ঢাকা ০৯:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নোটিশ বন্যায় ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত, বিপাকে কৃষক দূর্গাপুরে বন্যার পানিতে ডুবলো কৃষকের স্বপ্নের পান বরজ সীমান্তে বিজিবির অভিযানে মিয়ানমারের নাগরিকসহ আটক ২ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ২৭৬৩৭ জন নিয়োগ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এখন সিলেটের জেলা প্রশাসক চিকিৎসকদের দোষারোপ করে লাভ নেই, সচেতন হতে হবে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ: ইসি সচিব ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক ধর্মকে ব্যবসার হাতিয়ার বানাচ্ছে একটি মহল: রুমিন ফারহানা

ডেভেলপার কোম্পানির প্রতারণায় বাড়ির মালিক হয়েও ভাড়া বাসায় নাহারের মানবেতর জীবনযাপন

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৪২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৬৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকার বাসিন্দা মোছাম্মৎ জীবন নাহার নিজের জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য ২০২১ সালে এইচ টু বিল্ডার্স এন্ড কন্সট্রাকশন নামের ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২৭ মাসের মধ্যে তাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তিনি তার ফ্ল্যাট পাননি। বরং, প্রতারণার শিকার হয়ে নিজের জমির মালিক হয়েও ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রতারণা-

জীবন নাহারের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ভাড়ার খরচ বহন করার কথা ছিল ডেভেলপার কোম্পানির। কিন্তু গত ১৩ মাস ধরে কোম্পানিটি কোনো ভাড়া দিচ্ছে না। ফলে, বাড়ির মালিক হয়েও তিনি এখন ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এবং প্রতিমাসে ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এছাড়া, সাইনিং মানির ৭ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছে কোম্পানি। দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পরিশোধ করেনি। অন্যদিকে, চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি বিল বহনের কথা থাকলেও ডেভেলপার কোম্পানি তা করছে না, বরং সব দায়ভার বাড়ির মালিকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

নকশা লঙ্ঘন ও বেআইনি নির্মাণ-

জীবন নাহার আরও অভিযোগ করেন, রাজউকের অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে ভবনের নিচতলায় বেআইনিভাবে একটি কক্ষ নির্মাণ করেছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি। এতে ভবিষ্যতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অথচ, তিনি বা অন্য কোনো বাসিন্দা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

ডেভেলপার কোম্পানির অস্বীকার-

এ ব্যাপারে এইচ টু বিল্ডার্স এন্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করে, এসব বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। তাদের বক্তব্য, ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি, তবে চেষ্টা চলছে।

তবে জীবন নাহার বলছেন, এভাবে বছরের পর বছর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির দায়িত্ব ছিল সবকিছু যথাসময়ে বুঝিয়ে দেওয়া, কিন্তু তারা তা করেনি। বরং প্রতারণার মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের দুর্ভোগে ফেলছে।

আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত-

এখন ন্যায়বিচারের আশায় জীবন নাহার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, আইনি লড়াই দীর্ঘসূত্রতার শিকার হলে তার ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সমাধান-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ডেভেলপার কোম্পানির প্রতারণা দিন দিন বাড়ছে। অনেক ডেভেলপার চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর দীর্ঘায়িত করছে, নকশা পরিবর্তন করছে, এবং বাড়ির মালিকদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলছে।

তারা মনে করেন, সরকারি পর্যায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং না হলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে প্রতারিত হবেন এবং নিজের সম্পত্তির মালিক হয়েও অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন।

আইনজীবীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বাড়ির মালিকদের উচিত ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা, প্রতিটি শর্ত স্পষ্টভাবে বোঝা, এবং প্রয়োজনে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া। এছাড়া, চুক্তি লঙ্ঘনের শিকার হলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে প্রতারক কোম্পানিগুলো দায় এড়াতে না পারে।

জীবন নাহারের মতো অসংখ্য মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ডেভেলপার কোম্পানির প্রতারণায় বাড়ির মালিক হয়েও ভাড়া বাসায় নাহারের মানবেতর জীবনযাপন

আপডেট সময় : ০৮:৪২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকার বাসিন্দা মোছাম্মৎ জীবন নাহার নিজের জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য ২০২১ সালে এইচ টু বিল্ডার্স এন্ড কন্সট্রাকশন নামের ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২৭ মাসের মধ্যে তাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তিনি তার ফ্ল্যাট পাননি। বরং, প্রতারণার শিকার হয়ে নিজের জমির মালিক হয়েও ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রতারণা-

জীবন নাহারের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ভাড়ার খরচ বহন করার কথা ছিল ডেভেলপার কোম্পানির। কিন্তু গত ১৩ মাস ধরে কোম্পানিটি কোনো ভাড়া দিচ্ছে না। ফলে, বাড়ির মালিক হয়েও তিনি এখন ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এবং প্রতিমাসে ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এছাড়া, সাইনিং মানির ৭ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছে কোম্পানি। দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পরিশোধ করেনি। অন্যদিকে, চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি বিল বহনের কথা থাকলেও ডেভেলপার কোম্পানি তা করছে না, বরং সব দায়ভার বাড়ির মালিকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

নকশা লঙ্ঘন ও বেআইনি নির্মাণ-

জীবন নাহার আরও অভিযোগ করেন, রাজউকের অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে ভবনের নিচতলায় বেআইনিভাবে একটি কক্ষ নির্মাণ করেছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি। এতে ভবিষ্যতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অথচ, তিনি বা অন্য কোনো বাসিন্দা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

ডেভেলপার কোম্পানির অস্বীকার-

এ ব্যাপারে এইচ টু বিল্ডার্স এন্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করে, এসব বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। তাদের বক্তব্য, ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি, তবে চেষ্টা চলছে।

তবে জীবন নাহার বলছেন, এভাবে বছরের পর বছর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির দায়িত্ব ছিল সবকিছু যথাসময়ে বুঝিয়ে দেওয়া, কিন্তু তারা তা করেনি। বরং প্রতারণার মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের দুর্ভোগে ফেলছে।

আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত-

এখন ন্যায়বিচারের আশায় জীবন নাহার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, আইনি লড়াই দীর্ঘসূত্রতার শিকার হলে তার ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সমাধান-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ডেভেলপার কোম্পানির প্রতারণা দিন দিন বাড়ছে। অনেক ডেভেলপার চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর দীর্ঘায়িত করছে, নকশা পরিবর্তন করছে, এবং বাড়ির মালিকদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলছে।

তারা মনে করেন, সরকারি পর্যায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং না হলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে প্রতারিত হবেন এবং নিজের সম্পত্তির মালিক হয়েও অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন।

আইনজীবীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বাড়ির মালিকদের উচিত ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা, প্রতিটি শর্ত স্পষ্টভাবে বোঝা, এবং প্রয়োজনে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া। এছাড়া, চুক্তি লঙ্ঘনের শিকার হলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে প্রতারক কোম্পানিগুলো দায় এড়াতে না পারে।

জীবন নাহারের মতো অসংখ্য মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।