কাউন্সিলরের বড় ভাই বাচ্চু মিয়ার রয়েছে দুই ছেলে। বড় ছেলে রিপন, ছোট ছেলে বিপ্লব তাদেরও রয়েছে বিপুল অর্থ সম্পদ। সমিতি থেকে ঋণ দিয়ে জোর করে বাড়ী ঘর দখল করার অভিযোগ রয়েছে বিপ্লবের বিরুদ্ধে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গাছা থানার তারগাছ এলাকার ঢাকা ময়মনসিংহ গামী মহাসড়কের পাশেই সাবেক কাউন্সিলর ও তার ভাই বাচ্চুর ২ টি গার্মেন্টসসহ মার্কেট, তারগাছ চান্দরা রোডস্থ সুরুজ আলী মাদ্রাসার পাশে দুলালের ছেলে সাদ্দাম ও সাব্বিরের ৭ তলা বিশিষ্ট ২ টি, ৫ তলা বিশিষ্ট ২ টি, ৬ তলা বিশিষ্ট ১টি ভবন, তারগাছ চান্দরা রোড থেকে সোনা বাড়ীর রোডে ৪ টি ভবন, ২ ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে।
কুনিয়া পাছর ইসলাম মার্কেটে সাদ্দামের ৫ তলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে। চান্দরা সখিনগর এলাকায় দুলালের অনেক জায়গা সম্পত্তি রয়েছে। দুলালের ভাই বাচ্চুসহ তার ছেলে রিপন ও বিপ্লবেরও অনেকগুলো ভবন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারগাছ এলাকার এক ব্যক্তি জানান, সাবেক এই কাউন্সিলরের ভাইয়ের ছেলে বিপ্লবের নিকট থেকে অনুমান ২ বছর আগে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা পরিশোধ করিলেও জোর করে উনার বাড়ীঘর লিখে নিয়েছেন। সাবেক এই কাউন্সিলরের ছেলে, ভাতিজা ও তাদের ক্যাডার বাহিনী এলাকায় মাদক ব্যবসা থেকে শুরু সকল অপরাধের সাথে জড়িত। এরা এলাকার আতংক।
কেউ বাড়ীঘর নির্মাণ করলে তাদের কাছ থেকে চড়া দামে ইট, বালি, সিমেন্ট কিনতে হয়। তাদের অনুমতি ছাড়া এলাকায় কেউ বাড়ীঘর নির্মাণ করতে পারেনা। এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগসহ সকল কিছু ৫ আগস্টের পূর্বে তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এবিষয়ে জানতে সাইফুল ইসলাম দুলাল ও তার ছেলে সাদ্দামের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও উনারা ফোন রিসিভ করে নি। এবিষয়ে গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী মোহাম্মদ রাশেদ জানান, সাবেক কাউন্সিলর দুলাল ও তার বড় ছেলে সাদ্দাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের ঘটনায় রুজু হওয়া মামলায় এজাহার নামীয় আসামী। তাদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।