বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে
ফরিদপুরের ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং অফিস সহকারী নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা, এবং লাখ লাখ টাকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এতে অনেক যোগ্য প্রার্থী চাকুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে প্রার্থীদের মাঝে।
এ সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ জেলা প্রশাসক, মাউশির ডিজি ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে অদৃশ্য কারণে এর কোনো সুরাহা মিলেনি আজও। চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, ফরিদপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি শওকত আলী জাহিদ, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নেন।
অভিযোগ আছে তিনি নিয়মবহির্ভূত ভাবে পরপর তিন মেয়াদে টানা ৬ বছর স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৫ শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ উল্লেখ্য করেন সভাপতির দায়িত্বের ৬ বছরে শিক্ষক কর্মচারীরাও নিয়মিত বেতনও পাননি। এ বিষয়ে, স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন, এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ১৩ জুন। তবে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন আহমেদ নামের এক প্রার্থী বলেন, সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাইনি। অন্যদিকে, স্কুলটির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবং স্কুলের বিশাল একটি ভবন যতসামান্য মুল্যে বিক্রি করেও লাখ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগ উঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি শওকত আলী জাহিদের বিরুদ্ধে স্কুলটির কয়েকজন শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিধিবহির্ভূতভাবে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বহাল তবিয়তে থাকেন। এরপর শুরু করেন নিয়োগ বাণিজ্য আর স্বেচ্ছাচারিতা। করেন ক্ষমতার অপব্যবহার। ঐ সময় লাখ লাখ টাকা নিয়োগ প্রার্থীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেন। তবে, সভাপতি প্রভাবশালী হওয়ায় টু শব্দ করতে পারেনি কেউ। এই বিষয়ে, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শওকত আলী জাহিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তার মোবাইলফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়, কথা হয় ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাবেক, অমিত দেবনাথের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোন অভিযোগই সঠিক নয়। এসব মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিওিহীন কথা। এব্যাপারে, সে সময়ের ডিজির প্রতিনিধি ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাসিমা বেগম বলেন, ‘অনেক সময় সব জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় না। আগে জেলা প্রশাসকের কোন প্রতিনিধি নিয়োগ কমিটির সদস্য ছিলেন না। জেলা প্রশাসন এবং আ’লীগ নেতা ছিলেন স্কুলের সভাপতি। এটা যেমন একটা প্রতিবন্ধকতা এবং ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারী বছরই, এই সর্ব প্রথম শিক্ষক নিয়োগে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি নিয়োগ বোর্ডে যোগ হয়েছেন। তাই কিছুটা এলোমেলো হয়েছে।’
এই বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল আহসান মোল্যা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আর ওই নিয়োগ চলাকালীন অবস্থায় আমি এই জেলার দায়িত্বে ছিলাম না। তবে কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে একটি বিষয় একবার হাতছাড়া হলে সেটা ফিরে আনা কঠিন। ৫ আগষ্টের আগে বহু অনিয়ম হয়েছে। এটা শুধু ফরিদপুরেই নয়। এটা সারাদেশে অনিয়মের একটি অংশ।